
ছবিঃ জনকণ্ঠ
পবিত্র ঈদুল আযহার আর মাত্র একদিন বাকি। শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় জমে উঠেছে খাগড়াছড়ি সদরের গঞ্জপাড়া কোরবানির পশুর হাট। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) শহরের গঞ্জপাড়া নদী তীরবর্তী হাটটিতে ছিলো ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড়।
হাটে প্রাধান্য পেয়েছে পাহাড়ি খামারে লালন-পালন করা দেশি জাতের গরু, যার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ দিনটি পৌর এলাকার পূর্ণ হাটের দিন হওয়ায় এবং ঈদের আগের শেষ হাট বসায় সকাল থেকেই বেচাকেনা জমে ওঠে এখানে। জেলা সদরের পাশাপাশি পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, দিঘীনালা ও মহালছড়িসহ আশপাশের উপজেলার খামারিরা তাদের পশু নিয়ে জমায়েত হন জেলার মূল হাটে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় অনেক ক্রেতাকেই বেশি দর দিয়েই গরু কিনতে দেখা গেছে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন খামারি জানান, এ বছর গো-খাদ্য, খড়, কুড়াসহ পালন-সংশ্লিষ্ট উপকরণের খরচ বেড়েছে অনেকগুণ। অথচ গরু বিক্রিতে তারা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। কেউ কেউ লোকসানের আশঙ্কাও করছেন। এক খামারি বলেন, "দুই বছর ধরে যত্নে গরুটি বড় করেছি। কিন্তু বাজারে এসে দেখছি দাম অনেক কম। এই অবস্থায় গরু না বিক্রি করেও উপায় নেই।"
হাটজুড়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি এ বছর সাধারণ মানুষের ঝোঁক বেশি। দামও তুলনামূলকভাবে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ছোট গরু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়, মাঝারি গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বড় আকৃতির গরুর দাম ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে শুরু হয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তবে ক্রেতাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, গরুর পরিমাণ কম থাকায় দরদামে ছাড় পাওয়া যাচ্ছে না।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনও ছিলো তৎপর। গোটা হাটজুড়ে মোতায়েন ছিলো পুলিশের বিশেষ টিম। জাল টাকা শনাক্তকরণের বুথে ছিলো জেলার প্রায় ১১টি ব্যাংকের কর্মকর্তা। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কাজ করেছে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, যেখানে দুইজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় এ বছর মোট ১৯ হাজার ১৬০টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮১০টি গরু, ১৫টি মহিষ, ৬ হাজার ১১০টি ছাগল ও ৮০টি ভেড়া রয়েছে। জেলা পর্যায়ে কোরবানির চাহিদা মেটানোর পরেও ১ হাজার ১৬০টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার মো. আরিফিন জুয়েল জানান, “জেলার বিভিন্ন সড়কে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে চাঁদাবাজি ও হয়রানি ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। একইসাথে হাটে জাল টাকা লেনদেন রোধেও আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।”
পাহাড়ি জনজীবনের কোরবানির এ আয়োজন ধর্মীয় রীতির পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতি, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
আলীম