ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইমরান চৌধুরী

সায়েন্স ফিকশন ॥ নাবিলার ফটোকপি

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১১ নভেম্বর ২০১৬

সায়েন্স ফিকশন ॥ নাবিলার ফটোকপি

একজন নিঃসঙ্গ মানুষের সারাদিনের প্রোগ্রাম কিইবা হতে পারে? আর যাই হোক, কোন মানুষের সঙ্গে যে ইন্টারেকশান হবে না, তা বলাই বাহুল্য। সে রকমই প্রোগ্রাম করেছে সোহেল, কিন্তু মুশকিল হয়েছে শরীরটা নিয়ে। পর পর তিন রাত ঘুম হয়নি। গত রাতে তো এক ফোটাও নয়। হবেই বা কি ভাবে? আজ সন্ধ্যায় যে ঘটনাটা ঘটবে, সেটা চিন্তা করলেই তো ঘুম হবার কথা নয়। আজ সোহেলের সঙ্গে নাবিলার দেখা হবে। তার এক মামাতো বোন আছে নাবিলা। একই ক্লাসে পড়ত। মেট্রিক, ইন্টারমিডিয়েটে দু’জনেই অসাধারণ ভাল রেজাল্ট করেছে। কখন যে মনের অজান্তে তাদের প্রণয় হয়েছে বুঝতে পারেনি কেউই। বুঝতে পেরেছে সেই দিন, যে দিন নাবিলার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় এক আমেরিকা প্রবাসী গ্রীনকার্ড হোল্ডারের সঙ্গে। কিছুতেই কিছু করা গেল না। নাবিলা আমেরিকায় চলে গেল। আর সোহেল! না ভর্তি হতে পারল বুয়েটে না ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ডাক্তারও হতে পারল না, ইঞ্জিনিয়ারও না। কিন্তু কথা ছিল ডাক্তার হবে। কারণ নাবিলার ইচ্ছে ছিল সোহেল হবে ডাক্তার। আর যেটা হবার কথা ছিল না সেটাই হয়েছে সোহেল। সে হয়েছে বায়োকেমিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করে জাপান থেকে ক্লোনিং এ পিএইচডি করেছে। দীর্ঘ দশ বছর জাপানে ক্লোনিং এর উপর গবেষণা করেছে। হঠাৎ করেই দেশে আসা। আজ যে নাবিলার সঙ্গে দেখা হবে সেটা তার মামাতো বোন নয়, মামাতো বোনের উ.ঘ.অ. থেকে তৈরি করা নাবিলা। যাকে বলা যাবে ক্লোন নাবিলা। অর্থাৎ নাবিলার ফটোকপি। আজা সারাদিন মূলত অপেক্ষা করেই কাটাতে হবে। বিকেলে ম্যানুয়েলগুলোর ওপর আর একবার চোখ বুলানো দরকার। বিশেষ করে ইনকিউবেটর থেকে বের করার পর নাবিলার অবস্থাটা কি হবে। জাপানে বহু বানর ক্লোন করেছে সোহেল। খুব বেশি অসুবিধা হবার কথা নয়। ও আচ্ছা। একবার কোন শপিং সেন্টারেও যেতে হবে। নাবিলা তো জন্ম দিনের ড্রেসে! বানর হলে তো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু নাবিলা তো আর বানর না। হয়েছে মানুষ। আবার যুবতী! ড্রেস দরকার। কি কিনবে? শাড়ি না সালোয়ার কামিজ? লম্বায় তো প্রায় ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। গত দশ বছর যাবত একটা কোষ থেকে তিলে তিলে বেড়ে উঠেছে এ ক্লোনটি। দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী সোহেলের নিঃসঙ্গ অবস্থায় কেটেছে এটিকে ঘিরে। আজ এই ক্লোনটি ইনকিউবেটর থেকে বের হয়ে নরমাল মানুষের মতো সোহেলের সঙ্গে কথা বলবে। উত্তেজনায় গত তিন রাত ঘুম নেই। সাংঘাতিক ¯œায়ু চাপের মধ্যে আছে। চাপ থাকাটাই তো স¦াভাবিক। চাপ থাকবেই বা না কেন? কত রকম চাপ। প্রথমত টেকনিক্যাল, বানর ক্লোন করেছে যে ভাবে, মানুষ সেভাবে করাতে কোন সাইড ইফেক্ট হবে কি না? জাপানে এ এক্সপেরিমেন্ট পারমিশন ছাড়া করা অসম্ভব। পারমিশন পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বাংলাদেশ বলে এ সাহস করা গেছে। ফান্ডের ব্যাপারও আছে। ফান্ডের ব্যাপারটা তেমন অসুবিধা হয়নি। