ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক চমৎকার রাত্রে

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এক চমৎকার রাত্রে

মঈন! একটা চমৎকার গ্রীষ্মের জোনাক-জ্বলা রাত্রে এই সভ্যতার সকল ধীমান প্রতিনিধিবৃন্দ যদি ম’রে যান কারো কোনো ক্ষতি হবে না, আমি তা’ জানি, তুমিও নিশ্চিত জানো! কিংবা হঠাৎ অলিন্দ থেকে যদি ট’লে পড়ে যাই এই আমি এখনি, এখানে এই সুন্দর রেলিঙ থেকে নিচে, এই উথালপাতাল বাতাসভরা সন্ধ্যায়, পায়ে মাড়ানো ধুলোট পেভমেন্টে খুব ক্ষতি হবে কি কোথাও কারো! আমার বদলে না হয় তুমি-ই ঝাঁপিয়ে পড়লে ফুটপাথে লোকে বলবে একই কথা- এবং তা’ যদি বলে ভুল হবে না মোটেই সবচেয়ে ভালো সময় এখনই! মঈন! এখনি! এই উথালপাতাল বাতাস-ভরা সন্ধ্যায় এই বারান্দায় অনেক অনেক রাত দাঁড়িয়ে থেকেছি আমরা দু’জন মাথায় শিশির নিয়ে মাঘের ঠা-ায় অনেক অনেক রাত মুখ রেখেছি হাওয়ায় আর সেই হাওয়া- ধরা যাক- অনেক গোলাপ বাগান এবং সজল পুকুর পার হয়ে এসে এই গ্রহের ওপর থেকে আশীর্বাদের মতন প্রবাহিত হতে চেয়ে আমাদের মুখের আঘাতে থমকে, আহত হ’যে, অন্যরকম মাংসল গন্ধ নিয়ে এলোমেলো, উল্টোপাল্টা হ’য়ে গেছে মনে আছে তুমি একবার বিয়ের আসর থেকে একটি গোলাপ তুলে নিয়ে হাতে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হাতের তালুতে- হ্যাঁ, তোমার হাতের তালুতে বেচারা গোলাপ মরা একটা পাখির মতো কুঁকড়ে এ্যাত্তোটুকুন হ’য়ে গেল তোমার ত্বকের তাপ সহ্য ক’রতে পারেনি ঐ নিটোল পুষ্পখ- বুঝেছ মঈন? বুঝতে পারছ? তোমার বদলে অন্য কেউ হ’লে এমনটাই হ’তো, অন্যরকম হ’তো না কিছুতে, কিছুতেই... আমি একবার খাঁচাসুদ্ধ একটি সবুজ টিয়ে কিনে এনেছিলাম, সেটা বারান্দায়- হ্যাঁ, এই বারান্দা থেকে ঝুলতো বাতাসে দুলতো একটু একটু পোষ মানছিল, গানও গাইছিল অনেক ছোলা সে খেয়েছে আমার হাতে অনেক অনেক ঘটি পানি অসংখ্য, অঢেল বুলি তাকে শিখিয়েছি আমি নিজে আমি, মঈন! হ্যাঁ, আমি এক প্রবল বৃষ্টির রাত্রে তাকে ঘুরে তুলে আনতে পারি না, মনেই পড়ে নি, সামান্য একটু ভুল সহ্য ক’রতে পারে নি ঐ নিটোল একফোঁটা ডানা-অলা প্রাণী! বুঝেছ মঈন? বুঝতে পারছ? আমার বদলে ভুল অন্য কারো হ’লে এমনটাই হ’তো, অন্যরকম হ’তো না কিছুতে, কিছুতেই... এখন বাতাস-ভরা এই উথালপাতাল উজ্জ্বল সন্ধ্যায় এই ঠা-া বারান্দায় হঠাৎ তোমার মনে হ’লো ‘ভূগর্ভে, শিলার স্তরে, ধ্বংসস্তূপের তলায় মানুষের মহৎ মৃত্যুর পর মহত্তর অস্ত্রগুলো থেকে যায়, অসংখ্য গোলাপকুঞ্জ ঝলসে গেল- কোথাও সুগন্ধ কোনো লীন হ’য়ে নেই; আমাদের অন্যমনস্কতা টের পেয়ে অন্তত একটি টিয়ে বারান্দার কঠিন মেঝেয় ট’লে পড়ে গেছে, তার সবুজাভা এই চরাচলে কখনো দেখি না কিন্তু অর্থশাস্ত্র-বিষয়ক কৌটিল্যের চিন্তাগুলো বুড়ো বটের মতো প্রায় অবিনশ্বর হ’য়ে আছে।’ এইসব কথা আমারও, মঈন, মনে হ’লো- এসো, আমরা দু’জন একসঙ্গে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি কোনো এক গ্রীষ্মের জোনাক-জ্বলা রাত্রে, চমৎকার হাওয়ায়! কিন্তু তার আগে এই সভ্যতার সকল ধীমান প্রতিনিধিবৃন্দ যদি হঠাৎ বাষ্পের মতো উবে যান তবেই গোলাপ, টিয়ে এবং তাদের আত্মীয়স্বজন ঢের বেশি উপকার পাবে!
×