প্রথম শ্রেণীতেই লেখাপড়ার পাঠ শেষ। বাবার একমাত্র আয়ের পথ ছিল দিনমজুরি। তিন ভাই-বোনকে নিয়ে অভাবের সংসারে ১৫ বছরেই বিয়ে হয় রুবিনার। স্বামী আরেক দিনমজুর মুজিবুর রহমান। বিয়ের পরও চরম দারিদ্র্যতার মুখে দাঁড়াতে হয় রুবিনাকে। কাজের সন্ধানে মঠবাড়িয়া ছেড়ে আশ্রয় নেয় মৎস্য বন্দর মহিপুরে। ১৯৯৯ সালের কথা। নজিবপুর গ্রামে বেড়িবাঁধের বাইরে সরকারী খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘরে শুরু করে বসতি। নামে জীবনযুদ্ধে। কিন্তু রুবিনা শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে ভারি কোন কাজ করতে পারেন না। খাদ্যনালীতে অপারেশন করাতে হয়েছে। তিন ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসার। স্বামীর উপার্জনে অর্ধাহার-অনাহার নিত্যদিনের ঘটনা। তার ওপরে সিডর-আইলার মতো দুর্যোগে পুরো সংসার চিড়েচ্যাপটা হয়ে যায়। ঝুপড়ি ঘরটি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন। আশ্রয় নেন অন্যের বাড়িতে। ভ্যানচালক স্বামীর আয়ে থমকে যাচ্ছিল সংসারের চাকা। ছেলেদের স্কুলের গ-িতে পাঠাতে পারেননি। এ দম্পতি দু’চোখে অন্ধকার দেখছিল। ঠিক এ সময় এক বেসরকারী সংস্থা এগিয়ে আসে পরিবারটির পাশে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রকল্পের আওতায় সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন রুবিনা। ২০১১ সালের কথা। সুবিধা পায় বসতভিটা উঁচুকরার। বাড়ির চারপাশ উঁচু করে দেয়া হয়। মাটি কেটে পুকুর করার সহায়তা দেয়া হয়। ওই পুকুরে মাছের চাষ। পুকরপাড়ে সবজিচাষ। এখন সবজি বিক্রি করেন। মাছ বিক্রি করেন। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি বাড়তি আয়ে এ পরিবারে অনাবিল সুখ-সমৃদ্ধি না এলেও অন্তত তিন বেলা ডাল-ভাত খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। দুই ছেলেকে পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বিমর্ষ, মলিন মুখের রুবির মুখে স্মীত হাসির ঝলকানি এসেছে।
Ñমেজবাহউদ্দিন মাননু
কলাপাড়া থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: