ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেসমিনের হাতে মালা দেখে গলা বাড়িয়ে দেন বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৭ আগস্ট ২০১৬

জেসমিনের হাতে মালা দেখে গলা বাড়িয়ে  দেন বঙ্গবন্ধু

সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও দিনাজপুর সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জেসমিন আরার কাছে আজও অমলিন রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কয়েক মুহূর্ত কাটানোর সেই সুখময় স্মৃতি। ১০ বছরের শিশু জেসমিন সে সময় পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে দেশজুড়ে ঝটিকা সফরে বের হয়েছিলেন। সফরের এক পর্যায়ে এসেছিলেন দিনাজপুরে। ইতিহাসখ্যাত রামসাগর ডাকবাংলোয় থেকেও ছিলেন একরাত। বঙ্গবন্ধু যেদিন দিনাজপুরে আসেন তার পরদিন সকাল ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ বিমানবন্দরের উদ্দেশে সড়ক পথে রওনা হন। বর্তমান হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের স্থানটি তখন বাঁশেরহাট রিফিউজিপাড়া হিসেবে পরিচিত ছিল। এই স্থানটিতে কর্ণাই সাহাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০-৬০ ক্ষুদে শিক্ষার্থী দাঁড়িয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের দেখে বঙ্গবন্ধু তার গাড়ির বহর থামিয়ে দিলেন। শিশুদের মধ্যে একজনের হাতে ছিল ফুলের মালা। শিশুটি গাড়ির দিকে মালা হাতে এগিয়ে এলে বঙ্গবন্ধু মাথা বের করে দেন। শিশুটি দু’পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে মালা পরিয়ে দিল তাঁর গলায়। বঙ্গবন্ধু শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘ভাল ভাল, তুমি খুব ভাল, তুমি ভাল থেকো। আমি তোমার জন্য দোয়া করছি, যেন তুমি সারা জীবন ভাল থাকো’। সেদিনের সেই ছোট্ট শিশু হলেন জেসমিন আরা। নিজের বাড়িতে লাগানো গোলাপ, জবাফুল আর বাড়ির সামনের পুকুর থেকে তোলা শাপলা ফুল দিয়ে নিজের হাতে তৈরি মালা ছোট্ট বয়সে বঙ্গবন্ধুকে পরানোর সেই স্মৃতি এখনও আনন্দ দেয় তাকে। তিনি মনে করেন, তার জীবনে এটা সবচেয়ে বড় পাওয়া, যা কারও ভাগ্যে আর কখনও জুটবে না। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ফুল দেয়ার ঘটনা আজও আমাকে নাড়া দেয়, আবেগে আপ্লুত করে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে, আমি আবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতাম, আবার তাঁর দোয়া চাইতাম।’ চেহেলগাজী ইউনিয়নাধীন কর্ণাই হাজীপাড়া গ্রামে ১৯৬০ সালে জন্ম হয়েছিল জেসমিন আরার। জসিম উদ্দিন ম-ল ছিলেন চেহেলগাজী ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট। বড় ভাই আমজাদ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের পর দুই বার জাতীয় সংসদ সদস্য র্নিবাচিত হয়েছেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বঙ্গবন্ধু যখন দিনাজপুরে আসেন, ভাই আমজাদ হোসেন তখন ছিলেন ছাত্রনেতা। জেসমিন জানালেন, আমজাদ ভাই আগের দিন আমাকে বলে দিয়েছিল যে বঙ্গবন্ধু কাল এ পথ দিয়ে যাবেন। বঙ্গবন্ধু তখন বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। জাতির আশা-আকাক্সক্ষার মুক্তির প্রতীক, সংগ্রামের উজ্জ্বল নক্ষত্র তখন তিনি। এ রকম এক মহান ব্যক্তিকে মালা পরাতে পেরে আমি ও আমার সঙ্গীরা তখন উৎফুল্ল। ছোট জেসমিন বড় না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ১৯৭৪ সালে চাঁদগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী থাকা অবস্থায় বিয়ে হয় নশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক আব্বাস আলী শাহ্র সঙ্গে। বিয়ের খবর পেয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের মাধ্যমে জেসমিন আরাকে একজোড়া সোনার বালা উপহার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সেই বালা এখন নেই। স্বামীর চাকরির কারণে ১৯৯১ সালে ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বালাসহ সমস্ত অলঙ্কার ডাকাতরা লুট করে নিয়ে যায়। ২০০৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিচয় হয় জেসমিন আরার। মহিলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হিসেবে জেসমিন দিনাজপুর সার্কিট হাউসে দেখা করেন সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। শেখ হাসিনাও জেসমিন আরার ছোট বোন ঝর্ণার বিয়েতে টিভি উপহার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সেই স্মৃতি আজও লালন করেন জেসমিন। এখনও মাথায় অনুভব করেন বঙ্গবন্ধুর মমতা মাখানো সেই হাতের ছোঁয়া। Ñসাজেদুর রহমান শিলু দিনাজপুর থেকে
×