ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-ডেমরা সড়ক চার লেন করার দাবি

প্রতিনিয়ত যানজট

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১২ নভেম্বর ২০১৬

প্রতিনিয়ত যানজট

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-ডেমরা সড়কটি এখন বিড়ম্বনার সড়কে পরিণত হয়েছে। দুই লেন বিশিষ্ট এ সড়কটির নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় পর্যন্ত ব্যস্ততম হয়ে পড়েছে। এ সড়কের কমপক্ষে ৭টি স্থানে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়ে যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে বাধ্য করছে। স্থানীয় বাসিন্দারাদের অভিযোগ, সড়কটি যানবাহন চলাচল আগের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও সড়কটি প্রশস্ততা তেমন বাড়েনি। স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজন সড়কটি থেকে বিড়ম্বনা দূর করতে জরুরীভিত্তিতে চার লেনে পরিণত করার দাবি জানান। জানা যায়, পাকিস্তান আমলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-ডেমরা সড়কটি দুই লেনে নির্মাণ করা হয়। সড়কটির নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে আদমজী ইপিজেড হয়ে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-শিমরাইল পর্যন্ত সড়কটি যানবাহন চলাচল পূর্বের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে সড়কটি আশপাশে আদমজী ইপিজেড, পদ্মা পেট্রোলিয়াম ডিপো, মেঘনা অয়েল কোম্পানি, নারায়ণগঞ্জ সাইলো ও সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অসংখ্য মিলকারখানা রয়েছে। এ সকল মিলকারখানার যানবাহনগুলো এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। খবর নিয়ে জানা যায়, এ সড়কটি পাশেই অবস্থিত আদমজী ইপিজেডে বর্তমানে ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। ইপিজেডটি পুরোপুরি চালু হলে প্রায় এক লাখ শ্রমিক কাজ করতে পারবে বলে জানা যায়। এপিজেডে ৫৮টির দেশি-বিদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে চালু রয়েছে। আদমজী ইজিজেডে রয়েছে ২২৯টি প্লট। প্লটগুলো গড়ে উঠছে শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। অথচ দুই লেন বিশিষ্ট সড়কটিতে ইপিজেডের যানবাহন চলাচলের সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও এ সড়কের পাশেই রয়েছে পদ্মা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপো। এ দুই ডিপো থেকে প্রতিদিন চলাচল করছে প্রায় ৯শ’ ট্যাঙ্কলরি। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-আদমজী ইপিজেড-শিমরাইল রুটে শীতলক্ষ্যা, দুরন্ত, টেম্পো, সিএনজি ও অটোরিক্সাসহ এক হাজারের অধিক যানবাহন যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, এ সড়কের শিমরাইলের বিদ্যুত অফিসের (ডিপিডিসি) সামনে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল, আদমজী ইপিজেড, বার্মাস্ট্যান্ড, ২নং ঢাকেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড, চৌধুরী বাড়ি বাসস্ট্যান্ড ও হাজীগঞ্জ গুদারা ঘাট এলাকায় প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ইপিজডে চালু ও বন্ধের সময়, অফিস চালু ও ছুটির সময় এ সড়কে ৭টি স্থানে যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। এ যানজট কখনও কখনও ৪-৫ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। আবার প্রতি ঘণ্টাও সৃষ্টি হয় যানজট। প্রতিদিন সন্ধ্যায় রংধনু সিনেমা হল থেকে শিমরাইলের বিদ্যুত অফিসের সামনে, আদমজী ইপিজেড ও সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় যানজট লেগেই লাগছে। গোদনাইলের পদ্ম ডিপো ট্যাঙ্কলরি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী জানান, পদ্মা ডিপোতে প্রায় সাড়ে ৪শ’ ট্যাঙ্কলরি রয়েছে। যা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়ক দিয়েই জ্বালানি তেল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাচ্ছে। পদ্মা ডিপো থেকে বিমানের জ্বালানি তেলও ট্যাঙ্কলরি মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও মেঘনা ডিপোতেও প্রায় সাড়ে ৪শ’ ট্যাঙ্কলরি রয়েছে। সেই ট্যাঙ্কলরিগুলোও এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। তিনি ইদানিং এ সড়ক যানজটের কথা স্বীকার করে জানান, যানজট নিরসন করতে হলে পুলিশ ও জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। এ রুটের চলাচলত শীতলক্ষ্যা পরিবহনের চালক শাহ আলম জানান, এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে অনেক সময় রাস্তায় আটকে থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে ইপিজেডের শ্রমিকদের ছুটি ও কাজে যোগদানের সময় এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মিজমিজির বাসিন্দা ফয়সাল জানান, প্রায় প্রতিদিনই সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় সকালে ছেলে-মেয়েদের স্কুল নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় যানজটে আটকে থাকতে হয়। সড়কটি জরুরীভিত্তিতে চার লেনের সড়কে পরিণত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যদি এখনও সড়কটি চার লেনে পরিণত না করায় হয় তবে এ সড়কটি দিয়ে নির্বিঘেœ চলাচল করতে যাত্রীদের হিমশিম খেতে হবে। কারণ এখনও ইপিজেড পুরোপুরি চালু হয়নি। পুরোপুরি ইপিজেড চালু হলে এ সড়কে যানবাহন চলাচল একেবারেই স্থবির হয়ে পড়বে। শিমরাইল মোড়ে কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোল্যা তাসলিম হোসেন এ রুটে যানজট সৃষ্টির কারণ হিসেবে জানান, ইপিজেডের গাড়ি ও অফিসের লোকজন এক সঙ্গে চলাচল করায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ইদানিং জনসংখ্যা বাড়ছে, গাড়ির চাপও বাড়ছে। কিন্তু আমরা ট্রাফিকের লোকজনও দিতে পারতেছি না। ট্রাফিকের লোকজনও কম রয়েছে। তাছাড়াও পদ্মা ও মেঘনা ডিপো ও আদমজীর ইপিজেডের গাড়ি এক সঙ্গে রাস্তায় বের হলেই সৃষ্টি হয় যানজট। শিমরাইল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহর পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে বাস-মিনিবাস, দুরন্ত, সিএনজি, অটোরিক্সা, টেম্পোসহ প্রায় এক হাজারের অধিক বিভিন্ন যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করছে। এতে রাস্তায় দিন দিন চাপ বাড়ছে। তিনি আরও জানান, এ সড়কটি চার লেনে করা হলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে।
×