ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নাটোরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৫ লক্ষ পশু

কালিদাস রায়, নাটোর জেলা

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ২৮ মে ২০২৫

নাটোরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৫ লক্ষ পশু

ছবি: জনকণ্ঠ

ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে নাটোর জেলায় ৫ লক্ষ পশু ক্রয় করেছেন খামারিরা। শেষ সময়ে পশুর যতœ এবং বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হবে এসব পশু। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাটে ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে প্রস্তুতকৃত পশু। ঈদে নাটোর জেলায় প্রায় ২ কোটি টাকার কোরবানির পশু বেচাকেনা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ। এছাড়া কোরবানির হাট ও মহাসড়কে গরুবোঝাই যানবাহনগুলোতে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তসহ মনিটরিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলায় ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ২১৫টি  পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। জেলায় ১৯ হাজার ৭৪৪টি খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে এসব পশু। এরমধ্যে নাটোর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৩২৮টি খামারে ৮৯ হাজার ২৩০টি পশু, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৪৮৮টি খামারে ২৯ হাজার ৩৯৪ টি, গুরুদাসপুর উপজেলায় ২ হাজার ৭২৫ টি খামারে ৯৭ হাজার ৮৯৪টি, সিংড়া উপজেলায় ৩ হাজার ২৮২টি খামারে ৯৭ হাজার ২৬৭ টি, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ২ হাজার ৯৬৭টি খামারে ৬৬ হাজার ২৯টি, লালুপর উপজেলায় ৩ হাজার ৭৬২টি খামারে ৭৬ হাজার ১৭৬টি এবং নলডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ১৯২টি খামারে ৫৮ হাজার ২২৫টি পশু রয়েছে। এর মধ্য ষাঁড় গরু রয়েছে ৮৬ হাজার ৬৮৬টি, গাভি গরু ১৬ হাজার ৮২৩টি, বলদ গরু ১৪ হাজার ৮০৮টি, মহিষ ৭ হাজার ৯২৮টি, ছাগল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৭টি, ভেড়া ৩৮ হাজার ৪৫১টিসহ আরও ৩২টি অন্যান্য পশু রয়েছে। ঈদে জেলায় প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ২০৫ কোরবানির পশু জবাই করা হবে। এছাড়া উদ্বৃত্ত প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার ১০টি পশু ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হাটে বিক্রি করা হবে।

নাটোরে জেলায় উল্লেখযোগ্য পশুর হাটের মধ্যে নাটোর শহরের তেবাড়িয়া, বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া হাট, সিংড়ার ফেরিঘাটে, বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় এবং লালপুর উপজেলার মধুবাড়ীতে শেষ সময়ে কোরবানির পশু কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু কিনতে আসছেন এসব হাটগুলোতে। তাছাড়াও অস্থায়ীভাবে করোটা, গোবিন্দপুর, গুনাইখারা, হাতিয়ান্দহ, জোনাইল হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হবে। এছাড়া জেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুইটি অনলাইন প্ল্যাটফরম ‘নাটোর পশুর হাট’ ও ‘অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাট থেকে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কোরবানির হাট ও মহাসড়কে গরুবোঝাই যানবাহনগুলোতে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হাটগুলোতে জালটাকা শনাক্তসহ মনিটরিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা পুলিশ।

শহরের তেবাড়িয়া এলাকার খামারি মোহর আলী জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য খামারে ৮টি ষাঁড় গরু প্রস্তুত করেছি। আমার খামারে শুধু খৈল, গম, ভুসি, ছোলা এবং সবুজ ঘাস খাইয়ে খুব সহজেই পশু মোটাতাজা করেছি। যদি বাজার ভালো থাকে তাহলে প্রতি গরু দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবো।

খামারে পশু কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম জানান, আমি প্রতি বছর খামার থেকে গরু ক্রয় করি। খামার থেকে গরু কিনলে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে লালন পালনের বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা বেশি মনে হচ্ছে।

নাটোর জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারিদেরকে প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান হচ্ছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, ঈদে কোরবানির পশু জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘ্নে পাঠানো এবং চাঁদাবাজি রোধে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাটগুলো মনিটরিং বাড়ানোসহ জালটাকা শনাক্ত ও মলম পার্টিমুক্ত রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সাব্বির

×