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের সব টাকা জমে আছে। কিভাবে যে এতগুলো বছর কেটে গেল সোহেল বুঝতেই পারেনি। এক সময়ে ব্যাংক ব্যালেন্স দেখে সে নিজেই অবাক হয়ে যায়। এত টাকা দিয়ে কি করবে? নিঃসঙ্গ থাকার কারনে প্রায় সবার সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। একবার ভেবেছিল দেশে এসে কোন চ্যারেটি অর্গানাইজেশন করবে। দেশের অবস্থা এবং নিজের নিঃসঙ্গ চারিতার কারণে এ আইডিয়া বাদ দিয়েছে। দ্বিতীয় মানসিক চাপের কারণ, কিছুটা নৈতিক কিছুটা সামাজিক। ক্লোন নাবিলার সঙ্গে তার সম্পর্ক কি হবে? সামাজিক অবস্থানই বা কেমন হবে। এতদিন তো ল্যাবরেটরিতে ছিল। বাকি সব যন্ত্রের মতো নাবিলাকেও অফ ও অন করে রাখা যেতো। এখন তো সেটা সম্ভব হবে না। কি বলবে তাকে? কিভাবে বলবে? যদি ইনকিউবেটর থেকে বের হয়ে স¦াভাবিক মানুষের মতো না হয়? তাকে অতিরিক্ত গ্রোথ হরমোন দেয়া হয়েছিল। তাতে যদি মানসিক ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটে? যদি নাবিলার মৃত্যু হয়? এসব চিন্তা হতেই সোহেলের উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। একবার চিন্তা করে কেনই বা এ ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে গেলো। ভালই তো ছিল জাপানের জীবন। সারা সপ্তাহ ল্যাবে। লংড্রাইভ, হাইকিং, বারবিকিউ, হানাবি, নতুন নতুন বন্ধু, নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট, আবার ল্যাব ও চক্রটা মন্দ ছিল না। তাহলে কেন বাংলাদেশে আসা? আসা হয়েছে তৃতীয় কারণটার জন্য। সেটা মানসিক চাপ নাকি মানসিক উত্তাপ! কি বলা যায়? যাই বলা হোক তৃতীয় উত্তেজনার জন্যই মূলত তার আজকের এ অবস্থা। প্রবাস জীবনের কথাগুলো সোহেলের মনে পড়ে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে একটা দিনের একটা ঘণ্টাও পাওয়া যাবে না, যেখানে সোহেল নাবিলাকে ভুলতে পেরেছে। অন্ধকার ঘরে ঢুকেই যেমন প্রথমে লাইট জ্বালাতে হয়। ঠিক তেমনি সোহেল প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে নাবিলার কথা মনে করে। সারাদিন নাবিলার কথা চিন্তা করে আর কাজ করে। রাতে নাবিলার কথা মনে করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমালে নাবিলাকে স্বপ্নে দেখে। আবার ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই মনে পড়ে নাবিলার কথা। এটাও আরেকটা চক্র। জাপানে আসার পর এ চক্রটা কিছুটা চাপা পড়েছিল প্রথম চক্রের কাছে। অর্থাৎ জাপানী জীবন চক্র ডমিনেট করতো নাবিলা চক্রকে। এক সময় আবার নাবিলা চক্র সক্রিয় হতে থাকে। দু’চক্রই সমান তালে চলতে থাকে। সোহেল ভালই ছিল। