ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

হঠাৎ শ্রেণিকক্ষে ইউএনও: ব্যস্ত প্রশাসকের হাতে ২০ মিনিটের শিক্ষকতা

মোঃ নাজমুল ইসলাম পিন্টু, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৩ জুন ২০২৫

হঠাৎ শ্রেণিকক্ষে ইউএনও: ব্যস্ত প্রশাসকের হাতে ২০ মিনিটের শিক্ষকতা

ছবি: সংগৃহীত

বেলা তখন সাড়ে বারোটা। দুপুরের রোদ একটু একটু করে তীব্র হচ্ছিল। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিদিনের মতোই শিক্ষার্থীদের চেনা ব্যস্ততা। এমন সময় হঠাৎই বিদ্যালয়ের গেটে এসে থামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের গাড়ি।

কোনো পূর্ব ঘোষণা বা আমন্ত্রণ ছাড়াই স্কুলে হাজির হন তিনি। প্রশাসনিক ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি মিশে তাদের পড়ালেখার অগ্রগতির খোঁজ নেওয়ার ইচ্ছা থেকেই এ আকস্মিক উপস্থিতি।

প্রথমে শিক্ষকরা খানিকটা অবাক হলেও ইউএনও’র আন্তরিকতা দেখে দ্রুতই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে বলেন। এরপর তিনি প্রবেশ করেন দশম শ্রেণির বি শাখায়। নিজের সরকারি পোশাকে, বই হাতে তিনি শুরু করেন প্রাণবন্ত একটি ইংরেজি ক্লাস। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে তার পাঠদান। এরপর চলে যান অষ্টম শ্রেণির বি শাখায়, যেখানে নেন সাধারণ বিজ্ঞানের ক্লাস।

প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও অচেনা শিক্ষককে চিনে নিয়ে শিক্ষার্থীরা হয়ে ওঠে স্বাভাবিক। ক্লাসে ইউএনও বলেন, “ইংরেজি কেবল একটি বিষয় নয়, এটি একটি দক্ষতা। বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়, কিন্তু সেটিকে জানার চাবিকাঠি হলো ইংরেজি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে পারলে যেকোনো স্বপ্ন পূরণ সম্ভব।”

তিনি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শব্দের উচ্চারণ, বাক্য গঠন ও দৈনন্দিন জীবনে চর্চার সহজ উপায় শেখান। জানতে চান তাদের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। কেউ হতে চায় শিক্ষক, কেউবা ডাক্তার কিংবা পুলিশ অফিসার। তাদের স্বপ্ন দেখে ইউএনও বলেন, “প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টা সময় পেতাম, তাহলে শিক্ষক হয়ে তোমাদের আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতাম।”

শুধু ক্লাস নেওয়াতেই থেমে থাকেননি তিনি। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, মনোভাব ও প্রস্তুতি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন, কথা বলেন শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গেও।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, “এ ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে, পাশাপাশি সমাজে শিক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়ায়। প্রশাসনের এমন অংশগ্রহণ আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।”

একজন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানায়, “ইউএনও স্যার এত সহজভাবে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন যে আমরা খুব আত্মবিশ্বাসী বোধ করছি। এখন থেকে আরও বেশি ইংরেজি চর্চা করব।”

২০ মিনিটের এই শিক্ষকতা শেষে ইউএনও আবার ফিরে যান নিজের কর্মস্থলে। তবে শিক্ষার্থীদের মনে রেখে যান এক অনুপ্রেরণার গল্প।

আজকের দিনে, যখন প্রশাসনিক ব্যস্ততায় মানবিক সংযোগ ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠছে, তখন টঙ্গীবাড়ীর ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় এক উদাহরণ।

আলীম

×