ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আবেদীন জনী

প্রজাপতির ইশকুল

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

প্রজাপতির ইশকুল

অরণি যে পথে ইশকুলে যায়, সেই পথের পাশেই একটি বকুল ফুলের গাছ। গাছটিতে অজস্র প্রজাপতির ভিড়। শাখায় শাখায় পাতায় পাতায় প্রজাপতি। উড়ছে ঘুরছে বকুলগাছটির চারপাশে। রূপ ঝলমল ডানা মেলে ওই গাছটির দিকে উড়ে আসছে আরও অসংখ্য প্রজাপতি। এতগুলো প্রজাপতি একসঙ্গে দেখে ভীষণ অবাক হয় অরণি। কী সুন্দর দৃশ্য! যেন বকুল ফুলের গাছে ফুটে আছে রঙ্গিন রঙ্গিন প্রজাপতি ফুল। ইশকুলে যাওয়া-আসার সময় বকুলগাছটির কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে অরণি। প্রজাপতিদের ওড়াউড়ি দেখে খুব মজা পায়। মনটা ভাল হয়ে যায়। কখনওবা দু’হাত মেলে দেয় প্রজাপতিদের দিকে। উড়ে এসে অরণির হাতের তালুতে বসে ওরা কয়েকটা। মাথার চুলে বসে। কাঁধেও বসে। শরীরের এখানে ওখানে কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার উড়ে যায়। ও তখন ভাবে, প্রজাপতিরা ওর বন্ধু হয়ে গেছে। চলে আসার সময় বলে, ভাল থেকো বন্ধুরা। ভাল থেকো। একটি বিষয় অরণির মাথায় ধরে না। প্রজাপতিরা শুধু ওই বকুলগাছে এসে জড়ো হয় কেন? ওখানে তো আরও অনেক গাছ। অনেক রকমের গাছ। ও ভাবে, হয়ত ওই বকুল ফুলের গাছটা ওদের খুব পছন্দ। কিন্তু এখানেই রহস্যের শেষ নয়। আরও একটা ব্যাপার আছে। ইশকুলে যাওয়ার সময় অরণি দেখতে পায়, চারদিক থেকে প্রজাপতিগুলো উড়ে এসে বকুলগাছে জড়ো হচ্ছে। আবার ইশকুল থেকে ফেরার সময় বিকেলবেলা দেখতে পায়, গাছটি থেকে উড়ে চলে যাচ্ছে প্রজাপতিরা। কারণ কী? একদিন অরণি ওর মাকে জিজ্ঞাসা করে, বলো তো মা, পথের পাশে বকুলগাছে প্রজাপতিরা ভিড় করে কেন? মা বলেন, হয়ত ওখানে প্রজাপতিদের মেলা বসে। আমাদের যেমন আছে বোশেখমেলা, বিজয়মেলা, বইমেলা। প্রজাপতিদেরও আনন্দমেলা থাকতে পারে। অরণি বলে, মেলা তো প্রতিদিন হয় না মা। ওরা তো প্রতিদিন আসে। মা বলেন, এটাও তো ভাববার বিষয়। মেলা তো প্রতিদিন বসে না। তাহলে নিশ্চয়ই প্রজাপতিরা খেলতে আসে। তোমরা যেমন মাঠে গোল্লাছুট, কানামাছি আরো কত কী খেলতে যাও। এ যুক্তিটাও ঠিক মনে হয় না ওর। বলে, আমরা বিকেলে খেলতে যাই। সকালে তো যাই ইশকুলে। কিন্তু প্রজাপতিগুলো সকাল হলে বকুলগাছে আসে। আবার দুপুরের পরই চলে যায়। মা কিছুক্ষণ ভাবেন। তারপর বলেন, বিষয়টি তাহলে এই রকম- তোমাদের যখন ইশকুলের বেলা হতে থাকে, তখন প্রজাপতি খোকাখুকিরা ঝাঁকে ঝাঁকে বকুলগাছে আসতে থাকে। আবার তোমাদের যখন ইশকুল ছুটি হয়, তখন প্রজাপতিরাও বকুলগাছ থেকে উড়ে উড়ে চলে যেতে থাকে। মাঝখানের সময়টুকু কাটায় বকুলগাছে। তাই তো? মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে অরণি। -এখন বুঝতে পেরেছি। ওটা প্রজাপতিদের মেলা নয়। হাট-বাজারও নয়। ওরা শুধু খেলতেও আসে না। -তাহলে কেন আসে? -প্রজাপতিরা পড়তে আসে। বকুলগাছটি হচ্ছে প্রজাপতিদের ইশকুল। তাই বুঝি? দারুণ মজার ব্যাপার তো! ইশকুলে যায় মানুষ, খোকাখুকিরা। প্রজাপতিরাও যায় নাকি? বড্ড অবাক হয় অরণি। মা বলেন, যেতেই পারে। ওদেরও তো অনেককিছু শিখতে হয়। জানতে হয়। কেমন করে উড়বে। সাজগোজ করবে। কিভাবে খাবার সংগ্রহ করবে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে নিজেকে রক্ষা করার উপায়ও জানা প্রয়োজন। আরও কত কী। তুমি যেমন ইশকুলে গিয়ে অনেককিছু শেখো। ঠিক তেমন। এসব কথা শুনে বিস্ময়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে অরণি। তারপর বলে, বকুলগাছটা যদি প্রজাপতিদের ইশকুল হয়, তাহলে যত বেশি বকুলগাছ থাকবে, তত বেশি ইশকুল হবে প্রজাপতিদের। যত বেশি ইশকুল হবে, তত বেশি প্রজাপতি পড়ার সুযোগ পাবে, তাই না মা? -তাই-ই তো হওয়ার কথা। তাহলে আমি বাবাকে অনেকগুলো বকুলগাছের চারা কিনে আনতে বলব। আমাদের বাড়ির চারপাশে বুুুনে দেব চারাগুলো। অনেকগুলো বকুল ফুলের গাছ হবে। অনেকগুলো ইশকুল হবে। প্রতিদিন রঙ্গিন রঙ্গিন ডানা মেলে প্রজাপতি খোকাখুকিরা উড়ে আসবে ইশকুলে। গাছে গাছে, শাখায় শাখায়, পাতায় পাতায় বসবে প্রজাপতি। এদিক ওদিক উড়বে। ঘুরবে। প্রজাপতিদের রূপের আলোয় ঝলমল করবে চারপাশ। তখন কী যে ভাল লাগবে! হেসে হেসে মা বলেন, খুব সুন্দর একটা কথা বলেছ মামণি। তোমার বাবাকে তো বকুলগাছের চারা আনতে বলবেই, সঙ্গে থাকবে আরও অনেক ফুল-ফলের চারা। ওই গাছগুলোও প্রজাপতিদের ইশকুল হতে পারে। বাবার অপেক্ষায় থাকে অরণি। কখন বাড়ি ফিরবেন তিনি। ফিরলেই বলবে বকুলগাছের কথা। প্রজাপতিদের ইশকুলের কথা। ওর চোখের পাতায় এখন শুধু বকুলগাছ এবং প্রজাপতিদের ইশকুলের স্বপ্ন।
×