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। এ পথ চলারও ক্লান্তি আসে। দু’চক্র আর সমান তালে চলে না। জাপানী চক্র ক্রমশই দুর্বল হতে থাকে। মনের অজান্তে নাড়ির টান অনুভব করে। আবিষ্কার করে এক দানবীয় হতাশা। উত্তরণের পথ খুঁজে সোহেল ডেসপারেটলি। দেশে ফিরে আসার চিন্তা করে। এসেই বা কি করবে? চাকরি বাকরি তো নেই। আবার চিন্তা করে সেটার দরকারই বা কেন? তাছাড়া দেশে আর কেউ তো নেই। মায়ের যে টাকা পয়সা আছে তাইতো যথেষ্ট। নিজের জমানো টাকাগুলো বাকি জীবনে খরচ করেও শেষ করা যাবে না। দেশে ফেরার চিন্তা থেকেই বহুদিন পর দেশ থেকে নিয়ে আসা স্যুটকেইসটা খুলে সোহেল। কি আছে এটার মধ্যে। অনেক বছর খোলা হয়নি। মনেও নেই ভেতরে কি আছে। সব সার্টিফিকেট পাওয়া গেল। পাওয়া গেল রবীন্দ্র সঙ্গীতের কিছু ক্যাসেট। এখন তো এগুলো মিউজিয়ামে থাকার কথা। ফিতাওয়ালা ক্যাসেট তো বাজাবার উপায় নেই। ফেলে দেয়া ছাড়া এ গুলো দিয়ে আর কি হবে? প্রাণরসায়ন বিভাগে নবীন বরণে দেয়া কার্ডটি এখনো একই রকম আছে। লেখা আছে, ‘যে চিহ্নে জীবন কথা বলে তার পথ ধরে অবারিত হও হে নবীন।’ অবারিত মানে কি? কোন চিহ্নে জীবন কথা বলে? একটা ডিএনএ. ডাবল হিলিক্স এর চিহ্ন আঁকা আছে। সেই চিহ্নেই কি জীবন কথা বলে? একে একে দেশের সব কথা মনে হতে থাকে। দেশে ফিরে আসবে, কিন্তু কখন, সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল সোহেলের। সব দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেটে যায় যখন স্যুটকেসের পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো রুমালটি তার হাতে পড়ে। রুমালের তেমন গুরুত্ব নেই। গুরুত্বপূর্ণ হলো রুমালে প্যাঁচানো জমাট বাঁধা রক্ত। রক্ত সোহেলের ভাল লাগে না। ভয় ভয় লাগে। এগুলো যে নাবিলার রক্ত! তাতে কি হয়েছে? প্রকৃতি কখনো কখনো মানুষকে নিয়ে তামাশা করে। তা না হলে সুদূর বাংলাদেশ থেকে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে এ জিনিস নিয়ে কেউ জাপান আসতো না। এ রক্ত বয়ে আনার কারণই বুঝতে পারে না সোহেল। যেখানে নাবিলা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। নাবিলার ওপর অভিমান হতে থাকে। ডাস্টবিনে ফেলে দেয় নাবিলার রক্তমাখা রুমালটি। পরক্ষণই মনে পড়ে যায় সেই দিনের ঘটনা। মামা খবর পাঠিয়েছে বিকেলে বাসায় যেতে। সোহেল বাসায় গিয়ে বুঝতে পারে নাবিলার জন্যই ডাকা। ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারের কথা। নাবিলা তখন ইডেন কলেজের ছাত্রী আর সোহেল ঢাকা কলেজে। ইডেন কলেজে দাবা প্রতিযোগিতায় নাবিলা ফাইনালে উঠেছে। আগামীকাল ফাইনাল। সোহেলকে ডাকা হয়েছে নাবিলাকে কিছু টিপস শিখিয়ে দিতে। মামার ধারণা সোহেলেরই উচিৎ ছিল বাংলাদেশের প্রথম দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। সোহেল কেন যে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়নি এ নিয়ে মামার অনেক মনোকষ্ট ছিল, যাই হোক। বিকেলে মামার বাসায় গিয়ে সোহেল দেখে বারান্দায় মামা, মামি আর নাবিলা তার জন্য অপেক্ষা করছে। পরে এক সঙ্গে সবাই চা খায়। মাগরিবের নামাজের জন্য মামা গেল মসজিদে। মামি রান্না ঘরে। নাবিলা আর সোহেল