ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবরোধ প্রত্যাহারের পর

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

অবরোধ প্রত্যাহারের পর

একদিকে অবরোধমুক্তি তথা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও অন্যদিকে নতুন করে আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পরমাণু শক্তি হ্রাস ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ইরান তার প্রতিশ্রুতি পালন করেছে, জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে একথা বলার পর দেশটির বিরুদ্ধে এক যুগব্যাপী চলা অর্থনৈতিক অবরোধ উঠে গেছে ১৬ জানুয়ারি। এতে আশ্বাস মিলেছে যে, অর্থনৈতিক বিকাশের সম্পূর্ণ সুযোগ পাচ্ছে ইরান। আর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পেল ইরানের দিক থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার। ইরান আবার বিশ্ব বাজারে তেল রফতানি করতে সক্ষম হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে ৬ মাস আগে সম্পাদিত পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির শর্ত পূরণ করার পরপরই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের একদিকে যখন যুদ্ধ; তখন অন্যদিকে শান্তির এই বিজয় বিশ্বকে নিরাপদ করার ক্ষেত্র কিছুটা হলেও তৈরি করল। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ায় যে সার্বজনীন দাবি, ইরানের অনুকরণে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হওয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর পাঁচ মার্কিনীকে ইরানী কারাগার থেকে এবং মার্কিন কারাগার থেকে ৭ ইরানীকে মুক্তি শেষে বন্দী বিনিময় করা হয়। এই বন্দী বিনিময় এবং আইএইএর রিপোর্ট ইরানের ওপর থেকে আমেরিকা ও এর মিত্রদের পরমাণু সম্পর্কিত সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পথ সুগম করে। গত বছরের জুলাই মাসে ইরানের সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি হয়। সে সময় কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, ইরান তার প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হবে। যারা ইরানের সঙ্গে বিশ্বের শান্তিকামী দেশগুলোর টানাপোড়েন বহাল রাখতে চায়, তারা চাইছিলেন যে ইরান ব্যর্থ হোক। অপরদিকে যারা পশ্চিমা দেশগুলোর আন্তরিকতা বিষয়ে সন্দিহান থাকেন এবং এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি, তারা বলেছিলেন যে, পশ্চিমারা একটা অজুহাত খাড়া করে ইরানের ওপর চড়াও হবে। অদ্যাবধি কোন পক্ষের আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়নি। ইরান তার আন্তরিকতা প্রমাণ করেছে এবং পশ্চিমারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেনি। দু’পক্ষই জানে, চুক্তি বাস্তবায়ন উভয়ের জন্যই লাভজনক। ৭ কোটি ৫০ লাখ লোকের তেলসমৃদ্ধ দেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে ফিরে যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংকে আটক ইরানী সম্পদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি ডলার অবিলম্বে তেহরান ফেরত পেতে যাচ্ছে। তবে গত ১৭ জানুয়ারি নয়া নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে ইরান। সাম্প্রতিক এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সূত্র ধরে ইরানের কয়েকটি কোম্পানি ও ব্যক্তির ওপর নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই কর্মসূচীতেও উপকরণ যোগানদার নিষেধাজ্ঞা আরোপিত ১১ কোম্পানি ও ব্যক্তির সঙ্গে মার্কিন কোন ব্যাংককে লেনদেন না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্দী বিনিময় সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়নি। এই ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে একটি প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্র এবং এর পরীক্ষা কোন আন্তর্জাতিক আইনেই নিষিদ্ধ নয়। কোন ক্ষেপণাস্ত্রই পরমাণু ওয়ারহেড বহনের জন্য তৈরি করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা নতুন নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ও নজরদারি করবে। ফলে একদিকে অবরোধ প্রত্যাহার ও অপরদিকে নয়া নিষেধাজ্ঞার যাঁতাকলে পড়ে ইরান যেন অবরুদ্ধ না হয়। বিশ্ব শান্তির জন্য সমঝোতা জরুরী। উভয়পক্ষ সে পথে থাকে এটাই প্রত্যাশা।
×