ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশামআজাদ এহতেশাম

অনীক মাহমুদ ছড়া সংগ্রহ প্রসঙ্গ ও প্রকরণ

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৭

অনীক মাহমুদ ছড়া সংগ্রহ প্রসঙ্গ ও প্রকরণ

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অনীক মাহমুদ একজন অত্যুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যের সকল শাখায় তার স্বাচ্ছন্দ্য ও সফল বিচরণ পরিলক্ষিত হলেও ছড়া রচনায়ও তিনি সিদ্ধহস্ত। তার বিশাল সাহিত্যকর্মের বিবেচনায় সংখ্যা বিচারে ‘ছড়া’ গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র ছয়টি। তার রচিত ‘ভরদুপুরে আমার মাকে (১৯৯৭)’, ‘দুলকি ঘোড়া চাবুক কড়া (১৯৯৭)’, ‘শেয়াল মামার খেয়াল (২০০৬)’, ‘নানুর বাড়ি কানুপুর (২০০৯)’, ‘আকাশ-গাঙে তারার ভেলা (২০১৫)’, ‘জন্মভূমি জননী তুমি (২০১৫)’ প্রভৃতি। তার কাব্যের বিষয় বৈচিত্র্যের মতোই ছড়ার বিষয়ও বিচিত্র। সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের ইতিহাস-ঐতিহ্য, অসঙ্গতি, কায়েমী স্বার্থবাদী ষড়যন্ত্র, স্বৈরাচারের উদ্ভব, রাজাকারের আস্ফালন, মোসাহেবি, ফতোয়াবাজি, সন্ত্রাস, ব্রাতজনের শোষণ-বঞ্চনা, ধর্মীয় গোড়ামি ও ভ-ামি, সাম্য ও মৈত্রীর আহ্বান, দেশমাতৃকার সৌন্দর্য ও প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর ছড়া রচনার উপজীব্য হয়েছে। বিজ্ঞানমনস্কতার আলোকে রচিত সৌরগজতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে রচিত ছড়া বিজ্ঞান বিষয়ে তার অপার শক্তিমত্তার পরিচয়ই পরিস্ফুট করে। তার মননে ও মানসে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও দেশ এবং তিনি যে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ছড়া গ্রন্থ ‘আকাশ গাঙে তারার ভেলা’ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার সংবেদনশীল কবিচিত্তের প্রাখর্যে ছড়া রচনার বিচিত্র বিষয় ও বৈভবের যে মেলবন্ধন তা আর কোন ছড়াকারের ছড়ায় পরিলক্ষিত হয় না। ছড়ার ছন্দ বিষয়ে তিনি সব সময়ই সচেতনতার স্বাক্ষর রেখেছেন। সহজ সরল ভাষার সঙ্গে নির্ভেজাল রস ও ছন্দের ব্যবহারে তার ছড়াগুলো হয়ে উঠেছে সরস, প্রাণবন্ত এবং শিশু কৌতূহলোদ্দীপক। পয়ার, স্বরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত ছন্দের নিপুণ ব্যবহার তার ছড়ায় লক্ষণীয়। ছন্দ ব্যবহারে তিনি এতই সচেতন যে পাঠকালে কোন ছড়ায় ছন্দ পতনের ধ্বনি কানে বাজে না। অনীক মাহমুদের ছড়ার স্বাতন্ত্র্যতা ও প্রাতিস্বিকতা এখানেই। বাঙালীর নতুন আত্মপরিচয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই অর্জিত হয় একটি স্বাধীন দেশ, একটি নতুন মানচিত্র। তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের ঋণে কেনা এ দেশ। নয় মাসে পাকহানাদারদের অসুর নৃত্যে ল-ভ- এ দেশ। চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, বিধ্বস্ত ও আধপোড়া শহর নগর গ্রামকে গ্রাম। রক্তে কেনা এ দেশকে সবাই সম্মিলিতভাবে গড়তে হবে। কোন