ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

তীব্র গরমে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়: হাসপাতালে রোগীর ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১০ জুন ২০২৫

তীব্র গরমে বিপর্যস্ত পঞ্চগড়: হাসপাতালে রোগীর ভিড়

তীব্র গরমে পঞ্চগড়ে রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও পানিশূন্যতায় আক্রান্ত রোগীর ভিড়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা এই গরমে বেশি ভুগছেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মিরগড় এলাকা থেকে সাত বছর বয়সী আরাফাতকে জ্বর নিয়ে এসেছেন তার বোন বেলি আক্তার। তিনি জানান, চার-পাঁচ দিন ধরে আরাফাতের জ্বর। পল্লী চিকিৎসকের ওষুধেও কাজ না হওয়ায় গতকাল তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি এলাকা থেকে ১০ মাস বয়সী ছেলে ওবায়েদুল্লাহকে ডায়রিয়া নিয়ে এসেছেন আঞ্জু বেগম। তিনি বলেন, "গতকাল থেকে আমার ছেলের ডায়রিয়া, কিছুতেই কমছে না। এখন মোটামুটি সুস্থ।"

বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ থেকে নাতি কৌশিককে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন অশ্বিনী রায়। তিনি জানান, রাত ৩টা থেকে হঠাৎ ডায়রিয়া শুরু হয়েছে কৌশিকের, ওষুধ ও স্যালাইন খাইয়েও কমছে না।

তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার এনামুল ও ইতি দম্পতি তাদের ১১ মাস বয়সী ছেলে সাদকে নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে বসে আছেন। সাদের বাবা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন আর মা তাকে বেলুন দিয়ে খেলা দেখাচ্ছেন। ঈদের পরের দিন থেকে সাদের বমি ও ডায়রিয়া। প্রথম দিন স্যালাইন-ওষুধ খাইয়েও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, সাদের মতো অনেক শিশুই গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে ভ্যাপসা গরমের কারণে শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বহির্বিভাগেও রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। ভর্তি না হয়েও অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, "গরম আবহাওয়ার কারণে সর্দিকাশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়রিয়া ধীরে ধীরে কমে আসছে। বর্তমানে আমাদের আউটডোরেও প্রায় ২০০ রোগী আসেন। যারা অল্প অসুস্থ, তারা চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। যারা বেশি অসুস্থ, তারা ইনডোরে ভর্তি হন।" তিনি আরও জানান, ওষুধ সরবরাহ পর্যাপ্ত আছে।

এই গরমে সুস্থ থাকতে ডা. মনোয়ারুল ইসলাম কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:

  • হাত ধুয়ে খাবার গ্রহণ করা।
  • বাসি খাবার না খাওয়া এবং খাবার ঢেকে রাখা।
  • বিনা কারণে রোদে না যাওয়া।
  • শরীরে বেশি ঘাম হলে পর্যাপ্ত পানি পান করা।
  • ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা।

মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেল ৩টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে, সোমবার (৯ জুন) একই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় জানান, "চলমান তাপপ্রবাহ আগামী ১৩ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।"

নুসরাত

×