তখনও বারান্দায়, কিছু ট্রিপস শিখিয়ে দিলো নাবিলাকে। পর পর দু’টা গেইম ভালই খেলেছে নাবিলা, তৃতীয় গেইমে মারাত্মক ভুল করে। সোহেল যেই না মন্ত্রীটা খাবার জন্য হাতে নেয় অমনিই সরি সরি বলে ছো মেরে নাবিলা তার হাত থেকে মন্ত্রীটা নিয়ে যায়। এটাকে হাতাহাতি বলা যাবে না। আবার ছোঁয়াছুঁয়িও না, মাঝা মাঝি। ঘটনা অতটুকুই। সূর্য ডুবে গেছে। আঁধার তখনো আসেনি। আলো তখনো যায়নি। বড় মায়াবী আলো আঁধারের খেলা। প্রকৃতির অতি পরিচিত জিনিসকেও অচেনা লাগে। সাধারণ জিনিসকেই বড় বিস্ময়কর মনে হয়। সোহেলের কাছেও নাবিলাকে সম্পূর্ণ নতুন মনে হয়। জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় যেমন রাজকন্যা জেগে ওঠে। সোহেলের ভেতর কি জেগে উঠেছিল তখনো সে ভালভাবে বুঝে ওঠেনি। ভেতরের অবস্থা তো বোঝার উপায় নেই। বাইরের অবস্থা হলো তৃতীয় গেইম সোহেল হারে নাবিলার কাছে। ঘোড়া যায় আড়াই ঘর সোহেল দিচ্ছে সাড়ে তিন ঘর। ইচ্ছে করে নয়। কোন কিছুর প্রতিই যেন সোহেলের কন্ট্রোল নেই। কি হয়েছে তার। লজ্জাবতী গাছকে ছুঁয়ে দিলে যেমন সে পাতাগুলো গুটিয়ে ফেলে। ঠিক তেমনি সোহেলের সমস্ত অনুভূতিগুলোও কেমন যেন অন্তর্মুখী হয়ে যায়। কে ছুয়ে দিল তাকে? পারিপার্শ্বিকতাকে রেসপন্ড করার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলে। বড়ই বিব্রতকর অবস্থা। বিশেষ করে নাবিলার সামনে! সারাজীবনের সাজানো প্ল্যান এভাবে তছনছ হয়ে যাচ্ছে, অথচ সোহেল কিছুই করতে পারছে না। কোথায় গেল তার স্মার্টনেস? কোথায় গেল গুছিয়ে কথা বলা? এক ঘণ্টা ব্যায়াম আর পঞ্চাশটা পুশআপ! তার হাতও তো কাঁপছে। কথা বলতে গেলে তোতলানো হয়ে যাচ্ছে। অনিবার্য করুন পরিণতির কথা ভেবে সোহেল প্রস্থানের উপায় খুঁজে। তখনই মামি একটা প্লেটে করে কয়েকটা আপেল আর ছুরি নিয়ে আসে। বলে, আমার রান্নাঘরে কাজ আছে তোমরা কেটে খাও। আপেল কাটবে প্লেটে রেখে অথবা টেবিলের উপর। নাবিলা কাটছে হাতের উপর রেখে। সোহেল যে বাধা দিবে সে কাজটাও করতে পারে না। চোখের সামনে ঘটনাটা ঘটে যায়। হাত কেটে গড় গড় করে রক্ত বের হয়। সোহেল তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে নাবিলার হাত চেপে ধরে। এত রক্ত বের হচ্ছে অথচ নাবিলা টু শব্দও করছে না। যেখানে হাতের সামান্য নখ কাটলে সে ঘর মাথায় করে তোলে। সোহেল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছে, কিরে খুব কষ্ট হচ্ছে? না, তুই আমার হাতটা ধরে থাক। কতক্ষণ ধরে ছিল সোহেলের মনে নেই। সোহেলের মনে হচ্ছিল নাবিলার রক্তগুলো তার শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। আবার তারগুলো নাবিলার শরীরে। অর্থাৎ দু’টো শরীর একই সারকুলেটরী সিষ্টেমের মধ্যে চলে এসেছে। এক হৃৎপিন্ড তৈরি করছে সিস্টোলিক প্রেসার আরেক হৃৎপিন্ড করছে ডায়াস্টলিক। এ যেন জনম জনম ধরে পৃথক হয়ে থাকা দুটি অপূর্ণ আত্মার নির্ধারিত পুনর্মিলন। সে দিন থেকেই সোহেল নাবিলার গন্ধ পায়। নাবিলার উপস্থিতিতে, বাতাসের তরঙ্গ আর তার হৃদয়ের তরঙ্গ মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করেও বলে দিতে পারে নাবিলার উপস্থিতি। ডাস্টবিন থেকে অনেক মমতা নিয়ে রুমালটি আবার তুলে নেয় সোহেল। তখনই সেই ভয়াবহ প্ল্যানটি তার মাথায় আসে। নাবিলাকে আবার সৃষ্টি করবে নাবিলার এ রক্ত থেকে। টেকনিক্যালি এটা আর তেমন কঠিন কাজ নয়। যেখানে গরু, ভেড়া, বানর ইত্যাদি হচ্ছে। প্ল্যানটা মোটামুটি সে যেভাবে চিন্তা করে তা হলো এ রক্তগুলোর সেল থেকে এক সেট নাবিলার ল্ডোমোজোম জোগাড় করবে। একটা বড় ইনকিউবেটর এবং আনুষঙ্গিক রিএজেন্টগুলো জাপান থেকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। ক্লোনটা শুরু করবে ঢাকায়। সে রকম চিন্তা থেকেই ড. আক্তারুজ্জামানের এনভায়রোকেয়ারের চাকরিতে রাজি হয় সোহেল। ল্যাবটি ধানমন্ডি ৪/এ তে বেট্স সেন্টারে। মালিক তাকে কোন বেতন দেবে না। দিয়েছে ডাইরেক্টরশীপ। তাই করেন ভদ্রলোক। সোহেলের আগেও কয়েকজনের সঙ্গে এমনই করেছেন। দুই তিন বছর পর দেখা যায় চাকরিও যায়, ডাইরেক্টরশীপও যায়। মালিকের ব্যবসা আরো বড় হয় কিন্তু ডাইরেক্টরেরা পথে বসে। জেনেশুনেও এ চাকরি নিয়েছে সোহেল। কারণ মাথায় সারাক্ষণ ঘুরছে নাবিলার ক্লোনিং। ড. আক্তারুজ্জামানের সব শর্তই সোহেল মেনেছে। শুধু একটা শর্তই দিয়েছে সোহেল। ল্যাবের দক্ষিণ কোনায় যে দশ ফুট বাই দশফুট রুমটি আছে সেটা সোহেলকে দিয়ে দিতে হবে। কারণ জাপান থেকে সব দামী যন্ত্রপাতি ও রিএজেন্ট রাখবে ওখানে। মালিককে বলেছে মূলত সেটাকে ষ্টোর রুম হিসেবে ব্যাবহার করবে। রুমটি পাবার পর নিজের মত করে সাজায় সোহেল। কাজটি করেছে অত্যন্ত গোপনে। অবশ্য ল্যাবে সে ছাড়া মাত্র একটি পিয়ন। মালিকতো তেমন আসে না। নাবিলাকে ক্লোন করার আদর্শ স্থানই বটে। শুধু একটা বড় জেনারেটর লাগাতে হয়েছে। কারণ সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সরবরাহ অত্যাবশ্যকীয় এ ইনকিউবেটরে। ক্লোন এর কাজটি করতে তেমন অসুবিধা হয়নি। জাইগোটটা বানিয়েছে ইন ভিট্রো। অর্থ্যাৎ ভ্রুণটা তৈরি করেছে টেস্ট টিউবে। এটাতে সিদ্ধহস্ত সোহেল। নাবিলার যে এক সেট ল্ডোমোজোম তৈরি করেছিল জাপানে সেটা এগ সেলের ল্ডোমোজোম ফেলে সেখানে স্থানান্তর করেছে। এভাবে তৈরি করেছে নাবিলাকে বানানোর ভ্রƒণ। তারপর সাবধানে ইনকিউবেটরে বসিয়ে নার্সিং করছে। ইনকিউবেটরটা অনেকটা মাতৃজোঠরের মতো। পার্থক্য হলো মাতৃজোঠরে বেড়ে ওঠা ভ্রƒণ চল্লিশ সপ্তাহের বেশি থাকতে পারে না। কিন্তু ইনকিউবেটরে ইচ্ছে মতো সময় পর্যন্ত রাখা যায়। এসব ইনকিউবেটর বানানো হয়েছে যুদ্ধের সৈনিক বানানোর জন্য। পরাশক্তিগুলো এখন মূলত ক্লোন সৈনিক ব্যবহার করে। গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে দশ বছরে বিশ বছরের বয়সী মানুষ তৈরি করতে পারে। ইচ্ছে মতো প্রোগ্রামিং করে দানবীয় শক্তি আর হিংস্রতা বাড়াতে পারে। মানবীয় শক্তি বাড়ানোর কোন প্রোগ্রামিং হয়েছে কিনা তা সোহেলের জানা নাই। মাঝে মাঝে প্রোগ্রামিং ভুল হয় অথবা ইনফেকশন হয়ে যায়। তখন একসঙ্গে লাখ লাখ মানব সন্তান হত্যা করা হয় ব্যাক্টেরিয়ার