ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

তাসনুভা চৌধুরী

স্পর্শীর বন্ধু

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৬ জুলাই ২০১৬

স্পর্শীর বন্ধু

জানালার পাশে টেবিলে বসে পড়ছিল স্পর্শী। এমন সময় হঠাৎ চারপাশ ভ্যাপসা হয়ে এলো সামান্য সময়ের জন্য। তারপর পাওয়া গেল মাটির তীব্র ঘ্রাণ। চমৎকার সে ঘ্রাণ মগজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অন্য রকম আনন্দ জাগায় মনে। এরপর নামল ঝুম বৃষ্টি। বরাবরের মতো সে বৃষ্টির ডাকে সাড়া দিয়ে সাত পাঁচ না ভেবেই চলে গেল ভিজতে। মায়ের ডাক কানে এলো। তবু স্পর্শী নির্বিকার। সে বৃষ্টিতে হুটোপুটি করেই চলেছে। বৃষ্টি নূপুর বাজছে আর তার তালে নাচছে এক কিশোরী। এই দুরন্ত মেয়েকে নিয়ে ওর মায়ের চিন্তার শেষ নেই। সারা দিন ছুটোছুটি, ঝাঁপাঝাপি করেই চলেছে। আজ এখানে, কাল সেখানে। মফস্বল এই শহরটার একটা নিরিবিলি জায়গায় থেকেও এই মেয়ের দস্যিপনা সামলাতে তাকে মাঝে মাঝে হিমশিম খেতে হয়। মেয়ে চঞ্চল বটে, তবে বুদ্ধিমতী। পড়াশোনাতেও মোটামুটি ভাল বলা চলে। বৃষ্টিতে একদম কাকভেজা হয়ে ভিজলে তবেই স্পর্শীর শান্তি হয়। ভেজা শেষে জবজবে হয়ে বাসায় ফিরে এলো। ঢুকে দরজাটা বন্ধ করার পর তার চোখ আটকে গেল মেঝের এক কোনায়। একি! এটা তো আস্ত একটা ব্যাঙ। মনে মনে বলল সে, এই রে! ব্যাঙটাকে মা দেখে ফেললে আর রক্ষে থাকবে না। কিন্তু এটাকে তো এখনই আমি বিদায় করতে চাই না। সুতরাং, এটাকে আড়াল করতে হবে। লুকিয়ে রাখতে হবে। ‘যেই ভাবা সেই কাজ লুকিয়ে রাখবার জন্য তো আগে ওটাকে ধরা চাই। তাড়াতাড়ি একটা ঝুড়ি এনে উপুড় করে ছুড়ে ছুড়ে ব্যাঙটাকে ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু যতবারই ধরতে যায় ততবারই ব্যাংটা লাফিয়ে সরে যায়। নাহ! হচ্ছে না। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। আকস্মিকভাবে ঝুড়িটার এক কোনায় এবার ব্যাঙটা চাপা পড়ে গেল। এটা দেখে স্পর্শী একটু থতমত খেয়ে গেল। তার খারাপ লাগছিল। কারণ সে তো ব্যাঙটাকে আঘাত করতে চায়নি। নিচু হয়ে কাছে গিয়ে ব্যাঙটার দিকে সে দেখতে লাগল কোন জখম বা ক্ষতি হয়েছে কিনা। ঠিক তক্ষুণি তাকে চমকে দিয়ে ব্যাঙটা কথা বলে উঠল, ‘আমাকে আঘাত কর না। আঘাত কর না। আমায় যেতে দাও। ছেড়ে দাও। তোমাদের বাসার দরজাটা খোলা ছিল, আমি তাই লাফাতে লাফাতে অন্যমনস্ক হয়ে ঢুকে পড়েছি। আমি চলে যাব।’ ব্যাঙটাকে মানুষের মতো কথা বলতে দেখে কিছুটা আবাক হলেও একটু পরেই স্বাভাবিক হয়ে উঠল। কিন্তু ব্যাঙের কথা শুনে তার মনে আসল সত্যিই সে দরজাটা লাগায়নি। ভাগ্য ভাল মা দেখেনি। তা না হলে আজ রক্ষে থাকত না। তারপর সে ব্যঙটার সঙ্গে কথা বলল। স্পর্শী বলল, ‘তোমাকে আমি ব্যথা দিতে চাইনি। শুধু তোমার সঙ্গে একটু খেলব। আমি তোমাকে ব্যথা দেব না। আমি তোমার বন্ধু হব। আমার সঙ্গে একটু যাবে? আমার ঘরে?‘ ব্যাঙ বলল, ‘এজন্য আমাকে ধরতে চাইছিলে? ঠিক আছে। যাব। আর আমি জানি তুমি খুব ভাল। আমার ব্যথা লেগেছে কিনা দেখার জন্য তুমি তখন যতটা চিন্তায় পরে গিয়েছিলে। ভয় পেয়েছিলে, কষ্ট পেয়েছিলে, তাই দেখেই বুঝেছি তুমি খুব ভাল।’ আরও বলল, ‘তুমি খুব ভাল বলেই তোমার সঙ্গে কথা বলছি।’ তারপর স্পর্শী হাতে করে ব্যাঙটাকে ওর ঘরে নিয়ে গেল। দুজন খেলা করল। তারপর ব্যাঙটা যাবার সময় বলে গেল যে সে মাঝে মাঝেই অবসরে খেলা করতে আসবে স্পর্শীর সঙ্গে। যেহেতু ব্যাঙ তা স্পর্শীর বাসার পাশের ডোবা তেই থাকত, তাই এরপর থেকে স্পর্শী তার অবসর সময়ে সহজেই ব্যাঙটাকে ডেকে নিত। এর ফলে তার ছোটাছুটি কমে গেল। ওকে নিয়ে ওর মা ও বেশ স্বস্তিতে বোধ করলেন। মেয়ে এখন আর বেশি দস্যিপনা করে না। বরং নিজের ঘরেই থাকে। বর্ষা যখন প্রায় শেষের পথে তখন একতিন ব্যাঙ স্পর্শীকে জানাল সে এই ডোবা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে সে জানায় বর্ষার পর পানি কমে যায়। আর তখন লোকজন তাতে ময়লা ফেলে। আর সেই দূষিত পানিতে তারা বাঁচতে পারবে না। আর তাই সে পরিবারসহ চলে যাচ্ছে। তবে পরে যখনই বৃষ্টি হবে সুযোগ পেলে সে স্পর্শীকে দেখতে আসবে। স্পর্শীর মন খারাপ হয়ে গেল। সে ভাবতে লাগল কিভাবে সমস্যাটার সমাধান করা যায়। বাবার সঙ্গে আলোচনা করল। তারপর বাবা এবং এলাকার কিছু বন্ধুর সাহায্যে তারা তাদের এলাকার ডোবাটি দূষণমুক্ত করল এবং গভীরতা বাড়াল। এভাবে তার ডোবাটির প্রাণ ফিরিয়ে আনে। আর কেউ যেন ডোবায় ময়লা না ফেলে সবার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করল। তারপর স্পর্শী অপেক্ষা করতে থাকল ঝুম বৃষ্টি নামার। কিছু দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হলো। কথামতো ব্যাঙ এলো। আর স্পর্শী তার বন্ধুকে উপহার দিল একটা স্বাস্থ্যকর বাসস্থান এবং সেটা বাসার কাছে। তারপর থেকে ব্যাঙটা স্পর্শীদের বাসার পাশের ডেবাতেই থাকত। আর স্পর্শীর সঙ্গে খেলা করত। এবং স্পর্শীর ও দুষ্টুমি কমিয়ে দিয়েছে। তাই তার মা ভীষণ খুশি। তবে এখনও মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ স্পর্শী বৃষ্টিতে ভেজে। কিন্তু মা আর আগের মতন বকা দেন না। কারণ সে এখন লক্ষ্মী মেয়ে। রাজশাহী সরকারী মহিলা কলেজ দ্বাদশ শ্রেণী, বিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী
×