
ছবি:সংগৃহীত
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলায় গভীর নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে তিনদিন ধরে কখনো মাঝারি, কখনো ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। জোয়ারের চাপে উপজেলার পাঁচটি পোল্ডারের বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গলাচিপা পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ সময় পার করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি ঘরে ঢুকে পড়েছে, অনেক পরিবারে চুলা পর্যন্ত জ্বলেনি, বন্ধ রয়েছে দুপুরের খাবার। কুটিয়ালপাড়ার ব্যবসায়ীদের মজুদকৃত ধান, ডাল ও বাদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চলও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
নদী বেষ্টিত উপজেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ফেরি। কিন্তু জোয়ারের পানিতে ফেরিঘাটের জেটি তলিয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণভাবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরেও এ দৃশ্য দেখা গেছে।
পানপট্টি ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় ৫৫/৩ নম্বর পোল্ডারের প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে বিবির হাওলা, গুপ্তের হাওলা, সতীরাম ও খরিদা – এই চারটি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আরও ১০-১২টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। ফলে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, পুকুর ও মাছের ঘের। রতনদী-তালতলী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মামুনতক্তি গ্রামে মোস্তফা মাতুব্বরের ঘরের ওপর ঝড়ে চাম্বল গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধবিহীন চর কাজল ইউনিয়নের চর শিবার ধলার চর এলাকায় প্রায় ২০০ বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বড়চর কাজল এলাকার ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় আরও ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। গলাচিপা সদর ইউনিয়নের আগুনমুখা চরের ৬০টি ঘর এবং চর কারফারমার ৯০টি ঘর পানিতে ডুবে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা হালিম মিয়া।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন ডাকুয়া, গজালিয়া, কলাগাছিয়া ও নলুয়াবাগীর মানুষ।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত সহায়তা দেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
মারিয়া