
ছবি: জনকণ্ঠ
ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) বিভিন্ন কারখানায় বিষাক্ত পানি পান করে অসুস্থ হওয়া প্রায় সাড়ে ছয়শত শ্রমিকের মধ্যে দু’জন মহিলা শ্রমিক মারা গেছেন। এদের মধ্যে নাকানো কারখানার সুইং অপারেটর মাহফুজা খাতুন (২৫) মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঈশ্বরদীর জামতলা এলাকার নিজ বাসায় মারা যান।
এর আগের দিন রবিবার মধ্যরাতে আইএইচএম কারখানার অপারেটর সুষ্মিতা খাতুন কনা (২৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সাহাপুর ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামের খমিন ইসলামের স্ত্রী এবং এক সন্তানের জননী।
নারী শ্রমিকদের এই মৃত্যুর ঘটনায় এবং প্রায় প্রতিটি কারখানার শ্রমিক পর্যায়ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এলাকায় তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিক ও সচেতন মহলের দাবি, দায়িত্বশীলদের অবহেলা ও গাফিলতিই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
সুষ্মিতা খাতুনের স্বামী খমিন ইসলাম, যিনি একই কোম্পানিতে কর্মরত, জানান— শনিবার দুপুরে কোম্পানির খাবার ও পানি খাওয়ার পর থেকেই কনার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। রবিবারও তিনি কর্মস্থলে যান। তবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ইপিজেডের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হলে সন্ধ্যায় বাড়িতে নেওয়া হয়, কিন্তু রাতেই অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান।
গত বৃহস্পতিবার থেকে রেনেসাঁ বারিন্ড, অস্কার, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিওসহ প্রায় ২৪টি কারখানায় দুপুরের খাবারের পর পানি পান করে শ্রমিকরা পেট ব্যথা, জ্বর, বমি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে থাকেন। এরপর মধ্যরাত থেকে শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার পর্যন্ত শত শত শ্রমিক ঈশ্বরদী, লালপুর ও পাবনা সদর হাসপাতাল এবং বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন।
বেড সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই বারান্দা, করিডোর ও সিঁড়িতে শুয়ে স্যালাইন নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৯ মে থেকে ৩ জুন দুপুর পর্যন্ত ৫৩৮ জন শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এবিএম শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “কর্মীদের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। কোম্পানির পক্ষ থেকে এবং আমাদের তরফ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কোম্পানি আর্থিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করছে।”
তিনি আরও জানান, ঈশ্বরদী ইপিজেডের ২৪টি চলমান কারখানায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত। হঠাৎ করে পানি-জনিত কারণে শ্রমিকদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইইডিসিআর থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত টিম এসে কাজ শুরু করেছে।
তদন্ত টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন ডা. মোস্তফা কামাল। পাশাপাশি পানি পরীক্ষার জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষ স্যাম্পল ঢাকায় পাঠিয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল এলেই অসুস্থতার প্রকৃত কারণ নিশ্চিতভাবে জানা যাবে।
শহীদ