ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দু’দেশের পরিবেশ মন্ত্রীদের বৈঠকে অঙ্গীকার

সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত একযোগে কাজ করবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত একযোগে কাজ করবে

কাওসার রহমান, প্যারিস থেক্ষে ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় বাংলাদেশ এবং ভারত একযোগ কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। বুধবার প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের পরিবেশ মন্ত্রীদের এক বৈঠকে এ অঙ্গীকার করা হয়। এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও একযোগে কাজ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নরডিক দেশগুলোর সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের। বৈঠকে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে কার্বন নির্গমন কমানোর আন্দোলনে বাংলাদেশকে পাশে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশও অতীতের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বুধবার সকালে সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপিত নজরকাড়া ভারতের প্যাভিলিয়নে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা নিয়ে বৈঠক করেন বাংলাদেশের পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন এবং ভারতের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ জাবেদকার। এ সময় উভয় নেতা সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় এক দেশ অন্য দেশকে বিশেষ সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেন। উভয় নেতা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোব সুন্দরবন হুমকির সম্মুখীন। এটিকে রক্ষা করতে হলে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। সুন্দরবনে বাঘ ছাড়াও বিরল প্রজাতির গাছপালা পশুপাখি ও মাছ রয়েছে। এগুলোকে রক্ষা করতে হবে। একা কোন দেশের পক্ষে এদের রক্ষা করা যাবে না। কারণ পশুপাখি ও মাছ কোন সীমান্ত মানে না। সুন্দরবনের বাঘ নিয়মিত বনের মধ্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিচরণ করে। তাই এদের রক্ষা করতে হলে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। আলোচনায় উভয় নেতা সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ সময় পরিবেশ মন্ত্রীর সঙ্গে পরিবেশ সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সমন্বয়কারী ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। কার্বন প্রশমনে বাংলাদেশকে পাশে চায় ইইউ ॥ বুধবার নরডিক দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করে বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দল। ইইউর ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় সংসদের পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান গিও বানি লাভিয়া এবং নরডিক চার দেশের সংসদীয় গ্রুপের চেয়ারম্যান মিস. ডপয়া ওলসেন ডাইয়া। উভয় বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ। উভয় বৈঠকে ইইউ এবং নরডিক দেশের সাংসদরা বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী। আর বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হচ্ছে অভিযোজন ও অর্থায়ন। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ মিটিগেশন তথা কার্বন প্রশমনের ব্যাপারে কি করছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ সবচেয়ে কম কার্বন নির্গমন করে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বেচ্ছায় কার্বন নির্গমন হ্রারে উদ্যোগ নিয়েছে। ৪০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছি। সরকারের নীতি আছে এ ব্যাপারে। এবং সরকার উৎসাহিত করছে সোলার সিস্টেম বসাতে। তবে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ ইইউকে সাহায্যের হাত আরও প্রসারিত করতে বলেছে। বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় ইইউ আমাদের সাহায্য করছে। সাহায্যের হাত আরও বেশি প্রসারিত করতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘তারা চেয়েছে তাদের সহায়তা আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি। আমরা বলেছি, আমাদের দেশে সেচ ব্যবস্থা আমরা সোলার সিস্টেমে নিয়ে যেতে পারি। এজন্য আমাদের অর্থের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’ এ প্রসঙ্গে গিও বানি লাভিয়া বলেন, ‘ইউরোপ সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কার্বন কমানোর ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও এগিয়ে আছে। কার্বন কমানোর এ আন্দোলনে বাংলাদেশকে আমরা পাশে চাই।’ বৈঠকে ইইউ জানতে চায়, কার্বন কমানোর আন্দোলনে বাংলাদেশের কণ্ঠ ইইউর সঙ্গে থাকবে কিনা। বাংলাদেশ বলেছে, কার্বন কমানোর আন্দোলনে বাংলাদেশ অতীতেও ইইউর সঙ্গে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। অর্থায়নে বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ ইইউ প্রতিনিধি দলকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিদ্যমান ফান্ডগুলো থেকে আমরা অর্থ পাচ্ছি না। এর কারণ জটিল প্রক্রিয়া। গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থ প্রাপ্তিতে জটিল প্রক্রিয়া পরিহার করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে আমরা ইইউ সহায়তা চেয়েছি। প্রযুক্তি হস্তান্তর বিষয়ে বাংলাদেশ বিনা রয়্যালিটিতে ইইউর কাছে প্রযুক্তি চেয়েছে। এ ব্যাপারে ইইউ বলেছে, তোমরা বিনা রয়্যালিটিতে প্রযুক্তি চাও। কিন্তু চীনের অভিজ্ঞতা আমাদের ভাল নয়। আমরা প্রযুক্তি নিয়ে ভীত। দেখা গেছে, প্রযুক্তি দেয়ার পর সেই প্রযুক্তি তাদের হয়ে যায়। তোমাদের দেশে প্রযুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক কি ব্যবস্থা আছে? এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বলেছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই শঙ্কা নেই। কারণ বাংলাদেশ ওয়াইপিও’র সদস্য। ফলে প্রযুক্তি হস্তান্তর ইইউর জন্য নিরাপদ হবে। জলবায়ু সম্মেলন সফল করার জন্য নরডিক দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশী অতীতে স্বল্পোন্নত দেশ, ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছে। এবারও জলবায়ু সম্মেলনকে সফল করতে একযোগে কাজ করবে। ফরেস্টি খাতে একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে নরডিক দেশগুলো। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে চুক্তি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। নরডিক দেশগুলোও বাংলাদেশের বনায়ন রক্ষায় একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
×