ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া হায়দার

এ লে বে লে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৫ নভেম্বর ২০১৬

এ লে বে লে

(পূর্ব প্রকাশের পর) এখন এ পোড়া কপাল আমি রাখবো কোথায়? মেয়ে : ওষুধ লাগাও। নইলে প্লাস্টিক সার্জারি করে ফেলো। ছেলে : তুমি বিশ্বাসঘাতিনী। (মেয়ে মৃদু হাসে) নারী ছলনাময়ী, জটিলা, কুটিলা। পৃথিবীতে পুরুষের নামই হয়ে থাকে চারুদত্ত আধারকার, অষ্টম এ্যাডওয়ার্ড। সিডনি কার্টনস, টাউনসেন্ড- আর তোমরা! সবাই মার্গারেট আর আর ডিলাইলা। মেয়ে : আমি যাচ্ছি। ছেলে : আমিও বলে রাখছি, এই শেষ দেখা। নির্দেশক : (তাকে খুবই সন্তুষ্ট দেখায়) মিউজিক প্যাপোস। মিউজিশিয়ান পাপোস বাজাতে শুরু করে। একই সঙ্গে ছেলে ও মেয়ে প্লাটফর্ম থেকে নেমে দুই দিকে চলে যেতে থাকে। তিন চার পা যাবার পর দু’জনেই থমকে দাঁড়ায়। পেছন ফিরে তাকায়। যেন পরস্পরকে শেষ বারের মতো দেখার জন্যে- কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মেয়েটি ঘুরে দাঁড়ায় ও এগিয়ে যেতে থাকে। ছেলে : (একটু ইতস্তত করে) শুনো। যেয়ে থেমে যায়। পুনরায় ঘুরে দাঁড়ায়। ছেলে হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসতে থাকে। মেয়েটিও এগিয়ে আসে। দুজনেই মধ্যেমঞ্চে। ছেলে তার হাতের ভেতর হাত রাখে। ছেলে : চলো। তারা দু’জন পাশাপাশি এগিয়ে যেতে থাকে। যাবার সময় নির্দেশকের দিকে তাকিয়ে হাসে। অকস্মাৎ মিউজিশিয়ান হ্যাপি মিউজিক বাজাতে শুরু করে। নির্দেশক : (লাফিয়ে উঠে) অসম্ভব। এ হতে পারে না। থামো তোমরা। (ছেলে ও মেয়ে থেমে যায় এবং ঘুরে দাঁড়ায়।) ছেলে : কি হলো? নির্দেশক : তোমাদের মিলন হতে পারে না। (সে মধ্যমঞ্চে চলে আসে।) আমি ট্র্যাজেডি চাই। ছেলে ও মেয়ে এগিয়ে এসে তার মুখোমুখি দাঁড়ায়। ছেলে : আমরা ট্র্যাজিকমেডি করে দিলাম। মেয়ে : এটা আমাদের ব্যাপার এতেই আমাদের মঙ্গল। নির্দেশক : কে বলছে তোমাদের? নাটক আমার। মঙ্গল অমঙ্গলও আমার। কেবল আমারই। মেয়ে : আমাদের নিয়েই তো আপনি। আপনার নাটক। নির্দেশক : না আমাকে নিয়েই তোমরা। ছেলে : আমাদের ব্যাপার কেন আপনার হতে যাবে? নির্দেশক : কারণ তোমরা কুশীলব মাত্র। তোমাদের সত্ত্বা -টত্ত্বা সবই আমার নাটকের, আমার ইচ্ছাধীন। মেয়ে : কিন্তু আমরা যে মিলন চাইছি, সুখি হতে চাইছি। নির্দেশক : তোমরা চাইলেই হবে? আমি তা হতে দেবো না। আমি, আমার নাটক, আমি ট্র্যাজেডি, ট্র্যাজেডি চাইÑ আমার নির্দেশ। উড়হ’ঃ ভড়ৎমবঃ ঃযধঃ ও ধস ঃযব উরৎবপঃড়ৎ. মেয়ে : (ব্যঙ্গভরে ও রেগে) আর ডিরেক্টর মানেই ডিকটেটর। নির্দেশক : (জোর দিয়ে) হ্যাঁ। কিছুক্ষণ অস্বস্তিকর নীরবতা। হ্যাপি মিউজিক চলতে থাকে। ছেলে : হুঁ তা এখন আমাদের এখন কি করতে হবে। নির্দেশক : তোমরা বিচ্ছন্ন হয়ে যাও। (মিউজিশিয়ানকে) হ্যাপি নয় প্যাথোস। মিউজিশিয়ান থেমে যায়। মেয়ে : (মিউজিশিয়ানের উদ্দেশে) না, না। মিউজিশিয়ান পুনরায় হ্যাপি মিউজিক বাজাতে থাকে। নির্দেশক : (মিউজিশিয়ানকে) হ্যাঁ ছেলে ও মেয়েকে। দু’জন দু’দিকে ফিরে যায়। ছেলে : (গম্ভীরভাবেও কঠিন দৃষ্টিতে নির্দেশকের দিকে তাকিয়ে থেকে মেয়ের হাত ছেড়ে দেয়। হঠাৎ এগিয়ে প্ল্যাটফর্মের উপর থেকে একটি চেয়ার নিয়ে এসে নির্দেশকের সামনে শব্দ করে রাখে এবং চেয়ারের উপর একটি পা তুলে দেয়। নির্দেশক বিস্মিত হয়ে দেখে।) মানি না। নির্দেশক : কি বললে? আমার হুকুম। ছেলে চেয়ার থেকে পা নামিয়ে ফেলে। ছেলে : মানি না। মেয়ে : মানি না। মিউজিশিয়ান এসে নির্দেশকের পেছনে দাঁড়ায়। কাঞ্চু উঠে দাঁড়ায়। নির্দেশক : আমার নির্দেশ। ভুলে যেয়ো না। নাটকের ডিরেক্টর মানেই সর্বেসর্বা। অতএব বিনা বাক্যে বিনা প্রশ্নে আমার নির্দেশ তোমাদের মানতেই হবে। ছেলে : (সেøাগানের মতো করে) নির্দেশকের নির্দেশÑ মেয়ে : মানি না, মানি না। ওয়েটার কাঞ্চুর একপাশে এসে দাঁড়ায়। নির্দেশক : (চরম উত্তেজিত হয়ে) কি, কি বললে? ছেলে : তোমার হুকুমÑ এবার মিউজিশিয়ানও যোগ দেয়। সে দ্রুত লয়ে বাজনা বাজাতে থাকে। ছেলে : মানি না। মেয়ে : মানি না। মিউজিশিয়ান : মানি না। ছেলে চেয়ার থেকে সরে আসে। তিনজন নির্দেশককে ঘিরে ধরে এবং সেøাগান দিতে থাকে মিউশিয়ানরে বাজনাও চলতে থাকে। নির্দেশক : (উন্মাদগ্রস্তভাবে) আমি হুকুম করছি, আমার নির্দেশ, আমার হুকুম এখনো মেনে নাও, নইলে... সে এতো উত্তেজিত ও চলতে থাকা সেøাগানের জন্য তার উচ্চকণ্ঠ ছাড়া আর কিছু বোঝা যায় না। দ্বিতীয় ওয়েটার রেস্টুরেন্টের প্রবেশ পথের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখতে থাকে। তিন জন : মানি না, মানি না। বলতে বলতে নির্দেশককে মধ্যস্থলে রেখে ঘুরতে থাকে। নির্দেশকও চিৎকার করে ‘হুকুম’, ‘নির্দেশ’ ইত্যাদি বলে যেতে থাকে। কিন্তু তাদের সেøাগানে সে চিৎকার চাপা পড়ে যায়। চিৎকারের সঙ্গে সে চেয়ারের সামনে সরে আসে। নির্দেশককে কেন্দ্র করে কিছুক্ষণ ঘোরার পর ছেলে, মেয়ে ও মিউজিশিয়ান লাইন করে বেরিয়ে যায়। যাবার কালেও তারা সেøাগান অব্যাহত রাখে, এবং মিউজিশিয়ান তার বাজনাও চালিয়ে যায়। ওয়েটার ও কাঞ্চু পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। নির্দেশক : (চিৎকার করে, মরিয়া হয়ে) ওয়েটার, দারোয়ানকে... দ্বিতীয় ওয়েটার (বাইরের দিকে এক পলক দেখে) দারোয়ান খানা খাচ্ছে স্যার। নির্দেশক হতভম্ব হয়ে যায়। কাঞ্চু : আবু। (নির্দেশক অসহায়ের মতো তার দিকে তাকায়) আমিও চললাম। ক্যাশ বাস্কটাও নিয়ে গেলাম। (ওয়েটারকে ) তুইও চল। কাঞ্চু ক্যাশ বাক্সটা তুলে নিয়ে মঞ্চের পেছন দিক দিয়ে চলে যায়। ওয়েটার নির্দেশকের দিকে একবার তাকিয়ে কাঞ্চুর পিছু পিছু বেরিয়ে যায়। তাদের প্রস্থানের পর নির্দেশক সম্বিত ফিরে পায়। নির্দেশক : (ভেঙ্গে পড়া কণ্ঠে) তুই... ব্রুটাস, তুমিও... (বলতে বলতে চেয়ারে ওপর ধপ করে বসে পড়ে।) পুরো মঞ্চের আলো ধীরে ধীরে নিভে যায়। (শেষ)
×