মতো। কে হিসেব রাখে এগুলোর? নিঃসঙ্গ মানুষের ক্ষুধা লাগা ঠিক নয়। ক্ষুধা লাগবে সঙ্গী প্রিয় মানুষের। সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলবে আর সব মজার মজার খাবে। নিঃসঙ্গ মানুষের ক্ষুধা লাগবে কেন? সে তো এমনিতেই নিঃসঙ্গ। প্রকৃতির এ আনন্দ মেলা থেকে স্বইচ্ছায় নির্বাসিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো নিঃসঙ্গতার সঙ্গে ক্ষুধার কোন সম্পর্ক নেই। তার প্রমাণ সোহেল। সোহেলের প্রচ- ক্ষুধা লেগেছে। সকাল থেকে একফোটা পানিও খায়নি। বিছানায় আর কতক্ষণ শুয়ে থাকা যায়। ঘুম যে আসবে না সেটা নিশ্চিত। পর পর তিন রাত হলো। ভেবেছিল সকালে হবে। তাও হলো না। এখন লেগেছে ক্ষুধা। এখন কি করা যায়। বাবর রোডের চার তলায় নিজ বাড়ির বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে সোহেল। এখন বাজে ১১টা। সারাদিনের প্রোগ্রাম চক আউট করছে সোহেল। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর নাবিলাকে ইনকিউবেটর থেকে বের করলে কি হবে সে চিন্তায়ই সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে। এক বারও ক্ষুধার চিন্তা মাথায় আসেনি। এখন তো মনে হচ্ছে ক্ষুধাটাই না¤¦ার ওয়ান প্রায়োরিটি। বাসায় কোন খাবার নেই। রান্না করার প্রশ্নই আসে না। তিনদিন আগে কেনা রুটিটায় ফাংগাস হয়েছে। বাইরে না গিয়েওতো উপায় নেই। হোটেলে যেতে ইচ্ছে করে না। মানুষগুলো গিজ গিজ করে। ইদানীং নতুন হাসপাতালগুলোয় ভাল ক্যান্টিন করেছে। সবচেয়ে বড় কথা ওগুলো তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার এবং ফাঁকা থাকে। ধানম-িতে সেরকম একটি আছে। সোহেল মাঝে মাঝে সেখানে যায়। কিন্তু এখনি ধানম-ির দিকে যেতে ইচ্ছে করছে না। ধানম-িতে যাবে পড়ন্ত বিকেলে। তারপর হবে সন্ধ্যা। ঘটবে সেই কাক্সিক্ষত ঘটনা যার জন্য গত দশ বছরের স্ব-ইচ্ছায় নির্বাসিত জীবন। মূলত সন্ধ্যার পরের ঘটনার জন্যই তো আজ সারাদিনের প্রস্তুতি। এখন আর কোন চিন্তাই আসছে না। আপাতত খেতে হবে। বাবর রোড়ের উল্টা দিকে হার্ট ইনস্টিটিউটের ক্যান্টিনটাও মন্দ না। সেখানেই যাওয়া যাক। ফ্যাক্ট ইজস্ট্রেইঞ্জার দ্যান ফিকশান। এটা প্রবাদ বাক্য। ব্যবহৃত হবে তর্কে বা বিতর্কে, অথবা কোন রাজনৈতিক মঞ্চে লক্ষ মানুষকে মোহিত করার জন্যে। আবার কোন আদর্শ শিক্ষক তার ছাত্রছাত্রীকে জ্ঞান দান করবার জন্যেও ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সোহেলের মতো একজন নিঃসঙ্গ মানুষের জীবনে এ প্রবাদ বাক্যের প্রয়োগ হবে কেন? সোহেল নাবিলার গন্ধ পায়! ক্যান্টিনে খাবার অর্ডার করে সে অপেক্ষা করে। কিছুক্ষণ পরই গরম ভাত, দেশী মুরগি আর ডাল তার সামনে আসে। খাবারের গন্ধ পাওয়াই স¦াভাবিক। কিন্তু সে পাচ্ছে নাবিলার গন্ধ। প্রথমে ভাবে এটা পরপর তিন রাত ঘুম না হওয়া এবং তার সঙ্গে ক্ষুধার তীব্রতা মিলে ব্রেনের ম্যাল ফাংশান। কারণ ব্রেন শুধু গ্লুকোজ ছাড়া অন্য কোন খাবার নিতে পারে না। যেহেতু শরীরে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের অভাব