
ছবি: জনকণ্ঠ
নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী
“তোর ছেলেকে মেরেছি, একদিনও জেলে যেতে হয়নি। জামিন নিয়ে এসেছি। আমরা প্রকাশ্যে ঘুরছি, তোদের টাকা নেই, তাই বিচার হবে না। আমরা সকলকে কিনে নেব। তোরা পারলে মামলা তুলে নে, কিছু টাকা দিয়ে দিবো। আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি, আর তোরা সহ তোদের লোকজন পুলিশকে মারপিটের মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। টাকা থাকলে সবই হয়।”
— এমনভাবেই হাইকোর্ট থেকে জামিনে এসে নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে আসামিরা।
এই হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুরে চুরির অপবাদে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা রুপল শেখ (২৭)-এর হত্যাকাণ্ডের বিচার ও পরিবারের নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেলে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে সাংবাদিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মা রাবেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “শাম, মুক্তার, রাফিজুল, কচিরা আমার ছেলেকে ড্রিল মেশিন, বাটাম দিয়ে পিটিয়ে মেরেছে। আমাকেও মেরেছিলো। তবু কিছু বলিনি—চিন্তা করেছিলাম আমার ছেলেকে ওরা মারবে না। কিন্তু ওরা আমার ছেলেকেও বাঁচতে দিল না। আমি ন্যায়বিচার চাই।”
নিহতের বাবা মো. জিন্নাহ শেখ বলেন, “ঘটনার বিচার চলছিল, কিন্তু আসামিরা বিচার অমান্য করে আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে মুক্ত হয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আমরা পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমি আমার সন্তানের বিচার চাই এবং পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করছি।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, “রুপল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এরপর পুলিশ মূল আসামিদের না ধরে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে রুপলের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তারা টাকার জোরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছি। আমরা ন্যায়বিচার দাবি করছি।”
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, “রুপলের পরিবারের করা জিডির ভিত্তিতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে মো. জিন্নাহ শেখের ছেলে রুপল শেখকে মোটর পাম্প চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে নিহতের মামা কালাম মোল্লা একটি মামলা দায়ের করেন। পরে রুপলের মা আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা করেন।
এম.কে.