
ছবি: সংগৃহীত
বকেয়া আদায় না হওয়ায় পুঁজি সংকটে কোরবানির চামড়া কেনা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে কোরবানির মৌসুমে চামড়ার দরপতনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, পাকিস্তান আমল থেকেই উত্তরের জনপদ সৈয়দপুর চামড়া ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শহরের ‘চামড়াগুদাম’ এলাকাটি ছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ চামড়ার বাজার, যেখানে পার্বতীপুর, তারাগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ আশপাশের আট জেলার ব্যবসায়ীরা লেনদেন করতেন। এখান থেকে রেলপথে চামড়া রপ্তানি হতো ভারতে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্বাভাবিক দরপতন, পুঁজি সংকট ও পাওনা টাকা আদায় না হওয়ার কারণে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এক সময় যেখানে শতাধিক ব্যবসায়ী সক্রিয় ছিলেন, সেখানে এখন মাত্র ৮-১০ জন কোনোভাবে টিকে আছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের কাছে গত ছয় বছরের পুরনো প্রায় কোটি টাকার বকেয়া রয়ে গেছে। বারবার তাগিদ দিয়েও তারা টাকা পরিশোধ করছেন না। কেউ কেউ সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ শোধ করেছেন, কেউ আবার ব্যবসা ছেড়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী মো. মমতাজ জানান, ঢাকার পোস্তগোলার এক আড়তদারের কাছে তার ৩০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে, যা দুই বছরেও পরিশোধ হয়নি। ফলে এবারে তিনি চামড়া কেনার পুঁজির সংকটে পড়েছেন।
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী সরফরাজ বলেন, "ট্যানারি মালিকদের ফাঁদে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। বকেয়া চাইলে তারা বিদেশে রপ্তানি না হওয়ার অজুহাত দেন।"
সৈয়দপুর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মেসার্স আল-আমিন ট্রেডার্সের মালিক আজিজুল হক বলেন, "আমার নিজের ২০ লাখসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রায় কোটি টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকে আছে। বারবার তাগিদ দিয়েও তারা পরিশোধ করছে না। এতে ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। এর ফলে চামড়ার দরপতন ঘটতে পারে।"
বর্তমানে স্থানীয় বাজারে গরুর চামড়া আকারভেদে প্রতি পিস ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং ছোট চামড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব চামড়া নাটোরের আড়তে সরবরাহ করা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পেলে ভবিষ্যতে এ ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
আসিফ