হয়েছে তাই গ্লুকোজের কাছাকাছি অণু গ্যালাক্টোজ বা ফ্রুক্টোজ ভুলল্ডমে ব্রেনে ঢুকে গেছে। সে জন্যই গন্ধ ভ্রম। তাই খাবারের কাক্সিক্ষত গন্ধটাকে নাবিলার গন্ধ মনে হচ্ছে। না! খাবারের গন্ধের সঙ্গে নাবিলার গন্ধের কোন মিলই নেই। এটা স্পষ্টই নাবিলার গন্ধ। পরক্ষণই মনে হলো ধনম-ির ল্যাব থেকে ক্লোন নাবিলা কি বের হয়ে গিয়েছে? সেই নাবিলার গন্ধই কি সে পাচ্ছে? ধানম-ি এখান থেকে তিন-চার কিলো দূরে! সোহেল তো নাবিলার গন্ধ পায় ২/৪ মিটার কাছে এলে। তবে কি নাবিলা এখানে চলে এসেছে? কিভাবে আসবে? অসম্ভব! আসতেই পারে না। ক্ষুধার্থ মানুষটির আর খাওয়া হলো না। মানুষের প্রায়োরিটি লিস্ট চেঞ্জ হয়। যেটাকে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে পরক্ষণেই সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। কারণ তার থেকে আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলে আসে। একটু আগে সোহেলের ক্ষুধাটাকে যত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল এখন আর মনে হচ্ছে না। এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হলো নাবিলার গন্ধের উৎস খুঁজে বের করা। সোহেল সেটাই করছে। বেশি বেগ পেতে হলো না। এ যেন প্রকৃতির নিজ হাতে সাজানো কোন দৈব ঘটনা। সোহেল ক্যান্টিন থেকে বের হচ্ছে আর নাবিলা ক্যান্টিনে ঢুকছে। যেহেতু সোহেলের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল তাই নাবিলাকে ঢুকতে দেখেছে সোহেল কিন্তু নাবিলা সোহেলকে দেখেনি। সোহেল কে ক্রস করে ক্যান্টিনের কোনায় একটি টেবিলে গিয়ে বসে। পূর্ব প্রস্তুতি সোহেলের ছিল বটে কিন্তু বিস্ময় ছিল তার দ্বিগুণ। মাথায় সারাক্ষণ ক্লোন নাবিলা। মূল নাবিলার কথা কি সে ভুলেই গেছে? এটা ক্লোন না, মূল নাবিলাই। সোহেল সামাজিক হলে সব খবরই পেত। সে তো বিচ্ছিন্ন। তাই কিছুই জানে না। তার মামা অর্থাৎ নাবিলার বাবা গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত। টানা আঠারো ঘণ্টা জার্নি করে সুদূর আমেরিকা থেকে নাবিলা এসেছে। সকাল থেকে হসপিটালে। গত দু’রাত ঘুম নেই। সোহেলেরও গত তিন রাত ঘুম নেই। বাহ কি সুন্দর কোইনসিডেন্স। প্রায় বিশ বছর পর দু’জনের দেখা। হাজার বিস্ময়। হাজার প্রশ্ন। কোনটা থেকে কোনটার প্রায়োরিটি। কোনটা আগে জিজ্ঞেস করবে। কোনটা পরে। দু’জনেরই একই অবস্থা। তবুও নাবিলাই কথা বলেছে বেশি। বরাবরের মতো সোহেল শুনেছে। কিন্তু একটা কথা না বললে তো নয়। ক্লোন নাবিলার কথা না বলে থাকে কিভাবে? সমস্ত ক্লোন এর গল্পটি নাবিলাকে বলেছে। শুধু আজ সন্ধ্যাই যে ইনকিউবেটর থেকে বের হবে সেটা এবং ল্যাবের ঠিকানাটা ছাড়া। নাবিলা সব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। শুধু একটি প্রশ্ন করেছে এগ সেলটা কোন মেয়ে থেকে নিয়েছো! উত্তরে সোহেল ঠিক কিছু বলেনি শুধু মনে মনে ভেবেছে। নিজে মিলিয়ন অব স্পার্ম সেল নিচ্ছে ইন ভিভোতে। সেটায় কোন আপত্তি নেই, আর সোহেল মাত্র একটা এগ সেল নিয়েছে সারা জীবনে! তাও আবার ইন ভিট্রো! এতেও নাবিলার