ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

নিষেধাজ্ঞা উঠতেই ট্রলার-জাল নিয়ে প্রস্তুত জেলেরা

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১১ জুন ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা উঠতেই ট্রলার-জাল নিয়ে প্রস্তুত জেলেরা

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

নিষেধাজ্ঞা উঠতেই ট্রলার-জাল নিয়ে প্রস্তুত নোয়াখালীর জেলেরা। গত প্রায় দুই মাস ধরে কেউ নৌকা মেরামত করছেন, কেউ জাল বুনছেন, আবার অনেকে ট্রলার পরিষ্কার করছেন। বড় বড় মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে তোলা হচ্ছে রসদ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ঘাটগুলো, কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হয়েছে এতদিন নীরব থাকা জায়গাগুলো।

বুধবার রাত ১২টা থেকে সাগরে মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। মধ্যরাতের পরই সবাই মাছ ধরতে সাগরে নামবেন। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও পাশ্ববর্তী ভাসানচর, সুবর্ণচরের একাংশের প্রায় এক লাখ জেলে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান জানান, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নদী ও সাগরে নিয়মিত টহল দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিছু অসাধু জেলেকে ধরা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ বছর প্রণোদনা হিসেবে হাতিয়ার ১২,০০০ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে, যা বিভিন্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার সময় পরিবর্তন করে একই সময়ে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়।

হাতিয়ার সূর্যমুখী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, হাতিয়ায় প্রায় ২০টি ঘাট রয়েছে, যেখানে প্রায় ১০,০০০ মাছ ধরার নৌকা আছে। প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১০ জন কর্মী থাকেন, ফলে প্রায় ১ লাখ মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। মা ইলিশ রক্ষার জন্য গত ৫৮ দিন ধরে তারা কর্মহীন ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারও তারা সাগরে নামতে পারবে—এই আনন্দে জেলেপাড়াগুলো এখন উৎসবমুখর।

দিনভর কয়েকটি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। কেউ খালে নৌকার ইঞ্জিন পরীক্ষা করছেন, কেউ বড় ট্রলারে বরফ তুলছেন।

সূর্যমুখী ঘাটের কয়েকজন জেলে জানান, ৫৮ দিন ধরে তারা কোনো আয় না থাকায় বেকার ছিলেন। কেউ কেউ অস্থায়ী কাজ করেছেন, আবার কেউ নৌকা ও জাল মেরামতে সময় কাটিয়েছেন। রাত ১২টার পর তারা সবাই মাছ ধরতে নদীতে নামবেন। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের পরিমাণ কম থাকায় অনেক নৌকা এখনও ঋণের বোঝায় জর্জরিত। নিষেধাজ্ঞা শেষে যদি ভালো মাছ না পাওয়া যায়, তবে আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কাজীর বাজার ঘাটের জেলে নফেল উদ্দিন জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে তিনি সরকারি সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি চাল পেয়েছেন। কিন্তু পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য এই চাল যথেষ্ট ছিল না, ফলে তাকে ধার করে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়েছে।

তিনি আরও জানান, তার নৌকায় তিনি ছাড়াও আরও ৯ জন জেলে আছেন। এদের মধ্যে প্রায় সকলেই সরকারি চাল পেয়েছেন।

হাতিয়া ট্রলার মালিক সমিতির অনেক সদস্য জানান, হাতিয়ায় গভীর সমুদ্রগামী ২০০টিরও বেশি ট্রলার আছে, যেখানে প্রায় ৪,০০০ জেলে কাজ করেন। নিষেধাজ্ঞার ৫৮ দিনে মালিকদেরকেই এসব জেলে ও তাদের পরিবারের খরচ বহন করতে হয়েছে। যদিও এবছর আর্থিক দিক থেকে মালিকদের অবস্থা কিছুটা ভালো, তাই তারা জেলেদের পাশে ছিলেন যাতে নিষেধাজ্ঞা শেষে তারা আবার সাগরে ফিরতে অনীহা না করেন।

এম.কে.

×