
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তি ও অধ্যবসায় থাকলে কোন কিছুই কাউকে দমিয়ে রাখতে পারে না এটির অন্যতম উদাহরণ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের প্রবাস ফেরত মুহাম্মদ এনাম। দীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়েছেন প্রবাসে। সে জীবনে ছিল ব্যবসা বাণিজ্য, ছিল আয়ও। কিন্তু ছিল না স্থায়িত্ব। দেশে ফিরে যেন জীবন বদলে গেলো একেবারেই। এখন তিনি একজন খামার উদ্যোক্তা। এনাম যখন দেশে ফিরে আসেন তখন শুরু হয় ঠিকে থাকার লড়াই। ব্যবসা শেষ, পুঁজি নেই। এ অবস্থায় নানা মানুষের কাছে ধারদেনা করে চলতে থাকেন। অভাব যেন তার পিছু ছাড়ছিল না। নিজের অর্জিত কিছু টাকা দিয়ে কিনেন একটি ষাঁড় গরু। এভাবেই শুরু তার খামার জীবনে যাত্রা। নিজের অল্প সঞ্চয় ও অন্যদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে কিনেন একটি ষাঁড় গরু। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম খামারিক জীবনের শুরু। সে একটি গরু থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে তার খামারে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ২০টি গরু। তার খামারের নাম শতাব্দী এগ্রো ফার্মস। নিজের বাড়ির সামনে ছোট্ট পরিসরে শুরু করা খামারেই এখন গরুগুলোর জন্য তৈরি হয়েছে গোছানো শেড, রয়েছে পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাপনা।
মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিজের বাড়ির সামনে এনাম গড়েছেন দারুণ এক গরুর খামার। শুরুতে ১টি গরু দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। সেই থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গরুর সংখ্যা। গরুগুলো বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিজেই কিনেছেন। খামারে দিনরাত পরিশ্রম করে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন এনাম। কখনো ঘাস খাওয়াচ্ছেন, পানি দিচ্ছেন আবার কখনো গোবর পরিষ্কার করছেন। ছোট-বড় ২০টি গরুতে পরিপূর্ণ চমৎকার তাঁর খামারটি।
কাজের ফাঁকে কথা হয় সফল খামারি মুহাম্মদ এনামের সাথে। তিনি জানালেন সফলতার গল্প। তিনি বলেন, ‘১টি গরু দিয়ে শুরুর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দুই বছর আগে ১০ লাখ টাকা খরচ করে ২০টি গরুর ধারণ ক্ষমতার শেড নির্মাণ করেছি। ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’
কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, 'অনেকেই ইতিমধ্যে খামারে এসে গরু দেখাদেখি শুরু করেছেন। দরদাম করেছেন। রয়েছে অনলাইনে গরু দেখা ও কেনার সুযোগ। ক্রেতার বাড়িতে পাঠানোরও ব্যবস্থা আছে।’
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে এনাম বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উচিত। বর্তমানে পশু ও পশু খাদ্যের মূল্য চড়া। তাই মূলধনের অতিরিক্ত অর্থের জোগান থাকা প্রয়োজন। নইলে ব্যবসা প্রসারে বাধা থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খামারে গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ঘাস, খড়, গমের ভুসি, লবণ, খৈল, বুটের ভুসি খাওয়ানো হয়। প্রতিটি গরুর পেছনে বছরে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।’
বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে এ সফল খামারি বলেন, ‘পরিশ্রম করে উদ্যোক্তা হতে পারেন। ব্যাপক হারে না হলেও দুই-চারটা গরু দিয়ে শুরু করতে পারেন। এতেই সফল খামারি হিসেবে পরিচিতি পাবেন।’ তবে গরুর খাবারের দাম বাড়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে কিছু পাইনি। তবে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামার দেখেছেন।’
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মমিন বলেন, ‘এনাম একজন সফল খামারি। তাঁকে দেখে অনেকেই খামার করতে উদ্বুদ্ধ হবেন। তিনি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। খামারটি বেশ সম্ভাবনাময়।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকার চায় মানুষ উদ্যোক্তা হোক। এনাম যেভাবে নিজের স্বপ্ন তৈরি করছেন, আমরা চাই তাকে সহযোগিতা করতে।’
একটা গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন এনাম। এখন তাঁর পরিচয়—একজন সফল খামারি। যেখানে একসময় অভাব ছিল, এখন সেখানে গরু, শেড আর নতুন স্বপ্ন।’
মিরাজ খান