ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

একুশের চেতনায় বইয়ের পৃথক সম্ভার ॥ মাদারীপুর

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

একুশের চেতনায় বইয়ের পৃথক সম্ভার ॥ মাদারীপুর

মাদারীপুরে লাইব্রেরি বা পাঠাগারের ইতিহাস অল্প দিনের নয়। ১৯৩৬ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে জেলার কোথাও না কোথাও পাঠাগার স্থাপিত হয়েছে। এ সকল পাঠাগারে বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকা-ও পরিচালিত হয়ে থাকে। মাদারীপুরে প্রথম সাহেবরামপুর পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপিত হয় ১৯৩৬ সালে। কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর বাজারসংলগ্ন এলাকায় পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও তৎকালীন ফ্রি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল হামিদ মাস্টার। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরে একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দুই শতাধিক বই সংযোজন করা হয়েছে। বই ও পত্র-পত্রিকা পড়া ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবস লাইব্রেরির পক্ষ থেকে পালন করা হয়। এটি জেলার প্রাচীনতম লাইব্রেরি। পঞ্চাশের দশকে মাদারীপুরে ভাষা আন্দোলন কেন্দ্রিক ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্লাবের নিজস্ব লাইব্রেরি বা পাঠাগার ছিল। তৎকালীন ছাত্রনেতা এবং ’৫২ এর মাদারীপুর ভাষা আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ভাষাসৈনিক এটিএম নূরুল হক খান এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে ১৯৫০ সালে শহরে ‘দারুল আমান বয়েজ ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ ক্লাবের লাইব্রেরি ছিল, যেখানে ছাত্রছাত্রী ছাড়াও স্থানীয় অভিভাবকরা বই ও পত্র-পত্রিকা পড়তেন। এ ছাড়া ক্লাবের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি বই সরবরাহ করা হতো। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় পুলিশ একাধিকবার হামলা চালিয়ে তছনছ করে দেয় পাঠাগারটি। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির কর্মকা- চলমান ছিল। পরবর্তীতে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে ক্লাবসহ পাঠাগারটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। জেলার সর্ববৃহৎ পাঠাগার হচ্ছে এমএম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯৭৮ সালে শহরের কুলপদ্মী এলাকায় আদর্শ দিশারী পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মহসিনউদ্দিন খান ও স্থানীয় সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ। ১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির শাসনামলে পাঠাগারটি ভাংচুর হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপির কর্মীরা পাঠাগারটি উচ্ছেদ করে দেয়। ফলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে কোনমতে টিকে আছে। একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই কম থাকলেও সবই ছিল প্রগতিশীল লেখকদের বই। ১৯৮৪ সালে শিবচর পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলা পরিষদের ঘরে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও বর্তমানে তা ঢিমেতালে চলছে। ২০০৫ সালে বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শেখপুর বাজারে ‘বেগম রাবেয়া গণগ্রন্থাগার’ গড়ে ওঠে। মূল উদ্যোক্তা শাহ আলম মিয়া, নান্নু কাজী, সেলিম আজাদ, হুমায়ুন কবির, খলিলুর রহমান, শাহীন আহমেদ ও রোকনুজ্জামান প্রমুখের প্রচেষ্টায় এটি গড়ে ওঠে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন ও বাজিতপুর হাজেরা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল বাশার মিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় পাঠাগারটি চলছে। এখানে দুই সহ¯্রাধিক বইয়ের মধ্যে সাড়ে তিন শ’ বই একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ভিত্তিক। ২০০৭ সালে পাঠাগারের উদ্যোগে বাঁশকান্দি ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর কৃতী ছাত্রছাত্রী সংবর্ধনা, অন্বেষণ নামে স্মরণিকা প্রকাশ, একুশ ও স্বাধীনতার বিষয়ভিত্তিক কবিতা আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় পাঠাগারের পক্ষ থেকে। ভাষা আন্দোলনের পরে ‘লহরি’ নামে সাহিত্য সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে ৬০-এর দশকে। একুশের চেতনায় ‘লহরি’র পক্ষ থেকে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সফল হতে পারেননি তারা। Ñসুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×