
ছবিঃ সংগৃহীত
নীলফামারীর নারীদের হোগলাপাতায় তৈরি পণ্য নিজের দেশ পেরিয়ে বিদেশেও ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ জেলার প্রান্তিক অঞ্চলের নারীরা পণ্য তৈরি করে সংসারের আয় বৃদ্ধি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে, পরিবারের জীবনমান পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন নারীরা।
প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব কারুশিল্প পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বৈদেশিক বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। নারীরা ঘরে বসেই হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি করছেন নানান ধরনের পণ্য, যা রপ্তানি হচ্ছে দেশে-বিদেশে। নীলফামারী জেলা সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে হোগলাপাতার হস্তশিল্প তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নারীরা। এসব কারুপণ্য আমেরিকা, কানাডা, চীন, জাপান, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
হোগলাপাতার রয়েছে নানা ধরনের নাম। বাংলায় হোগল, হোগলাপাতা ও ধারী পাতা নামে পরিচিত হলেও ইংরেজিতে এটাকে ক্যাট টেইল বা বিড়ালের লেজ বলা হয়। সাধারণত ৫ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার এই হোগলাপাতা রোদে শুকিয়ে বিশেষ কায়দায় এই পাতা পেঁচিয়ে প্রথমে দড়ি বানানো হয়। হোগলাপাতার দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে পছন্দের কারুপণ্যের রূপ দেওয়া হয়। মাপ ও সাইজ ঠিক রাখার জন্য অধিকাংশ কারুপণ্য বানাতে লোহা ও জিআই তারের ডাইস ব্যবহার করা হয়।
খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের মোর্শেদা আক্তার বলেন, আমি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে গ্রামের নারীদের সঙ্গে হোগলাপাতার পণ্য তৈরি করছি। যা টাকা পাই, পড়াশোনা ও হাতখরচ জোগান হচ্ছে। এমনকি প্রতি মাসে কিছু টাকা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে পারছি। আমার মতো অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এই কাজে যুক্ত আছেন।
ওই এলাকার মরজিনা বেগম বলেন, আগে সবসময় সংসারে অভাব লেগে থাকত। এখন সংসারে অভাব নাই বললেই চলে। সন্তানের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে পারি। আমি হাতের পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমার মতো গ্রামের অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি করি ফুলের টব, বাক্সেট, টিস্যু বক্স, পেট বাস্কেট, ক্যারেট, শপিং বাস্কেট ও ফ্লোরম্যাটসহ অনেক কিছু।
আর্টিশিয়ান হাউজ বিডি. লিমিটেডের প্রোডাকশন ম্যানেজার হামিদুল হক মোল্লা বলেন, আমাদের যে মালগুলো তৈরি হয়, এর কাঁচামাল নোয়াখালী থেকে নিয়ে আসি। নিয়ে আসার পর যে নারীরা কাজ করছেন তাদের হাতে পৌঁছে দেই। পণ্য তৈরি শেষ হলে আমরা ঢাকা অফিসে পাঠিয়ে দেই। সেখান থেকে বিভিন্ন দেশে যায়। বেশিরভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোতে।
বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুলে হক বলেন, হোগলাপাতার পণ্য তৈরির মাধ্যমে গ্রামের অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছে। আর এই পণ্য তৈরি উদ্যোক্তাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে বিসিক সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
ইমরান