প্রকার দুঃশাসন ও শোষণ বঞ্চনা চলতে দেয়া যায় না। প্রিয় মাতৃভূমিকে কবির নতুন করে গড়ে তোলার আহ্বান। তিরিশ লাখের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত, দুঃশাসন আর শোষণ এখন হতেই হবে বর্জিত। হবে না আর কুটিল শাসন পশুর মতোন মানুষ নাশন দেশ গড়ারই কাজে সবার কণ্ঠ হবে গর্জিত। (‘শপথ’ ‘ভরদুপুরে আমার মাকে’) কবির প্রত্যক্ষ অনুভবে মূর্ত হয়ে উঠেছে সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও ক্লেশ। তাদের শোষিত, বঞ্চিত ও ক্লেদাক্ত জীবন কবিচিত্তের অনুভবে ধরা দিয়েছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। তারা অন্যের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে নিজেকে তিল তিল করে নিঃশেষ করে দেয়। উচ্চবিত্তের মানুষ কখনও স্বীকার করে না তাদের বিলাসিতার যোগানে এদের অবদান কতটুকু। কবির অনুভবে তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। ‘ছত্রিশ বছর ধরে এই সে হকার, রোদে জলে ভিজে পুড়ে করে উপকার। কিন্তু সে নিজ ভাল কী করেছে হায়! তামাটে দেহটা ছাড়া আর কিছু নাই।’ (‘হকার’ ‘ভরদুপুরে আমার মাকে’) মানবজীবনে মা মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা এই তিনটি অভিন্ন সত্তা। প্রাণের অস্তিত্বের অনুরণন এ তিনটি সত্তাকে নিয়েই। যে কোন একটির অভাবেই মানুষের অস্তিত্ব বিপন্নের শামিল। বাঙালীর জাতশত্রু স্বৈরাচারী পাকিস্তানী সরকার বাঙালীর মাতৃভাষা বাংলাকে মুছে ফেলার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল কিন্তু মাতৃঅপমানে এ দেশের বীর সন্তানেরা জীবন দিয়ে সে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিল। ‘মায়ের ভাষা পথ পেরুলো অনেক বুকের খুনে ছাত্র যুবক হলো চটা বন্ধ হলো পলাশ ফোটা বায়ান্নর ফালগুনে।’ (‘জীবন জাগার মন্ত্র’ ‘ভরদুপুরে আমার মাকে’) কবি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে জীবন জাগার মূলমন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তার কারণ বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বোপরি একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধ সকল আন্দোলনের বীজমন্ত্রই ছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। দ্রুত নগরায়নের ফলে গ্রামীণ প্রকৃতি আজ ধ্বংসের মুখে। নির্বিচারে চলছে বৃক্ষ নিধন। এ কারণে বাড়ছে উষ্ণতা। বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈরী প্রকৃতির বিরূপ ভয়াবহতা। নদী খাল বিল শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। নগর জীবনের বিত্ত বৈভবের বিভিন্ন উপাদানের যোগান দিতে গ্রামীণ প্রকৃতি আর পূর্বের মতো নেই। ঋতুবৈচিত্র্যেও এসেছে পরিবর্তন। ষড়ঋতুর দেশ এখন কেবলই কল্পনা মাত্র। গাঁয়ে এখন হানাহানি রঙিলা দালান আর বসে না আলকাপ আর কবিয়ালের গান। পল্লীকবির গাছের ছায়া ইটের ভাটায় শেষ ব্যাঙের ডাকে আর জমে না আষাঢ়ে আবেশ। (‘এই ভাদরে’ ‘ভরদুপুরে আমার মাকে’) মার্কসীয় দৃষ্টিতে ধনবাদী শাসন ব্যবস্থা