ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভোলায় ঝড়ো বাতাস বৃষ্টি মাছঘাটসহ দুুটি ট্রলার বিধ্বস্ত

হাসিব রহমান, ভোলা

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৯ মে ২০২৫

ভোলায় ঝড়ো বাতাস বৃষ্টি মাছঘাটসহ দুুটি ট্রলার বিধ্বস্ত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও বিকালে ঝড়ো বাতাস হয়েছে। চরফ্যাশনের হাজারি গঞ্জ চেয়ারম্যান বাজার সড়কে ঝড়ো বাতাসে গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। অপরদিকে ভোলা থেকে সকল ধরনের নৌ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোলা সদরের শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল এলাকায় মেঘনা নদীর ঢেউয়ের আঘাতে মাছঘাট ও ঘাটে বাধা মাছধরা একটি নৌকা বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে দোকানঘর ও নৌকা নদীতে ভেসে গেছে। এসময় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়। অপর দিকে বিকালে ভোলার তজুমদ্দিনের স্লইজগেইট এলাকায় জোয়ারের পানির তোরে রিংবাধের ১০ মিটার ভেঙ্গে গেছে। এতে করে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ভোলা পানি উন্নয়নের বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান আজ বৃহস্পতিবার জানান, ভাটার সময় পানি কমলে ওই বাধ সংস্কার করা হবে। এছাড়া কোথায়ও কোন বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ বাধ নেই। এদিকে মেঘনা নদীর পানি বিপদ সিমার ১১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল হয়ে উঠে। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি চার পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিচ্ছিন্ন চর এবং বাঁধের বাইরের কয়েক হাজার বাড়িঘর তলিয়ে যায়। ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট এলাকায় বুধবার বিকালে  চলতি মৌসুমে নির্মিত রিংবাধে মেঘনা নদীর পানি আঘাত হানে। এসময় মেঘনা নদীর পানি উপচে পড়ছে লোকালয়ে। এতে করে নদী তীরের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান,বিকালে রাজাপুর ইউনিয়নের রামদাসপুর,দক্ষিন রাজাপুর,কন্দকপুর,চর মোহাম্মদ আলী,আনন্দ বাজার এলাকায় বেড়ি বাঁধের বাইরে অতিজোয়ারের ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ৩/৪ হাজার ঘর বাড়ি তলিয়ে মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অপর দিকে বৃহস্পতিবার বিকালে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট অতি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। 


এদিকে ভোলা নদী বন্দরের ট্রফিক কর্মকর্তা মোঃ জসিম জানান,মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী উত্তাল হয়ে ওঠায় ভোলা - বরিশাল, ভোলা -ঢাকা, ভোলা -লক্ষীপুর রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি ভোলা - বরিশাল, ভোলা - লক্ষীপুর রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।এতে করে দুরদুরান্ত থেকে আসা যাত্রী লঞ্চ ঘাটে এসে বিপাকে পড়ে। ভোলা ইলিশা ফেরী ঘাটে বহু যানবাহন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. কাওসার আহমেদ খান জানান, বুধবার  রাত থেকে ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরী ঘাট ও ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বরিশালের লাহার হাট ঘাটে কোনো ফেরি ছেড়ে যায়নি। 


ভোলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, ভোলায় গত ২৪ঘন্টায়  (বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ) ৬১.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ৩  নম্বর সংকেট চলছে। 


এদিকে ভোলার মনপুরায় ঘূর্ণীঝড় শক্তি’র প্রভাবে মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হয়ে ৫-৭:ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। এতে ওই সমস্ত এলাকার আনুমানিক ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 
এছাড়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন বেড়ীবাঁধহীন চরকলাতলী ও চরনিজামে বেশিরভাগ এলাকা জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিখন বনিক। তিনি জানান, দুর্গত এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারে ব্যবস্থা করা হয়েছে। চরকলাতীতে গরু ও ছাগল মারা গিয়েছে বলে জানান তিনি। বুধবার রাত থেকে টানা ধমকা হাওয়াসহ ভারীবর্ষণে পুরো উপকূলজুড়ে আতংক বিরাজ করছে।


এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টায় মেঘনায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩ হাজার বাসিন্দা দুর্ভোগে পড়েছেন।  উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট, চরমরিয়ম, সোনারচর ও চরযতিন গ্রামের নিম্নাঞ্চল জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। এছড়াও ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকা, আন্দিরপাড় গ্রাম ও কাউয়ারটেক এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ওই সমস্ত এলাকায় ৫-৭ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো: আজাদ জাহান জানান, মনপুরার কলাতলি ইউনিয়নে কিছু গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাল চর,কুকরি মুকরিতে পানি বেড়েছে।বোরহানউদ্দিনের হাসান নগরে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তজুমদ্দিনের স্লুইজগেট এলাকায় বেড়ি বাধ কিছু অংশ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।    

আঁখি

×