ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিনাশর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ এপ্রিল ২০১৬

বিনাশর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বিনাশর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) পুঁজিবাজার ও আবাসনসহ দেশের সব সেক্টরে সমানভাবে বিনিয়োগের সুযোগ চান ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে এই টাকা ব্যবহারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারী প্রতিষ্ঠাগুলো যাতে তাদের টাকার কোন উৎস অনুসন্ধান না করে সে ব্যবস্থা রাখার দাবি তাদের। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন ব্যবসায়ীদের এ দাবি মানলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার কম হবে। দেশে বাড়বে বিনিয়োগ। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। আর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এর ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে দেশের পুঁজিবাজার। অর্থসঙ্কটে থাকা পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ লোক বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। বর্তমানে সারাদেশে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি কালো টাকা অর্থনীতির বাইরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া উচিত বলে মত বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রাকবাজেট অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগ স্থবির রয়েছে। দেশের টাকা বিদেশে বিভিন্ন উপায়ে পাচার হচ্ছে। পাচার হওয়া অর্থ দেশেই রাখতে হলে দেশে বেনামি সম্পত্তি ও অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে। এর জন্য সুযোগ দিয়ে বিনিয়োগে না এলে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দেবপ্রিয় বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে দেশে কর দেয়ার মতো যোগ্য লোকের অর্ধেকেরও কম লোকে কর দেয়। বাকিরা কর দিচ্ছে না। এদের কীভাবে করের আওতায় আনা যায়, তা সরকারকে ভাবতে হবে। যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নতুন কর বেষ্টনীর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সবাইকে এর আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে দরকার নতুন ফান্ড। কিন্তু টানা পাঁচ বছর পুঁজিবাজারের মন্দায় বেশির ভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ইনভেস্টর হাত গুটিয়ে রেখেছেন। এজন্য দিন দিন পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, বাজারে নতুন ফান্ড বাড়াতে বিনাশর্তে কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুবিধা দেয়ার জন্য আমরা বাজেট আলোচনায় প্রস্তাব রাখব। যদি এ সময়ে কেউ বিনিয়োগ নাও করেন তারপরও পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে কালো টাকার উৎস দুদক ও এনবিআরকে না দেয়ার অনুরোধ করছি। একই কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছাইদুর রহমান। তিনি বলেন, আসছে বাজেট প্রস্তাবনায় বিনাশর্তে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার জন্য এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআইকে প্রস্তব দিয়েছি। আশা করছি সরকার এ প্রস্তাব মানবে। এ বিষয়ে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশের মাত্র ২০ লাখ মানুষ সরকারকে আয়কর দেন। দেশের টাকা বিদেশের চলে যাচ্ছে। বিশাল এই অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখলে দেশ বাঁচবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। তাই দেশের স্বার্থে বিনাশর্তে বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে এই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। এদিকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) পক্ষ থেকেও আগামী বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখার পক্ষে এনবিআরকে প্রস্তাবনা দেবেন বলে জানিয়েছে সংগঠনের সহসভাপতি আতিক-ই রাব্বারী। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সহসভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা থাকলে তা শুধু শিল্প খাতে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকা উচিত। ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মোট করের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত জরিমানা দিলে যে কোন সময় অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ বা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত ও অবৈধ আয় বৈধ করা হয়। অর্থাৎ, ওই অর্থের হিসাব দেশের অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ে ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরে সাদা হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।
×