খালের ওপর পাকা কোনো ব্রিজ না থাকায় নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত বাঁশের সাঁকোই যাতায়াতের মাধ্যম
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরুলেও হাঁটা-চলার স্বাধীনতা পায়নি পাঁচ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। দৈনিক কাজে বা যে কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরুলেই বাধা বাড়ির পাশের ছোট্ট খাল, আর খালে সারাবছর পানি থাকায় খাল পারাপারে গ্রামবাসীর একমাত্র অবলম্বন ভাঙ্গাচুরা বাঁশের সাঁকো। গ্রামের একমাত্র সরকারি কাঁচা রাস্তাটি দেখলে মনে হবে যেন এটি কোনো অজপাড়া গ্রাম; কিন্তু বাস্তবে এটি রাজধানীরই অংশ। বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫/৭ কিলোমিটারের মধ্যে পুরান ঢাকা ও বুড়িগঙ্গা ঘেঁষা কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ও শাক্তা ইউনিয়নের অবস্থান।
ভৌগোলিক দিক দিয়ে শহরঘেঁষা হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই ইউনিয়নের অনেক অঞ্চলে, বিশেষ করে দুই ইউনিয়নের সীমানাঘেঁষা দেওশুর, মক্কানগর, মদিনানগর, জিয়ানগর, ধুপাশুরসহ কয়েটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। এ এলাকার জায়গা-জমির দাম বাড়লেও মান বাড়েনি জীবনযাত্রার। গ্রামগুলোতে নেই ভালো কোনো রাস্তা। দেওশুর গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রায় ২০ ফুটের একটি সরকারি রাস্তা থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এতে চলে না কোনো যানবাহন, এমনকি রিক্সাও। তাছাড়া খাগাইল খালের ওপর পাকা কোনো ব্রিজ না থাকায় নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত বাঁশের সাঁকোই তাদের শেষ ভরসা।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা জানান, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর হয়ে গেলেও চলাচলের রাস্তা পায়নি গ্রামবাসী। সরকারি রাস্তা না থাকায় অন্যের ব্যক্তিগত রাস্তা দিয়ে চলাচল করে পাঁচ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা খালের ওপর পাকা কোনো ব্রিজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙাচুরা বাঁশ ও কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। দৈনন্দিন যে কোনো কাজে বের হলেই পড়তে হয় বিরম্বনায়। সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু, বৃদ্ধ আর রোগীরা পড়েন বেশ বিপাকে। সাঁকোর বাঁশ বা কাঠ ভেঙে মাঝে মাঝেই আহত হন অনেকে। পানিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন আশ্বাস দেন; কিন্তু কোনো আশ্বাসই আলোর মুখ দেখেনি গত ৫০ বছরে।
সর্বশেষ জিয়ানগর-দেওশুর দিয়ে একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন জানান, ২০ বছর যাবৎ এখানে (ব্রিজের পাশে) বসবাস করি। এটি একটি পায়ে হাঁটার রাস্তা; কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে এই রাস্তা ও ব্রিজ দিয়ে। অনেক নেতা আশ্বাস দিলেও ব্রিজ করে দেননি কেউ। ভাঙা ব্রিজ থেকে পড়ে অনেকে আহত হয়েছে। ব্রিজটি করে দিলে সকলের উপকার হতো। দেওশুর গ্রামের বানু জানান, পঞ্চাশ বছর ধরে দেখছি রাস্তার এ অবস্থা। সরকার আসে সরকার যায়; কিন্তু রাস্তার উন্নয়ন হয় না।
কেউ অসুস্থ হলে রিক্সায় করে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থাও নেই এই গ্রামের মানুষের। কিছু চাওয়ার নেই, কারণ চাইতে চাইতে আমরা ক্লান্ত। বাকি জীবন কোনোমতে কাটিয়ে যেতে চান এই ৭০ বছর বয়সী নারী। গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ বলেন, এলাকাটিতে বড় মাপের কোনো লোক না থাকা, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ও বহিরাগত লোকজন বেশি হওয়া এবং রাস্তার পাশে বড় বড় আবাসিক প্রকল্প গড়ে উঠায় ভেতরের গ্রামগুলোতে কারও নজরে পড়ে না।
ব্যক্তিগত রাস্তাটি বন্ধ করে দিলে তাদের চলাচলের কোনো পথ থাকবে না বলেও জানান তিনি। দ্রুত সরকারি রাস্তাটি মেরামত এবং খাগাইল খালের ওপর পাকা ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান মোটু ফোনে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
