ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি প্রশাসন

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে লক্ষাধিক মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ৩১ মে ২০২৫

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে লক্ষাধিক মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে লক্ষাধিক মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা থেকে সলিমপুরের বিভিন্ন পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে অবৈধভাবে বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। এদের মধ্যে অনেকেই বাস করছেন পাহাড়ের চূড়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়। ফলে, প্রতিবছর টানা বর্ষার সময় পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড় থেকে বসতি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি।
সীতাকুণ্ডের পূর্ব দিকে রয়েছে সুবিশাল পর্বতমালা। উপজেলার বারৈয়াঢালা, বাড়বকু-, পৌরসভা, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর ইউনিয়নের পূর্বাংশে পাহাড় থাকায় এসব পাহাড়ে স্থানীয় নানান জাতি-গোষ্ঠীর অসহায় মানুষ বসতি স্থাপন করে বাস করছে। তবে এসব এলাকার মধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুরের বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিনে এসব পাহাড় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বারৈয়াঢালা, পৌরসভা, কুমিরা, সোনাইছড়ি এলাকার পাহাড়ে বসবাসকারীদের ৫০ শতাংশই ত্রিপুরা আদিবাসী। নিজস্ব কোনো ভূমি না থাকায় এরা স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকে পাহাড়ের সরকারি খাসজমি ও বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমিতে বসবাস করে আসছে।
এ বিষয়ে পৌর সদরের মধ্যম মহাদেবপুর পাহাড়ের বাসিন্দা মিঠুন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আমরা বাধ্য হয়ে এখানে থাকছি। কারণ আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। আমরা যাব কোথায়? তাই বাধ্য হয়ে এখানে থাকছি। বর্ষা এলে মাইকিং করা হয় নিচে নেমে আসার জন্য। কখনো নেমে যাই, আবার কখনো থেকে যাই বাড়িঘরের মায়ায়।
একইভাবে অসহায়ত্বের কথা জানান, সোনাইছড়ির ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা ও কুমিরার রবীন্দ্র ত্রিপুরা। কাঞ্চন বলেন, সরকার আমাদের নিজস্ব ভূমি দিলে আমরা সমতলে ফিরতে চাই। অনেকবার ভূমির জন্য ধরণা দিয়েছি। কিন্তু সুফল পাইনি। বাধ্য হয়ে অন্যের জায়গায় আমরা বসবাস করছি। 
এলাকাবাসী জানায়, জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটি ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সীতাকু-ের সর্বদক্ষিণের অংশ এবং চট্টগ্রাম মহানগরের একেবারে দ্বারপ্রান্তে। এখান থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছানো যায়। এখানকার সঙ্গে হাটহাজারী, বায়েজিদ, আকবরশাহসহ বিভিন্ন স্থানের সংযোগ থাকায় চট্টগ্রামে কাজে নিয়োজিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ সলিমপুরের পাহাড়কেই বেছে নিয়েছেন বসবাসের জন্য। এ কারণে ক্রমেই এখানে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। সলিমপুরে দুটি সমিতি রয়েছে। সীতাকু- উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, এই দুটি সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি।
এ কারণে এলাকাটি নিয়ে বর্ষা মৌসুমে বাড়তি চিন্তায় থাকতে হয় প্রশাসনকে। বিভিন্ন সময় এখানে বড় আকারের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা করতে পারে না প্রশাসন। তবে, টানা বর্ষার সময় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে সমতল ভূমিতে নামতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু সুযোগ বুঝে তারা আবারও সেই ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে ফিরে যায়। ফলে বেশ কয়েকবার পাহাড়ধসে সেখানে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
সীতাকু- উপজেলা ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন  কর্মকর্তা  জামিরুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে বেশ কয়েকবার অনেক পরিবারকে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু তারা আবারও পাহাড়ে গিয়ে বসবাস করছে। তিনি আরও বলেন, এখানে এত বেশি মানুষ বসবাস করে যে, একসঙ্গে তাদের নামিয়ে এনে পুনর্বাসন করাও সম্ভব নয়। তবুও দুর্যোগের সময় আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে তাদের ঝুঁকিমুক্ত রাখার কাজ করে থাকি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, লঘু চাপের প্রভাবে অতিভারি বর্ষণে সীতাকু- উপজেলায় পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে ভারি বর্ষণজনিত কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। সীতাকু-ে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণকে সরকারি নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

×