ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

সরকারি অবহেলায় গর্তেই হারাচ্ছে প্রাণ!

নাসির হায়দার, সাপাহার, নওগাঁ

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১১ জুন ২০২৫

সরকারি অবহেলায় গর্তেই হারাচ্ছে প্রাণ!

ছবি: জনকণ্ঠ

সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ফজিলাপুর-কামাশপুর সড়কটি। টানা কয়েকদিনের বর্ষণে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটির অধিকাংশই খানা-খন্দে ভরে গেছে। ফলে এটি এখন কার্যত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

বুধবার (১১ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো রাস্তাজুড়েই খানা-খন্দে ভরপুর, কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে কাদা তৈরি হয়েছে। বিকল্প রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এসব গর্তের মধ্য দিয়েই চলাচল করছেন। যানবাহন মাঝপথে বিকল হয়ে পড়া বা কাদায় আটকে যাওয়ার ঘটনাও নিত্যদিনের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গোয়ালা ইউনিয়নের এই রাস্তাটি বছরের পর বছর অবহেলিত থেকে গেছে। তাদের দাবি, এলাকা বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত হওয়ায় গত সরকারের আমলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা নখাই বর্মণ ও সাজেদুল আলমের প্রভাবে রাস্তাটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

প্রায় ছয় হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা এই সড়কটি। আশপাশের হাট-বাজার এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষক ও চাকরিজীবীদের প্রতিদিন চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এই পথ। অথচ বেহাল অবস্থার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। খানাখন্দে পড়ে কেউ হাত-পা ভেঙে ফেলার ঘটনা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পশ্চিম কামাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এ রাস্তায় চলাচল করে। প্রায়ই তারা দুর্ঘটনায় পড়ে। কোমলমতি শিশুদের জন্য এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’

তরুণ উদ্যোক্তা ও দিগীর হাট বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী আকমাল হোসেন বলেন, ‘মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা আসতে এখন সময় লাগে দেড় ঘণ্টার মতো। রাতের বেলা সমস্যাটা আরও বাড়ে।’

নিচিন্তপুর জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ‘গর্ভবতী নারী বা অসুস্থ ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার কোনো উপায় নেই। এমনকি রাস্তার ওপরেই সন্তান প্রসব বা রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।’

কামাশপুরের বাসিন্দা আব্দুর রউফ মাস্টার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তাটি একদম চলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে কয়েকটি ট্রলি উল্টে নারী ও শিশুসহ অনেকে আহত হয়েছেন। আমাদের মনে হয়, আমরা যেন আফ্রিকার কোনো জঙ্গলে বসবাস করছি। সরকার দ্রুত এ রাস্তাটি মেরামতের ব্যবস্থা করুক।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোসাঃ উজলেফা বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকেই এ রাস্তাটি এমনই। সম্ভবত বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ রাস্তা এটিই।’ ষাটোর্ধ্ব আমচাষি মামুনুর রশীদ বলেন, ‘যদি রাস্তাটি মেরামত না হয়, তাহলে সরকার যেন অন্তত নৌকা চালুর ব্যবস্থা করে। এবার আমের খরচও উঠবে না।’

২নং গোয়ালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এই রাস্তাটির টেন্ডার হয়েছিল, ইথেন গ্রুপ কাজটি পায়। কিন্তু বিগত সরকারের পতনের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরে পুনঃটেন্ডার দিলে মামলার জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। ফলে প্রায় ৫ হাজার মানুষ এই রাস্তায় জনবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।’

উল্লেখ্য, ইথেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়ার ছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অংশীদার। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী তাহাজ্জদ হোসেনের মোবাইলে ফোন করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

শহীদ

×