
ছবি:সংগৃহীত
সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ, ঢাকার অপরাধ জগতের সেই কুখ্যাত দুই নাম। একসময় এই নামগুলোই রাজধানীর অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রক ছিল। এক যুগেরও বেশি সময় পরে, তারা আবার ফিরে এসেছিল, তবে রাজপথে নয়, অস্ত্র, হুন্ডি আর রক্তাক্ত ষড়যন্ত্রের ছায়া নিয়ে।
সেই ফিরে আসা ছিল নিঃশব্দ, কিন্তু ভয়াবহ। অন্ধকারের কোণ থেকে ছায়ার মতো উদয় হয়েছিল তারা। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে ফের প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল সেই পুরনো নাম—সেভেন স্টার গ্যাং ও তার গডফাদার সুব্রত বাইন। গুলশান থেকে হাতিরঝিল—যেখানেই পড়ত তাদের ছায়া, ভেসে যেত রক্তে। খুন, জমি দখল, চাঁদাবাজি আর শুটার বাহিনীর ছত্রছায়ায় রাজধানীর অপরাধ জগত নাচছিল এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা হয়ে।
সেই সুতো ছিঁড়তেই সেনাবাহিনী অভিযান চালায় কুষ্টিয়ায়। ধরা পড়ে ‘মৃত’ বলে প্রচারিত সুব্রত বাইন ও তার সঙ্গী মোল্লা মাসুদ। তবে শুধু ধরা পড়াই নয়, তদন্তে বেরিয়ে আসে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা শুনে গা শিউরে ওঠে। জানা যায়, তারা শুধু খুন বা চাঁদাবাজিতেই লিপ্ত ছিল না, দেশ ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল এই দুই অপরাধী।
জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, ভারতের হুন্ডির টাকা দেশে এনে অস্ত্র কেনা হতো, যেগুলো তুলে দেওয়া হতো রাজধানীর উঠতি তরুণদের হাতে। তাদের অনেকেই ছিল উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান, যাদের নাম পর্যন্ত নেই পুলিশের খাতায়। তাদের টার্গেট ছিল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। উদ্দেশ্য ছিল একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দেওয়া।
এই গুজব ছড়িয়ে, আরেক দলের নেতাকে খুন করিয়ে লাভবান হতো তৃতীয় পক্ষ। সেই তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে ছিল নিয়মিত যোগাযোগ বিদেশে থাকা কিছু পলাতক রাজনীতিবিদের। পাঠানো হতো টাকা, আর স্যাটেলাইট ফোনে দেওয়া হতো নির্দেশনা।
২০০১ সালে সরকার যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেখানে এক নম্বরে ছিল সুব্রত বাইন। তার অন্যতম সহযোগী ছিল মোল্লা মাসুদ। তদন্তে জানা গেছে, তারা অস্ত্র কোথায় গেল, কার হাতে তুলে দেওয়া হলো, সব কিছু জানিয়েছে। এখন ডিবির একাধিক টিম সেই তথ্য যাচাই করে তালিকা ধরে অভিযান চালাচ্ছে।
রাজনীতির আড়ালে ব্যবসা, ব্যবসার আড়ালে গড়ে ওঠা নতুন অপরাধচক্র, সব মিলিয়ে এটি শুধু দুজন কুখ্যাত সন্ত্রাসীর গল্প নয়। এটি হতে পারে বৃহৎ কোনো রাজনৈতিক দাবার ছক।
সূত্র:https://youtu.be/1k2Gl5T8RwA?si=sKbW_WnWje5g1DAr
আঁখি