ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একঝাঁক তরুণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

এসো পাখির বন্ধু হই সুন্দর এ পৃথিবীকে বাঁচাই

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

এসো পাখির বন্ধু হই সুন্দর এ পৃথিবীকে বাঁচাই

তাহমিন হক ববি এসো পাখির বন্ধু হই, সুন্দর এ পৃথিবীকে বাঁচাইÑ এই সেøাগান সামনে রেখে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ‘সেতুবন্ধন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সৈয়দপুর উপজেলাসহ প্রত্যন্ত গ্রামে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠনে পাখি রক্ষায় এক ঝাঁক তরুণ নিবেদিতপ্রাণ। এমন বিরল দৃষ্টান্ত সাধারণ মানুষকে অবাক করে দিয়েছে। উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। সরেজমিনে মজার মজার দৃশ্য চোখে পড়ে। এলাকার খিয়ারজুম্মা থেকে খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা বেলপুকুর ও ফাইলেরিয়া হাসপাতাল, প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল, খাদ্যগুদাম, কয়ানিজ পাড়া, মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, থানা চত্বর, খানকা শরীফ এবং পুরো উপজেলা চত্বরে প্রায় প্রতিটি গাছে বেঁধে দেয়া হয়েছে মাটির কলস। যাতে রয়েছে বাসা তৈরির অন্যান্য উপকরণ। চোখে পড়ে গাছে গাছে ‘মুখ মোটা কলসিগুলোর সরু মুখ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে রংবেরঙের পাখি, সড়কের পাশে, গাছে, সাইনবোর্ডে লেখা আছে...‘এসো পাখির বন্ধু হই, সুন্দর এ পৃথিবীকে বাঁচাই।’ এই তরুণরা নিজেদের টাকা খরচ করে এলাকার কয়েক হাজার গাছে তৈরি করেছে পাখিদের কলসি-বাসা। যাতে পাখিরা নিজের অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে পারে। দেখা যায়, ওই সব কলসে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পাখিরা বাসা বানিয়ে ফেলেছে। পরিবেশের ভারসাম্য ও কৃষিতে লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে এই তরুণদের ওই কর্মকা- অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়। ওই এলাকার উদ্যমী তরুণ আলমগীর হোসেন তার বন্ধুদের নিয়ে পাখি নিধন রোধে এবং পাখিদের অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য কর্মতৎপরতা শুরু করেন ২০১৪ সাল থেকে। আলমগীর হোসেন বলেন, পাখিরা না থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া কৃষিতে পাখিদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা ক্ষতিকর পোকা-মাকড় নিধনে ও চাষাবাদে বড় একটা ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও জানান, তার বন্ধু রফিকুল ইসলাম, রাশেদুর জামান রিফাত, রাফি, সিরাজুল, টুইংকেলসহ অনেকে তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন। পাখি সংরক্ষণে এই তরুণ তার সংগঠনের নাম দিয়েছে ‘সেতুবন্ধন।’ সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী বলেন, ওরা পাখি রক্ষার সংগ্রাম করছে। প্রকৃতির জন্য এটি ভাল উদ্যোগ। তাদের কাজের সহযোগিতা ও গাছে বেঁধে দেয়া কলস চুরির হাত থেকে বাঁচাতে এলাকার লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে। যুবকদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। এলাকায় এসব যুবক পাখিপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত। পাখিরা মানুষের জন্য কতটা উপকারী তা এলাকার মানুষকে তারা বোঝান এবং নিয়মিত বৈঠক করেন। তাদের মিলিত প্রচেষ্টায় রক্ষা পাচ্ছে পাখির জীবন। শিশুরা বেড়ে উঠছে শালিক, ঘুঘু, পেঁচা ও শ্যামাসহ নানা রঙের পাখির সঙ্গে পরিচিত হয়ে আর কিচিমিচির ডাক শুনে। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হোমায়রা ম-ল বলেন, উপজেলার বিভিন্নস্থানে পাখি নিধন রোধ, পাখির বংশ বৃদ্ধির ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পাখিবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে ভাল ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
×