
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিং ও গাইড বইয়ের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা শিক্ষার গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মূল পাঠ্যক্রমের পরিবর্তে কোচিং সেন্টার ও গাইড বইয়ের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাশক্তির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারে যাওয়া লাগত না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কোচিং ও গাইড বইয়ের প্রভাব
গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে ৭৯% এবং মাধ্যমিকে ৮৫.৫% শিক্ষার্থী গাইড বই পড়ে। এছাড়া, একজন শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ার জন্য প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১,১০০ থেকে ৩,০০০ টাকার বেশি ব্যয় করে।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) পরিচালিত এক সামাজিক নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৪% শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেলেও তা ব্যবহার করেন না। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “কোচিংয়ের উদ্দেশ্য হলো পরীক্ষায় ভালো ফল, কিন্তু শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো বোধগম্যতা ও প্রয়োগ—সেটা হারিয়ে যাচ্ছে।”শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ
শুধু গুণগত মানই নয়, অতিরিক্ত কোচিংয়ের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ, প্রতিযোগিতার অতিরিক্ত চাপ এবং আত্মবিশ্বাস হ্রাস পাচ্ছে। স্কুলে ভালোভাবে না পড়িয়ে অনেক শিক্ষকই কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীল করে তুলছেন।
- শ্রেণিকক্ষে মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিত করা
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক মূল্যবোধ জোরদার
- কোচিং নির্ভরতা নিরুৎসাহিত করে স্কুলে পাঠদানে মনোযোগ বাড়ানো
- গাইড বই নিষিদ্ধ করে মূল বইকেন্দ্রিক পাঠদান উৎসাহিত করা
শিক্ষার পরিমাণগত উন্নয়ন হলেও গুণগত মানে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর গুণগত যোগ্যতা অর্জনের মান হতাশাজনক।
সমাধানের পথে শুরু না হবে শিক্ষা ব্যবস্থা অবনতি হবে।শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন, এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাশক্তি বিকাশে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এছাড়া, কোচিং ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল পাঠ্যক্রমে মনোযোগী করতে হবে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিং নির্ভরতা ও গাইড বইয়ের অতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত পাঠদান, এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে উৎসাহিত করা জরুরি।
এছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখতে হলে কোচিং নির্ভরতা কমিয়ে মূলধারার পাঠদানে জোর দিতে হবে। নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুখস্থ নির্ভর, চিন্তাহীন এক সমাজে পরিণত হবে।
রাজু