আপত্তি। বড়ই রহস্যময়ী মেয়ে। একটুকুও বদলায়নি। আজ মামাকে দেখবে না। সোহেল আজ পর্যন্ত নিঃসঙ্গ জীবনেই থাকবে। মামাকে দেখবে কাল সকালে। নাবিলাতো এক্সসেপশন। সঙ্গ আর নিঃসঙ্গের সংজ্ঞায় তো নাবিলা পড়ে না। নাবিলার সম্পর্কতো আত্মার সঙ্গে। তবে সন্ধ্যার পর মূল নাবিলা থেকে ছুটি নেবে। সন্ধ্যার পরের সময় শুধুই ক্লোন নাবিলার। সে রকমই প্ল্যান ছিল। মূল নাবিলা এসে প্ল্যানে কিছুটা রদবদল করেছে বৈ কি। এখন প্রায় চারটা। গল্পে গল্পে কারোই খাওয়া হলো না। নাবিলার কিছু জরুরী কেনাকাটা আছে। সোহেলেরও ক্লোন নাবিলার জন্য ড্রেস কেনার কথা। ঠিক হলো নিউমার্কেট যাবে। সেখান থেকে সাতাশ ন¤¦রে গিয়ে কাবাব খাবে। তারপর সোহেল যাবে তার নির্ধারিত কাজে। নাবিলা বাসায় গিয়ে রেস্ট নেবে। আগামীকাল আবার দেখা হবে। এরকম প্ল্যান করেই নিউ মার্কেটের দিকে রওনা হয় নাবিলা আর সোহেল। নিউমার্কেট থেকে যখন বের হলো তখন বিকেল পাঁচটা। এবার রিক্সায় করে ধানম-ি ২৭ না¤¦ারের দিকে যাত্রা। একটা ভাল রিক্সা পাওয়া গেল। লাল টুকটুকে সিট। অনেক রিক্সা আছে যেগুলোর সিট আর পাদানী ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে থাকে। একটু ব্রেক কষলেই রিক্সা ওয়ালার পিঠে গিয়ে হাত লাগে। বড়ই বিরক্তিকর! এটা সেরকম নয়। এটা ১২০ ডিগ্রী। খুব আরাম। চালকটাও ভাল। রিক্সায় একটা রেডিও আছে। বিভিন্ন স্টেশন থেকে গান শোনা যায়। বিলাসিতার উন্নত ব্যবস্থা! রিক্সায় বসেই সোহেল নাবিলার গন্ধ আরও বেশি পাচ্ছে। পাগল করা গন্ধ। একটুও বদলায়নি। ঠিক আগের মতো। নেশা নেশা ভাব আসতে থাকে। ঘুম কি রিক্সায় চলে আসবে? পরপর তিন রাত জাগা সোহেল! তাদের রিক্সাটা আসাদ গেটের কাছাকাছি আসতেই বুঝতে পারল সাতমসজিদ রোডে অসম্ভব জ্যাম। অনেক গুলো দমকল বাহিনীর গাড়ি চলে গেল। মোহাম্মদপুরের দিকে হয়তোবা আগুন লেগেছে। মোহা¤মদপুর বিহারী ক্যাম্পে প্রায়ই আগুন লাগে। বিডিআর ক্রস করে ঝিগাতলার মোড়ের কাছে আসতেই বুঝলো আগুন মোহাম্মদপুরে নয়। লেগেছে আশপাশে কোথাও। আরেকটু সামনে গিয়েই বুঝলো আগুন আর কোথাও নয় লেগেছে বেট্স সেন্টারে। দমকল বাহিনীর মানুষ আর আশপাশের মানুষ এসে গিজ গিজ করছে। এনভায়রোকেয়ার এর সাইনবোর্ডটি তখন পুড়ছিল। ভেতরে প্রচ- আগুন। বেট্স সেন্টার ক্রস করার সময় নাবিলা বলছে ইস কার যেন সর্বনাশ হয়ে গেল। সোহেলের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। মনের অজান্তে নাবিলার হাত ধরে। আবার সেই একই অনুভূতি। মনে হচ্ছে দু’টা আত্মা একই সারকুলেটরি সিস্টেমের আন্ডারে চলে এসেছে। একটায় তৈরি হচ্ছে সিস্টোলিক প্রেসার। কিন্তু আরেকটায় ডায়স্টোলিক প্রেসার হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সব রক্ত ক্রমাগত জমা হয়ে যাচ্ছে। নাবিলার কথায় সে বাস্তবে ফিরে আসে। দেখ, আমার প্রিয় গানটি। তাইতো খেয়ালই করেনি সোহেল। রিক্সার রেডিওতে শুনতে পায় নাবিলার প্রিয় গানটি- সখি ভাবনা কাহারে বলে, সখি যাতনা কাহারে বলে, তোমরা যে বল দিবস রজনী ভালবাসা ভালবাসা সখি ভালবাসা কারে কয়?
×