ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

চৌগাছায় ইউপি চেয়ারম্যানকে পিটিয়ে ভাঙা হলো হাত-পা

বিক্ষোভ সমাবেশে সন্ত্রাসীর পায়ের মূল্য এক লাখ টাকা ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ২৬ জুন ২০২৫

বিক্ষোভ সমাবেশে সন্ত্রাসীর পায়ের মূল্য এক লাখ টাকা ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদার দাবিতে যশোরের চৌগাছার ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালিকে পিটিয়ে হাত-পা ভাঙার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে যশোর-চৌগাছা সড়কের ফুলসারা নিমতলা বাজারে বিক্ষোভ শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টা চলে এই বিক্ষোভ সমাবেশ।

প্রথমে সড়ক অবরোধ করলেও পরে রাস্তার পাশে বিক্ষোভ করে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বিক্ষোভ চলাকালে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে নিতে পারলে তাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার মাইকে ঘোষণা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

জানা যায়, বিক্ষোভ চলাকালে মাইকে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নানা স্লোগান ও বক্তব্য দিতে থাকেন এলাকাবাসী। সমাবেশে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী লিটনের পা কেটে আনতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় উপস্থিত জনতা করতালি দিয়ে সমর্থন জানান।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফুলসারা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লতিফ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালি এলাকার মানুষের কাছে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। চাঁদার দাবিতে তাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী লিটন, মামুন, টিটো ও তার সহযোগীরা। তাদের শাস্তির দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষে রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভে। সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

তিনি বলেন, ‘ক্ষোভে পড়ে হয়ত উনি পায়ের মূল্য ঘোষণা করেছেন। এলাকার প্রত্যেকটি মানুষ সন্ত্রাসী লিটন ও তাদের উপর চরম ক্ষুব্ধ। নিরীহ চেয়ারম্যানকে এভাবে হাত পা ভেঙে দেয়ার ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছে না।’

গত বুধবার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের মান্দারতলা এলাকায় দুবৃর্ত্তরা মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালিকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। জিয়াউর রহমান ঢালি সদ্য কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগের ফুলসারা ইউনিয়ন শাখার সভাপতি।

চেয়ারম্যানের স্বজনের অভিযোগ, ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত ২৮ এপ্রিল গ্রেফতার হন। এরপর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর রহমান ঢালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামি সন্ত্রাসী লিটনের নেতৃত্বে পাঁচ থেকে ছয়জন জিয়াউর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তাদের চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হন লিটন। বুধবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাওয়ার পথে লিটন ও তাদের সহযোগীরা পথরোধ করে। এরপর অস্ত্র ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে হকি স্টিক দিয়ে দু’পা ও হাত ভেঙ্গে দিয়ে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর ঢালি জানান, ‘চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারে না। আমাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে। স্থানীয় সন্ত্রাসী লিটন আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলো। সেই টাকা না দেওয়াতে আমার উপর হামলা চালিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু স্থানীয় লোকজন চলে আসাতে তারা পালিয়ে যায়।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আশাঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে আনা হলেও বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।’

এই বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, এ বিষয়ে পুলিশের একটি টিম কাজ শুরু করেছে। তদন্ত চলছে, এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। জড়িতদের আটকে অভিযান অব্যহত রয়েছে।’

সাজেদ রহমান/রাকিব

×