
জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে যমুনার তিনটি শাখা নদী প্রবাহিত। এই তিনটি শাখা নদীর ১০টি পয়েন্টে গত পাঁচ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ নদীভাঙন চলছে। ওই তিন নদীর অব্যাহত ভাঙনে ক্রমেই যমুনা গর্ভে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে সাপধরী ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম।
যমুনার মূলস্রোতে নিয়মিত ড্রেজিং ব্যবস্থা চালু রাখাসহ নদীর তীর সংরক্ষণে সাপধরীর ওই শাখা নদীর ভাঙন স্পটগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং এবং বাঁশের পাইলিং করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অথচ নদীর তীর সংরক্ষণ ও গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ মিটিং-মিছিল এবং দফায় দফায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো সাড়া পায়নি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার ছোট্ট তিনটি শাখা নদী। একটি ইসলামপুরের বেলগাছা পয়েন্টে যমুনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়েছে। দ্বিতীয়টি চিনাডুলি ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায় যমুনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে সাপধরীর মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর শাখাটি সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর অংশে যমুনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে সাপধরীর পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ীর দক্ষিণ অঞ্চলে গিয়ে যমুনার মূলস্রোতে মিশে গেছে।
ইসলামপুরের বেলগাছা পয়েন্টে উৎপত্তি হওয়া শাখা নদীটি ইসলামপুরের শীলদহ ও সিন্দুরতলী হয়ে সাপধরী ইউনিয়নের প্রজাপতি, নন্দনেরপাড়া, চরশিশুয়া, কাশারীডোবা, ইন্দুল্লামারী, আকন্দপাড়া, মন্ডলপাড়া, চেঙ্গানিয়া, টগার চর ও দৈলকের চর হয়ে সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী এলাকায় গিয়ে আবার যমুনার মূলস্রোতে মিলিত হয়েছে। এই শাখা নদীটির দুই তীরের শীলদহ, প্রজাপতি, চরশিশুয়া, কাশারীডোবা, আকন্দপাড়া ও মন্ডলপাড়া এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে গত ৫ বছর ধরে ভয়াবহ নদীভাঙন চলছে।
সাপধরী ইউনিয়নের কাশারীডোবা গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল হক ফারাজী, শাবলু মন্ডল ও আব্দুর রাজ্জাক জানান, এবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই শাখা নদীটির বাম তীরে কাশারীডোবা ও আকন্দপাড়া পয়েন্টে এবং ডান তীরে মন্ডলপাড়া পয়েন্টে ভয়াবহ নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এতে এবছরই নদীটির বাম তীরের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে কাশারীডোবা ও আকন্দপাড়া এলাকার পাঁচ শতাধিক বসতভিটা, দুটি বাজার, তিনটি স্কুল, তিনটি মসজিদ এবং কয়েকশ একর ফসলি জমি। একইভাবে ডান তীরে অবস্থিত সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবনসহ আশপাশের অন্তত পাঁচশ বসতভিটা ও মন্ডলপাড়া বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
জোড়ডোবা গ্রামের হেলাল উদ্দীন জানান, চিনাডুলি ইউনিয়নের নয়াপাড়া পয়েন্টে যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন শাখা নদীটির তীব্র স্রোতে কটাপুর, রাজাপুর, কোদালধোয়া ও রায়েরপাড়া এলাকায় গত পাঁচ বছর ধরে ভয়াবহ নদীভাঙন চলছে।
বিশরশি গ্রামের মো. নুরুল ইসলাম সেক জানান, সাপধরী ইউনিয়নের পশ্চিম সীমানায় প্রবাহিত যমুনার শাখা নদীর ভাঙনে বিগত বন্যা মৌসুমে বিশরশি গ্রামের অন্তত দুইশ পরিবারের বসতভিটাসহ প্রায় দুই হাজার একর ফসলি জমি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এবছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বিশরশি, মন্ডলপাড়া ও দক্ষিণ শিশুয়া এলাকায় চলছে ভয়াবহ নদীভাঙন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এবারও বহু বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।
সাপধরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মন্ডল জানান, মন্ডলপাড়া, বিশরশি ও দক্ষিণ শিশুয়া গ্রামের পাশ দিয়ে যমুনার একটি শাখা নদীর বাম তীরে ভয়াবহ নদীভাঙন চলছে। গত বছর বিশরশি গ্রামের সিংহভাগই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অপর শাখা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে কাশারীডোবা, আকন্দপাড়া ও মন্ডলপাড়া গ্রামের দক্ষিণাঞ্চল। অব্যাহত ভাঙনে এবছরই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে অন্তত ১০টি গ্রাম। তিনি আরও জানান, জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলে দুই শতাধিক পরিবার রক্ষা পাবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ.এস.এম. আব্দুল হালিম জানান, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। যমুনার মূলস্রোতে ড্রেজিং চালু রাখা এবং ভাঙনপ্রবণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ও বাঁশের পাইলিং করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, সাপধরী ইউনিয়নের কাশারীডোবা এলাকায় ২৩০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং সম্পন্ন হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে অন্যান্য ভাঙন এলাকায়ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সানজানা