ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দ্বীপে বন্দি দুই লাখ মানুষ: বৈরী আবহাওয়ায় টানা দুই দিন বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী

আ: রহিম গাজী, রাঙ্গাবালী

প্রকাশিত: ১৮:২২, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:২২, ৩০ মে ২০২৫

দ্বীপে বন্দি দুই লাখ মানুষ: বৈরী আবহাওয়ায় টানা দুই দিন বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী

পটুয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা দুই দিন ধরে মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় অন্তত দুই লাখ মানুষ কার্যত ‘দ্বীপে বন্দি’ অবস্থায় রয়েছেন। ফলে চিকিৎসা, খাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জরুরি যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দ্বীপবাসী।

সমুদ্র ও নদীবেষ্টিত এই দ্বীপাঞ্চলের সঙ্গে গলাচিপা ও কলাপাড়া হয়ে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল জলপথ। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় বিআইডব্লিউটিএ সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ থাকায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারও পুনরায় চালু হয়নি কোনো নৌপথ।

বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হলে দ্বীপবাসীদের পটুয়াখালী বা বরিশাল যেতে হয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় যাতায়াত বন্ধ থাকায় মারাত্মক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অসুস্থ ও বিপদাপন্ন পরিবারের সদস্যরা।

বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. কাশেম মিয়া বলেন, “গতকাল আমার ছোট ভাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বরিশাল নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোনো স্পিডবোট বা ট্রলার পাইনি। আমরা শুধু অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছি।”

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বাহিরের ট্রলার বা লঞ্চ না আসায় বাজারে নতুন পণ্য ঢুকছে না। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। যদিও এখনো বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়নি, তবে দীর্ঘ সময় জলপথ বন্ধ থাকলে তা তীব্র রূপ নিতে পারে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান বলেন, “মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সাময়িকভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফের চলাচল চালু হবে। জরুরি প্রয়োজনে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের সহায়তায় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এখনও সক্রিয় রয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতির সম্ভাবনা কম। নদীপথে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বলবৎ আছে এবং দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, রাঙ্গাবালীর এই বিচ্ছিন্নতা শুধু এককালীন দুর্যোগ নয়, বরং এটি দ্বীপাঞ্চলের দীর্ঘদিনের অবকাঠামোগত দুর্বলতার প্রতিফলন। যেখানে স্থলপথ নেই, সেখানে বৈরী আবহাওয়ার মতো পরিস্থিতি মানেই জীবন-জীবিকার মুখে চরম ঝুঁকি।

মিমিয়া

×