শ্বেতকরবী
গোলাম কিবরিয়া পিনু
শ্বাপদসঙ্কুুল বনে থাকবে কীভাবে
ও শ্বেতকরবী?
শ্বেতজবা খুন হয়েছে!
গিরিমল্লিকা নেই!
আম্রশাখা কষ্টে বাঁকা-
নতুন পাতা ঝলসে গেছে
বীজতলা আজ কার পাহারায়?
কৃষ্ণতিথি উপচ্ছায়ায়!
পাতা ঝরার দিন এলো কি?
জীর্ণপাতা। শুকনোপাতা!
কষ্ট নিয়ে রাত কাটাবে মাতৃমাতা?
গাছপোঁতা সুখ আর পাবো না!
আমার মাটি চারণভূমি
মৌলভূমির ডাঙ্গা!
নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি-
নয়তো পাঁজর ভাঙ্গা!
আমার পায়ে ধুলোকাদা
জন্মভূমিতে জীবন বাঁধা।
আমার বনে স্বাপদ কেন?
আমার বনে অগ্নি!
জেগে কি নেই একই রক্তের
-ভাই ও ভগ্নি!
নেই কেন আজ সাড়াশব্দ
ভর করেছে মধ্যযুগের
সেই পুরনো অব্দ?
সূর্যমণি নেই আকাশে!
নিঃশ্বাস নেই নিজ-বাতাসে!
জিয়নকাঠি নেইকো হাতে?
তমসাবৃত রাতে!
আমরা কেন ফসিল হবো
আমরা কেন শিলা!
আমরা কেন আবার হবো
পর-ধনুকের ছিলা!
আমার বনে আমার জলে
আমার সমভূমিতে-
আলোকধারা চন্দ্রপ্রভায়
স্বপ্ন কুসুমিতে।
আমরা হবো অংশুমালা-
আমরা হবো সূর্যজ্বালা মুখ
আমরা হবো অঙ্কুরে উন্মুখ!
জঙ্গলাবৃত থাকতে পারি
থাকবে না কোনো শ্বাপদ;
দূর হয়েছে আগে পরে
থাকবে না কোনো আপদ।
শ্বেতকরবী নিজেও জাগো
জাগাও সপ্তমুখী জবাকে!
আদ্যজ্ঞানে বাদ্য বাজাও
উচ্চকিত হও সবাকে!
নীলবল
শেখ আতাউর রহমান
(চরপধংংড়’ং ইষঁব চবৎরড়ফ)
অকস্মাৎ হাজার হাজার নীলবলে ছেয়ে যায় মেঘমুক্ত সুবিশাল নীলাকাশ
নীল বেলুনের মতো ভেসে আসে নীলবল স্তরে স্তরে অন্তহীন অন্তরীক্ষময়।
এযে এক নীল বিস্ময়!
একি স্বপ্ন ? নাকি বাস্তব? নাকি এ-আমার দু’চোখের বিভ্রম কোনো?
-এইতো আমি বেঁচে আছি বেশ-উর্ধ্বমুখী নীল আকাশের দিকে।
অকস্মাৎ কোথা থেকে উড়ে আসে একঝাঁক দুরন্ত শালিক-
নিমেষে লোপাট হয় সুবিশাল নীলে
বিমূর্ত মূর্ত হয় তিলেতিলে!
তবে কি দেখছি কোনো নীল ব্যাকহোল-নীলগহ্বর?
-মুহূর্তে টেনে নেয় যে সবকিছু দানবীয় নীলে
হ্যাঁ এমনি করেই বিমূর্ত মূর্ত হয় তিলেতিলে!
এই বুঝি সুচারু শিল্পীর মাতালমত্ত ‘নীলবেলা’?
নীল নিয়ে খেলা- সারাক্ষণ সারাবেলা?
‘কাসাজেমাসের কফিন’-এ যার শুরু- পরিণাম নীল নীল নগ্নিকাদের মেলা?
মনে হয় কোটি কোটি আলোকবর্ষ ধরে এ খেলায় ছিলো নাকো এতটুকু অবহেলা !
এবং কোটি কোটি আলোকবর্ষ ধরে উঠেছে ভরে এই নীলরং পেয়ালা !
এমনি করে ওমর খৈয়ামের মতো আমার ক্ষুধার্ত রেটিনায়
ঢেলে দেয় নীলমদ সুবিশাল এক নীলরঙ পাখি
চিত্তহারী চুম্বকে ফেরাতে পারি না চোখ
অপলকে কোটি কোটি নীলবল ধরে রাখি।
হ্যাঁ, এমন করে মত্ত করে আমায় অনিন্দ্য সুন্দরী এক নীলরং সাকী !
পর্ব
জাহিদ হায়দার
পাখি আমার প্রথম পথিক, ভোরবেলা;
কৃষক আমার প্রথম পথিক, শস্যে।
নতুন পথে দুজন মানুষ,
বলার মত তৃষ্ণাবিষয়;
সূর্য ছিল গগনহ্রদে শ্রদ্ধাভাজন।
ছায়ার ধ্বনি যেতে পারে শেষ অবধি।
২১.১২.২০১৫
আঁতুড়ঘর
সুজন হাজারী
যে পথ ধরে উঠে এলে গঞ্জে আরবান শহরে
পেছনে তার পড়ে আছে নাড়ি পোতা আঁতুড়ঘর
উঠোনে ভোর পাখি দোয়েলের হৃদয়কাড়া শিস
সকালে শিশির ধোয়া ধান সবুজের মাঠে বাবার
চটি জুতার মরমী আওয়াজ
স্টেশন রোডে এসে ভ্যান থামে নামতে নামতে
বুড়িয়ে গেলাম ট্রেন ছাড়ার হুইশেল শুনে
বিভূতির গ্রাম্য বালক বালিকা
হাঁপাতে হাঁপাতে পিছু দৌড়ায়।