ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রানা প্লাজা দিবস স্মরণে বটতলার সাংস্কৃতিক সমাবেশ

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রানা প্লাজা দিবস স্মরণে বটতলার সাংস্কৃতিক সমাবেশ

রানা প্লাজা দিবস স্মরণে নাট্যদল বটতলার সাংস্কৃতিক সমাবেশে প্রদর্শিত আলোকচিত্র

সময়টা ছিল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। ভয়ংকর এক দুর্ঘটনা ঘটে সাভারের রানা প্লাজায়। সেদিন সকালে ধসে পড়ে বহুতল ভবনটি। আর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া সেই ভবনধসে নিমিষে নিভে যায় হাজারো প্রাণপ্রদীপ। প্রাণ হারায় পোশাক কারখানায় কর্মরত কর্মীসহ ১১৭৫ জন শ্রমিক। আহত হন দুই হাজারের বেশি মানুষ।

বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম সেই শিল্প দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণ করা হলো বুধবার। বহুমাত্রিক শিল্পিত উপস্থাপনায় সজ্জিত ‘কারখানা কেন বন্দিশিবির’ শীর্ষক এ সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করে নাট্যদল বটতলা। কথনের সঙ্গে ছিল বিভিন্ন নাট্যদল পরিবেশিত পথনাটকের পরিবেশনা, কবিতাপাঠ এবং ওই দুর্ঘটনার সাক্ষ্যবহ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সংগীত পরিবেশনা।

এসব পরিবেশনার মাধ্যমে দেশের কারখানায় বারংবার ঘটে যাওয়া কাঠামোগত হত্যাকা- সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির সমান্তরালে শ্রমিকের অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। গান-নাটকসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী পরিবেশনায় অংশ নেয় বটতলা, প্রাচ্যনাট, অপেরা নাটকের দল, নব আনন্দ, নাটনন্দন, সমগীত, থিয়েটার ৫২, মাভৈ, শায়ান, মেহেদী হাসান আকাশ এবং বটতলার সুহৃদ শিল্পী সংগঠন ও বন্ধুরা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত দশটা অবধি লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি কলোনী মাঠে দিবসনির্ভর আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়। 
এক মিনিটের নীরবতা পালনের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত কথনে অংশ নেন বটতলার দুই নাট্যশিল্পী সামিনা লুৎফা নিত্রা ও শেঁউতি শাগুফতা। তারা বলেন, নাটকের মাধ্যমে বটতলা সবসময় মানুষের এবং সর্বপ্রাণের অধিকারের কথা বলে। মঞ্চে কিংবা পথে সর্বজনের সপক্ষে এই সক্রিয়তা অব্যাহত থাকবে।

শিল্পচর্চার মাধ্যমে রানা প্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টস, তুবা কিংবা যে কোনো কারখানায় সংঘটিত কাঠামোগত হত্যাকা- সম্পর্কে সচেতনতার বারতা দেবে বটতলা। শিল্পের আশ্রয়ে আমরা শ্রমিকের অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তার দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই। অবহেলাজনিত এসব হত্যাকা-কে ভুলিয়ে দেওয়ার নানান চক্রান্ত রুখে দিতে সোচ্চার বটতলা। সেই প্রেক্ষাপটে বটতলা প্রতিবছর ২৪ এপ্রিল এই সাংস্কৃতিক সমাবেশ আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কথন শেষে পরিবেশিত হয় বটতলার নাটক ‘জতুগৃহ’। ২০১২ সালে তাজরীন গার্মেন্টসে সংঘটিত অগ্নিকা-ে নিহত হয় শতাধিক পোশাক শ্রমিক। সেই নির্মম ট্র্যাজেটি অবলম্বনে নির্মিত সামিনা লুৎফা নিত্রা রচিত প্রতিবাদী প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ হায়দার আলী। নাটকটির ঘটনাপ্রবাহে রয়েছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অনাচারের প্রতিবাদ। আধঘণ্টার এ নাটকের পর শিশুনাট্যদল নবআনন্দ আসে কবিতা নিয়ে। প্রাচ্যনাট পরিবেশন করে ‘সুঁই-সুতা’ শীর্ষক নাটক।

নাট্যদল অপেরা পরিবেশন করে ‘পাখির ভবিষ্যৎ’ এবং নাটনন্দন পরিবেশন করে ‘মৃত্যু দুয়ার খোলা’ শিরোনামের নাটক। কবিতা আবৃত্তি করেন মেহেদী হাসান আকাশ, পঙ্কজ মজুমদার ও শেঁউতি শাগুফতা। সংগীত পরিবেশন করে সমগীতের শিল্পীরা। 
এ ছাড়া আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ, অয়ন রেহাল, শুভ দাস ও তাসলিমা আখতারের ক্যামেরাবন্দি ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রদর্শনীর ছবিগুলো যেন স্মরণ করিয়ে দিয়েছে রানা প্লাজার নিচে চাপা পড়া প্রতিটি মানুষের ছিল ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার ও সম্পর্ক।

×