হধশবফ ংযধসবষবংং, ফরৎবপঃ, নৎঁঃধষ, বীঢ়ষড়রঃধঃরড়হ’ এ কারণে এ শাসন ব্যবস্থায় ধনীরা শনৈঃ শনৈঃ আরও ধনিক শ্রেণীতে পরিণত হয় পক্ষান্তরে শ্রমিক ও নিম্নবিত্তের মানুষ আর দিন দিন নিঃস্ব হতে থাকে। কঠোর পরিশ্রম করে রক্ত জল করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। দেহের ক্লান্তি, পেটে ক্ষুধার আগুন তাদের সব সময়ই ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। তাদের প্রতি কবির সহানুভূতিশীল উচ্চারণÑ কিষান বধূ কাজ করে যায় পরনে তার ছেঁড়া শাড়ি ধানের মাড়াই ধানের ঝাড়াই করেও যে তার শিকেয় হাঁড়ি। তামাটে তার দেহখানা চোখ দু’খানা ছলো ছলো, চাষির মতোই খাটুনি তার ভেজায় পোড়ায় আগুন জলও। (‘ধানের দেশে প্রাণের চাষি’ ‘ভরদুপুরে আমার মাকে’) পৃথিবীতে অপার শান্তির প্রতিচ্ছবি একমাত্র মা। মায়ের সান্নিধ্য সুখই সন্তানের বেঁচে থাকার অবলম্বন। মা-ই পারে পৃথিবীর সর্বস্ব ত্যাগ করে সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে। এমনকি মা সন্তানের সুখের জন্য নিজের জীবনও অকাতরে বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠিত হয় না। কিন্তু প্রকৃতির ধারাবাহিকতায় মা কারোরই চিরদিন বেঁচে থাকে না। তখনই তার শূন্যতা নিজের ভেতরে তোলপাড় করে। তাঁর স্নেহ ভালবাসা বঞ্চিত শূন্য হৃদয়ে কেবলই দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়। ‘বাড়ি থেকে আসার সময় প্রতিবারই দেখি, আঁচল টেনে লুকাতো মা নিজের অশ্রু আঁখি। সেই বাড়িতে এখন যাই, এখনো হয় আগের মতোই ঢোকা, স্নেহের সুরে বলে না কেউ, ‘কখন এলি খোকা’? (‘মায়ের স্মৃতি’ ‘ভরদুপুরে আমার মাকে’) কবি হৃদয়ের শূন্যতায় মায়ের স্মৃতি রোমন্থন, তাঁর সাথে সদ্ব্যবহার, তার প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ভক্তি ও ভালবাসার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় ‘ভরদুপুরে আমার মাকে’, ‘মায়ের মতোন’ কবিতায়। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় সাধারণ জনগণ চিরকালই উপেক্ষিত। গদি রক্ষার ষড়যন্ত্রে চলে জনগণের ওপর নির্বিচারে দমন-পীড়ন নীতি। কূটকৌশলে খুন হত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে তখন তারা দ্বিধা করে না। যে কোন ভাবেই আঁকড়ে ধরে রাখে ক্ষমতার দাপট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর শেষ রক্ষা হয় না; বিক্ষুব্ধ জনতার আন্দোলন সংগ্রামে একদিন না একদিন স্বৈরাচারের মসনদ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ‘তন্ত্র গেল ফুসমন্ত্রে অন্ত্রে পীড়া ষড়যন্ত্রে গণের দিকে নাইকো মন, গদি রক্ষাই মরণ পণ হেই সামালো বাঙাল ভাই, ওইখানে আর খাওয়া নাই। (‘বৈরাচারী স্বৈরাচার’ ‘দুলকি ঘোড়া চাবুক কড়া’) পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার পালাবদলে রাষ্ট্রক্ষমতায় রাজা যায় রাজা আসে কিন্তু সাধারণ মানুষের কোন ভাগ্যের উন্নয়ন হয় না। সাধারণ মানুষ কেবলই শোষিত-বঞ্চিত হতে থাকে। তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া সরকারে কান অবধি পৌঁছায় না। আবার তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে চলে গুলি, হত্যা, নির্যাতন। সর্বত্র চলে বিশৃঙ্খল। দেখার যেন কেউ নেই। ‘দাবি পেশ করে জিদ ধরেছিল রাজ অনুচর আনসারে থ্রি-নট থ্রিতে মান ধুয়ে দিলো পুরলো না মনোবাঞ্ছারে। এইভাবে আছি রামের রাজ্যে যমের অরুচি বুনিয়া, গুণে আর খুনে মিলে না হিসাব রাতদিন মান শুনিয়া।’ (‘হালচাল’, ‘দুলকি ঘোড়া চাবুক কড়া’) ঋতু পরিবর্তনের চক্রে প্রকৃতিতে এক সময় শীতের আবির্ভাব ঘটে। মাঘ-পৌষের কনকনে শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে সারা দিনমান। অতিরিক্ত শীতে প্রাত্যহিক কাজকর্মে আসে শিথিলতা। জনজীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। তীব্র হিমশীতে মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না- তবু এ সময়ে প্রকৃতি মানুষের জীবনে কিছু ভাল উপহার নিয়েও আবির্ভূত হয়ে থাকে। ‘তবু কেন ভালো লাগে শীতের পরশ, শীতপিঠা ভালো আর খেজুর রস। বিহানের কাঁচারোদ মুঠি মুঠি আলো, শীতের বিকেল কিন্তু আরো লাগে ভালো।’ (‘শীত’, ‘শেয়াল মামার খেয়াল’) নিদাঘ দগ্ধ প্রকৃতির রুক্ষতা বর্ষার বারি বর্ষণে আবার সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক নয়ন-লোভন অনুপম শ্যামশ্রী। ধূলি ধূসর প্রকৃতি এ সময়ে ধারণ করে লাবণ্যের সুস্নিগ্ধ মায়াজাল। বর্ষার শীতল জলধারায় রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে নিসর্গ প্রকৃতি। এ সময়ে মানুষের মনেও পুলক শিহরণ জাগে; স্বপ্নের ইচ্ছেগুলো পাখা মেলে উড়ে যেতে চায় দূর গগনে। “কেয়া-কদম-সোঁদালিয়া জুই-কামিনীর ঘ্রাণে, অথই সুখের ঢেউ খেলে যায় আবেগ ভরা প্রাণে। বর্ষা এলো তাই যে নাচে ময়ূর পেখম মেলে, নয়া চাষির সবুজ ক্ষেতে কাঁচা সোনা ফলে। খেতের ফসল, বন-বনানী,পাখ-পাখালির গানে, সর্বখানেতে বর্ষা এলো সুখের ঐক্যতানে।’ (‘বর্ষা এলো’, ‘শেয়াল মামার খেয়াল’) ‘শেয়াল মামার খেয়াল’ (২০০৬) কাব্যে পশুপাখি বিষয়ক কবিতা রয়েছে। যেমন : ‘শেয়াল মামার খেয়াল’, ‘বাঘটা’, ‘কানাবগী’, ‘কুটুমপাখি’, ‘ব্যাঙ’, ‘জোঁক’ ইত্যাদি কবিতায় ছন্দের ঝঙ্কার সুরধ্বনির সাথে রসের সংমিশ্রণে শিশু আনন্দের উপযোগী ছড়া হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া ‘বিয়ের আমোদ’, ‘ধুমসে দাদু’, ‘দাদু’, ‘পেটুক মামা’, ‘খোকন সোনা’, ‘খুশি’, ‘খুকুমণি’, ‘আপুমণি’, ‘ঈদের ছড়া’, ‘পণ’, ‘অভিনয়’, ‘স্বভাব’, ‘ক্যাকড়া মশায়’, ‘ভজহরি’, ‘রিংবাহাদুর’, ‘মিড়িং খাঁ’, ‘ডাইনি বুড়ির চোখ’, ছড়ায় তাঁর দক্ষতার পরিচয় মেলে। সমাজের নষ্ট রাজনীতির প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ। নিত্য কর্মের বিপরীতে ক্রমশ বাড়ছে তার উচ্ছৃঙ্খলতা ও কর্মবিমুখতা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং চায়ের দোকানে তাদের সরব উপস্থিতি সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি। এই শ্রেণীর অর্কমণ্য বাউন্ডুলে কুচরিত্রের মানুষেরাই এ দেশের নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব করে এবং শোষতক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী হয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ‘গোলেমালে যায়রে যতো দিন, দিনে দিনে বাড়ে অশেষ ঋণ। কাজে কামে মস্ত আদিখ্যেতা, নির্বাচনে কষ্ট হয় না জেতা।’ (‘আদিখ্যেতা’ ‘নানুর বাড়ি কানুপুরে’) ‘আকাশ-গাঙে তারার ভেলা’ (২০১৫) কাব্যে অনীক মাহমুদের বিজ্ঞান মনস্কতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ গ্রন্থটি বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। বিজ্ঞান বিষয়ক গোটা ছড়া গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে বিরল। এ গ্রন্থের চল্লিশটি কবিতাই বিজ্ঞানভিত্তিক। বিজ্ঞান চিরকালই কৌতূহল এবং রহস্যের আধার। শিশু মনে বিজ্ঞানের আগ্রহ সৃষ্টি করে বিজ্ঞানে জটিল রহস্য উদ্ঘাটনে তাদের মনোযোগী করে তুলতে চেয়েছেন। জীবজন্তু, পশুপাখি ভূত-প্রেত ইত্যাদি ছেড়ে কবি সহজ-সরল ভাষায় শিশুদের হাস্যরসের উপযোগী করে সৌরজগত ও মহাকাশের বিচিত্র বিষয় নিয়ে ছড়া রচনার প্রয়াস পেয়েছেন। ‘সেই চাঁদেতে মানুষ গেল হাঁটলো বুকে তার, নভোচারী তিনজনেতে অনন্দ অপার। আর্মস্ট্রং অলড্রিন আর কলিনস তাদের নাম, ঊনসত্তর জুলাই মাস সেই যে সাল তামাম।’ (‘চাঁদের বুড়ি’ ‘আকাশ গাঙে তারার ভেলা’) মহাকাশের এক মহাবিস্ময় সৌরগজত। চির রহস্য ও সন্দিগ্ধ সৌরজগতের অজানা বিষয় শিশুদের জানার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন কবি। তার এ গ্রন্থের ছড়াগুলোর মধ্যে ‘পৃথিবী’, মঙ্গলগ্রহ’, ‘বুধের বাড়ি’, ‘বৃহস্পতি সংবাদ’, ‘ইউরেনাস’, ‘নেপচুন’, ‘প্লুটো’ ইত্যাদি সৌরজগতকে নিয়ে রচিত ছড়া। ‘তেরশ সতের গুণ এই পৃথিবীর বড়, তের চাঁদের মানিক সে যে অন্তরে কী দৃঢ়। সূর্যপাকে বার বছর ঘুরতে লাগে তার, নিজের কক্ষপথে কেবল দশ ঘণ্টা ভার। (‘বৃহস্পতি সংবাদ’ ‘আকাশ গাঙে তারার ভেলা’) এ ছাড়া আরও মহাকাশ কেন্দ্রিক ছড়াগুলো হলো : ‘রাহু’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘অরুন্ধতী’, ধ্রুবতারা’, ‘সপ্তর্ষি’, ‘কালপুরুষ’, ‘নীহারিকা’, ‘ধূমকেতু’, ‘ছায়াপথ’, ‘উল্কা’, ‘চলন্ত সসার’ প্রভৃতি। আধুনিক সভ্যতা বিনির্মাণে বিজ্ঞানীদের অবদান অনস্বীকার্য। শনৈঃ শনৈঃ পৃথিবীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির পেছনে যাদের অবদান তাদের সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ‘আকাশ-গাঙে তারার ভেলা’ ছড়া গ্রন্থ ছড়াগুলের মাধ্যমে। সংক্ষিপ্ত অবয়বে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের ছড়ায় ফ্রেমে আবদ্ধ করেছেন। ‘টলেমি, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, আইজাক নিউটন, এডুইন হাবল, আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং প্রমূখ ব্যক্তিকে নিয়ে রচিত ছড়া উল্লেখযোগ্য। ‘ভর এবং আলোর গতি মিলেই শক্তিধর, ঊ=স২ তাঁর তত্ত্বের ঘর। এই তত্ত্বেই পরমাণু এই তত্ত্বেই জয়, (‘আইনস্টাইন’ ‘আকাশ গাঙে তারার ভেলা’)
×