
ছবি: জনকণ্ঠ
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এখানকার কাঁঠাল এখন বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে খাজা জাতের কাঁঠাল বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন এখানকার চাষিরা।
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এবার কাঁঠালের উৎপাদন অনেক বেশি। নারায়ণহাট, শান্তিরহাট, দাঁতমারা, হেঁয়াকো, বাগানবাজার ও কাঞ্চননগরের পাহাড়ি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে খাজা কাঁঠালের উৎপাদনে হটস্পট হিসেবে পরিচিত কাঞ্চননগর এলাকা।
চলতি মৌসুমে ফটিকছড়িতে ১ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন, যা পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাহাড়ি লালমাটির গুণে বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২, দোসরা, খাজা ও গালা জাতের নানা সুস্বাদু কাঁঠাল চাষ করছেন স্থানীয়রা। এই কাঁঠাল সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে হেঁয়াকো ও রামগড় এলাকায় এনে বিক্রি করছেন তারা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারেও কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজার থেকে পাইকাররা কাঁঠাল কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। তবে অনেক সময় পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
স্থানীয় বাগান মালিক মন্নান মিয়া বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে কাঁঠাল বাজারে নিয়ে আসি, কিন্তু প্রায়ই পাইকাররা ন্যায্য দাম দিতে চান না। সিন্ডিকেট করে জোর করে কম দামে কিনে নেন। ফটিকছড়িতে হিমাগার থাকলে আমরা এমন পরিস্থিতির শিকার হতাম না।’ তিনি আরও জানান, এবছর ফলন ভালো হয়েছে।
ফল ব্যবসায়ী জামশেদ মিয়া বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে মৌসুমি ফলের ব্যবসা করছি। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানকার কাঁঠালের চাহিদা অনেক বেশি। খাজা কাঁঠাল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।’ তিনি জানান, পাহাড়ি লালমাটির জন্য এখানকার কাঁঠালের স্বাদ অনন্য।
সিলেট থেকে আগত পাইকার আলি আহম্মদ বলেন, ‘ফটিকছড়ির কাঁঠালের স্বাদ খুব ভালো। আমি হেঁয়াকো থেকে কাঁঠাল কিনে সিলেট ও ঢাকায় বিক্রি করি। তবে পথে পথে পুলিশ ও বিভিন্ন জায়গায় টোল দিতে হয়, ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লাভ খুবই কম।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর ১ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা আবহাওয়ার প্রতিকূলতা উৎপাদনে কোনো প্রভাব ফেলেনি।’ তিনি জানান, ফটিকছড়ির কাঁঠাল এখন শুধু দেশের বিভিন্ন জেলায় নয়, বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর প্রায় ১৬ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি হয়েছিল। এবছর উৎপাদন ভালো হওয়ায় প্রায় ১৭ কোটি টাকার বিক্রির আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল ৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শহীদ