ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

টুকরো হচ্ছে জমিজমা বাড়ছে বিরোধ মামলা-মোকদ্দমা

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

টুকরো হচ্ছে জমিজমা বাড়ছে বিরোধ মামলা-মোকদ্দমা

নদীর তীর ভাঙ্গার মতোই একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। এটি সময়ের অনিবার্য পরিণতি হলেও এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিশেষ করে দক্ষিণ উপকূলে ভূমি ব্যবস্থায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আস্ত জমি খ--বিখ-ের পাশাপাশি এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা থেকে শুরু করে লাঠালাঠি-মারামারি ও সামাজিক বিচার-সালিশ পর্যন্ত গড়াচ্ছে। প্রবীণদের বুক ভাঙ্গা দুঃখ আর গভীর হা-হুতাশের মাঝে চোখের সামনে ভেঙ্গে পড়ছে বিশাল টিনের ঘর। ভাগ হচ্ছে উঠান। জমিজমা। কাটা পড়ছে গাছপালা। ভাগ হয়ে যাচ্ছে পুকুর। গরু-মোষ থেকে শুরু করে হাঁস-মোরগ পর্যন্ত। চার-পাঁচ দশক আগেও বরিশালের দক্ষিণ উপকূল অঞ্চলে একান্নবর্তী পরিবারের ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রায় প্রত্যেকটি গাঁয়ে এমন দু’ চারজনের দেখা মিলেছে, যারা একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে অন্য রকমের গৌরব বোধ করতেন। কার বাড়িতে দুপুর কিংবা রাতের আহারে কত থালা পড়েছে, এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়েছে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তা ইতিহাসে রূপ নিয়েছে। উপরন্তু একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে ভূমি ব্যবস্থায় রীতিমতো ধস নেমেছে। কয়েকটি একান্নবর্তী পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক সময়ের সম্ভ্রান্তদের পরবর্তী প্রজন্মের দিন কাটছে করুণ অবস্থায়। সাগরপাড়ের জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাজীকান্দা গ্রামের এক সময়ের সম্ভ্রান্ত পরিবার প্রধান ছিলেন আজু হাওলাদার। সম্পদ বিবেচনায় এলাকায় ছিলেন প্রভুত পরিচিত। শত বিঘা জমির মালিক আজু হাওলাদারের ছিল পুকুর ভরা মাছ। ছিল টিনের ঘর। গরু-মোষ ছিল অগুণতি। তার মৃত্যুর পর ভেঙ্গে পড়ে যৌথ পরিবার। স্ত্রী ও আট সন্তানের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায়। পরবর্তী নাতি-পুতিদের মধ্যে জমিজমা আরেক দফা ভাগ হয়। শেষ দফার ভাগে কেউ কেউ মাত্র কয়েক শতক জমি পেয়েছে। এর পরের প্রজন্মের কারও কারও ভাগে যে আদৌ জমি মিলবে না, তা অনেকটা নিশ্চিত। আর তাই এ নিয়ে রক্ত সম্পর্কীয়দের মধ্যে চলছে আগাম বিরোধ। একই অবস্থা দেখা গেছে, গলাচিপার চরআগস্তির একটি পরিবারে। মাত্র দু’ দশক আগেও যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থার কল্যাণে এবং প্রচুর জমিজমার কারণে এলাকায় পরিবার প্রধানের ছিল ব্যাপক আধিপত্য। কিন্তু পরিবার প্রধানের মৃত্যুর বছর খানেকের মধ্যে সন্তানরা একক পরিবার ব্যবস্থা গড়ে তোলে। কেউ কেউ শহরে পাড়ি জমায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। বর্তমানে জমিজমার ভাগ বণ্টন নিয়ে পরিবারের সদস্যদের ঝগড়া বিবাদ এতটাই প্রকট আকার নিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়িয়েছে। এখন পরবর্তী প্রজন্মের বছরের বেশির ভাগ দিন কাটে আদালতের বারান্দায়। যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া সম্পর্কে কয়েকজন প্রবীণ গভীর দুঃখ নিয়ে জানান, সেসব দিন সত্যিকার অর্থে ভাল ছিল। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেকার সৌহার্দ অনেক চড়াই উতরাই পার হতে সহায়ক হয়েছে। মিষ্টি মধুর হাসি মাখা সেসব দিন হারিয়ে যাওয়ায় যতটা না কষ্ট, তারচেয়ে তীব্র বেদনা হয়, বাপ-দাদার সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাওয়ায়। জমিজমা ভাগবণ্টন সম্পর্কে অভিজ্ঞ কয়েকজন জানান, দক্ষিণ উপকূলভাগের বেশির ভাগ মানুষ এখনও কৃষি নির্ভর। কৃষি জমি এখানকার মানুষের জীয়নকাঠি। কিন্তু যেসব কারণে এ অঞ্চলে চাষযোগ্য জমি ক্রমে কমে যাচ্ছে, তার অন্যতম হচ্ছে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া। Ñশংকর লাল দাশ গলাচিপা থেকে
×