ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খুলনার শিল্প কলকারখানার দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ চায় নাগরিক সমাজ

আরিফুর রহমান, খুলনা

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ১২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৮, ১২ জুন ২০২৫

খুলনার শিল্প কলকারখানার দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ চায় নাগরিক সমাজ

নিউজপ্রিন্ট মিলসহ খুলনার বন্ধ হয়ে যাওয়া সকল রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প—কারখানার সম্পদ পাচার, লুটপাট ও অবৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছে ‘খুলনা নাগরিক সমাজ’। বৃহস্পতিবার (১২জুন) বেলা বারোটায় খুলনা নগরীর শান্তিধাম মোড়ে অবস্থিত সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘খুলনা নাগরিক সমাজ’ এর নেতৃবৃন্দরা এ দাবী জানান।

সংগঠনের নেতারা বলেন, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের অজুহাতে করোনার মতো স্মরণকালের ইতিহাসের দুনিয়াব্যাপী সর্ববৃহৎ দুর্যোগের মধ্যে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাতের অন্ধকারে তৎকালীন সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে, গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের পেটোয়াবাহিনী দ্বারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়। যার মধ্যে খুলনাঞ্চলের ৯টি পাটকল রয়েছে। ফলশ্রুতিতে, চাকরি হারান ২৬ হাজার স্থায়ী—অস্থায়ী শ্রমিক। বেকার হয়ে যান এবং নিদারুণ অর্থ সংকটে পড়েন এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কয়েকগুণ মানুষ। রাষ্ট্র হারায় প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প তথা বুনিয়াদি উৎপাদন খাত। তৎকালীন সরকার শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে লীজের মাধ্যমে এ খাতটি আধুনিকায়ন করে পরবর্তীতে ৩ মাসের মধ্যে পুনরায় চালুর ঘোষণা দেয়। মূলত এটি ছিলো শ্রমিক অসন্তোষ এবং কারখানা চালুর দাবীতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধের একটি অপকৌশলমাত্র। যা তৎপরবর্তী অদ্যাবধি কার্যক্রম দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান। তারও পূর্বে লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

একই অজুহাতে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইভাবে সরকারের ভুলনীতির কারণে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন সোনালী জুট মিল, ২০১৩ সালে এজাক্স জুট মিল, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আফিল জুট মিল, ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মহসেন জুট মিল, ২০১৬ সালে জুট স্পীনার্স বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও ১৯৯৩ সালের ১৯ জুন খুলনা টেক্সটাইলস মিলস্, ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বন্ধ করে দেয়া হয় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী। এর পূর্বে বিএমসি, বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি, কোরাইশী স্টীল মিল বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের যন্ত্রপাতি মাত্র ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করা হয়। যার প্রকৃত মূল্য কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা। এই টেন্ডার ছিলো নাটকীয় ও ষড়যন্ত্রমূলক।  

সংগঠনের নেতারা ৫ দফা দাবি জানিয়ে বলেন, নিউজপ্রিন্ট মিলের টেন্ডার বাতিল ও জড়িতদের শাস্তি, বন্ধ কারখানাগুলো আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু,শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ, আন্দোলনরত শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান পরিস্কারভাবে নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অ্যাড. আ ফ ম মহসীন এর সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের অন্যতম সদস্য গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নিউজ প্রিন্ট মিল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি নিজামউর রহমান লালু, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু, সংগঠনের সদস্য যথাক্রমে আইন ও অধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এস এম দেলোয়ার হোসেন, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (কেডিএস) এর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিমুল, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)'র খুলনা মহনগর সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, নতুনতারা সমাজকল্যাণ ও সাহিতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর মিনা, খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলের শ্রমিকনেতা এস এম রফিকুল ইসলাম, অ্যাড, মেহেদী হাসান, কবি ও সাংবাদিক মোঃ রহমত আলী, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সহ-সভাপতি শেখ ওমর ফারুক (কচি), এস এম মিজানুর রহমান, দৈনিক শিরোনাম এর সম্পাদক ও প্রকাশক, বিশিষ্ট উপস্থাপক ইফফাত সানিয়া ন্যান্সি, খুলনাঞ্চল পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মো. মোসলেহউদ্দিন তুহিন, দৈনিক চৌকস এর বিভাগীয় সম্পাদক মো. শাহীন হাওলাদার, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মো. জহুরুল ইসলাম (জব্বার), সম্প্রীতি সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাঈদা পারভীন, মানবাধিকার উন্নয়ন প্রকল্প (এইচআরডিপি) এর সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল মোড়ল, শিরোমনি যুব উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক প্রমি আক্তার লিজা, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য, মোস্তফা সাব্বির হাসান বাপ্পী প্রমুখ।

আঁখি

×