
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ঝুঁকি নিয়ে কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ পার হন ধলেশ্বরীর শাখা নদী। ভরসা একমাত্র— নামেমাত্র ফেরি, যেটিকে স্থানীয়রা বলেন “মৃত্যু ফাঁদ”। এই ছোট ফেরিতেই পারাপার হয় মানুষ, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ নানা ছোটখাটো যানবাহন। এক পশলা বৃষ্টি বা রাতের অন্ধকারে ফেরি পার হওয়া মানেই—জীবন নিয়ে জুয়া খেলা।
ঈদ বা অন্যান্য উৎসবের সময় বাড়তি যাত্রী চাপের সুযোগ নিয়ে জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২০ টাকা। ছোট যানবাহন পার করাতে গুনতে হয় শতাধিক টাকা। রাতের বেলা, যখন কোনো বিকল্প থাকে না, তখন ‘ভাড়া আদায়কারীরা’ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করে অতিরিক্ত ভাড়া। আর এই পুরো পরিস্থিতির পেছনে আছে একটি অসমাপ্ত স্বপ্ন—মোল্লাবাজার সেতু।
২০১৮ সালে কেরানীগঞ্জ ও সিরাজদিখানের সংযোগস্থলে ২৫২ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালেও সেতু চোখে দেখাই যেন দুষ্কর। মূল সেতুর মাত্র ৮টি পিলার ও কয়েকটি স্প্যান বসানো হয়েছে—বাকি কাজ থেমে আছে বছরের পর বছর।
৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রথম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “সুরমা এন্টারপ্রাইজ” মাঝপথে কাজ ছেড়ে দিলে নির্মাণ থমকে যায়। পরে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ হলেও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় কাজ এগোয়নি। আরও ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে, তবে বাস্তবতার মাটিতে অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
ফলে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখনো সেই ঝুঁকিপূর্ণ ফেরির উপর নির্ভরশীল। তাদের সময়, অর্থ ও জীবনের নিরাপত্তা—সবই আজ প্রশ্নের মুখে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফেরি চলাচলের স্বার্থ, জমির দাম বাড়া ঠেকাতে গোপন স্বার্থ এবং প্রশাসনিক গাফিলতির কারণেই এই ছোট সেতুর কাজ এত বছরেও শেষ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর ইসলাম বলেন, “পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্প সাত বছরে হয়ে গেল, আর এই ছোট সেতু আটকে আছে সাত বছরেও। এটা কি কারও ব্যর্থতা, না কি ইচ্ছাকৃত বিলম্ব?”
সেতু চালু হলে মুন্সীগঞ্জের সদর, সিরাজদিখান, লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মানুষ মাত্র ৩০ মিনিটেই ঢাকায় পৌঁছতে পারতেন। বাড়ত ব্যবসা-বাণিজ্য, জমির দাম এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। অথচ সেসব সম্ভাবনার দরজা আজও বন্ধ পড়ে আছে একটি অসমাপ্ত সেতুর কারণে।
স্থানীয়দের এখন একটাই দাবি—আর প্রতিশ্রুতি নয়, চাই দ্রুত কাজ শেষ করে মোল্লাবাজার সেতু চালু করা হোক। নয়তো ফেরি নামক এই ভাসমান দুর্ভোগেই ডুবে যাবে আরও একটি প্রজন্ম।
নোভা