ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চলছে শত বছর পূর্ণ উৎসবের প্রস্তুতি

মিশ্রিপাড়ার বৃহৎ সীমা বৌদ্ধবিহার এলাকা পর্যটকের পদচারণায় প্রাণচাঞ্চল্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৮ মে ২০২৫

মিশ্রিপাড়ার বৃহৎ সীমা বৌদ্ধবিহার এলাকা পর্যটকের পদচারণায় প্রাণচাঞ্চল্য

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিশ্রিপাড়া রাখাইন পল্লীতে দেশের অন্যতম বৃহৎ বুদ্ধ মূর্তিটি দেখতে পর্যটক-দর্শনার্থীর ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশালকায় মূর্তি স্থাপিত সীমা বুদ্ধবিহারটি সংস্কারের ফলে নিরাপত্তা নিয়ে রাখাইনদের শঙ্কা কেটে গেছে। বিহারটির চারদিকে অনেক আগেই পাকা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। ইন্দোচীনের সৌকর্য ঠিক রেখে বিহারটির সংস্কার করায় সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বেড়েছে। প্রতিদিন এখানে শত শত দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে। মুখরিত থাকছে মিশ্রিপাড়া রাখাইন পল্লীসহ বুদ্ধবিহার এলাকা। বছরখানেক আগেই বুদ্ধবিহার এলাকার বাউন্ডারির মধ্যের বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার হওয়ায় এখন স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। রাখাইনদের উৎকণ্ঠা কেটে গেছে। পল্লীর রাখাইন নারীরা বুনছেন নিজেদের তাঁতে চাদরসহ বিভিন্ন বস্ত্র। জমে উঠেছে বিহারের সামনের মার্কেটের বেচাকেনা।

প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ বিহারটি সিডর আইলায় বিধ্বস্ত হয়। টিনের বেড়া এবং চাল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ৩২ ফুট উঁচু বিশালকায় বুদ্ধ মূর্তিটির উপরে বৃষ্টিতে পানি পড়ত। বুদ্ধ বিহারের দরজা, জানালা ভাঙ্গা ছিল। ছিল না বিহার এলাকার বাউন্ডারি। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা বৃহৎ এ মূর্তিটি দেখতে গিয়ে হতাশা ব্যক্ত করত। রাখাইনরা নির্বিঘ্নে প্রতিদিনকার ধর্মীয় আচার পালন করতে পারতেন না। বর্তমানে সেসব দুরবস্থা কেটে গেছে।

জার্মান সরকারের জিআইজেড প্রকল্প ও জার্মান দূতাবাসের উদ্যোগে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করে আরও দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে বুদ্ধ বিহারটি। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সংস্কার করা বুদ্ধ বিহারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স ড. ফার্দিনান্দ ফন ভেইয়ে পুনঃনির্মিত বিহারটির ফলক উম্মোচন করেন। 

ইন্দোচীনের সৌকর্যের পুরনো আদল ঠিক রেখে এ বিহারটি পুনঃনির্মান করা হয়েছে। ৪৪০ মিটার বাউন্ডারিসহ মূল ফটকের গেট করা হয়েছে। ৬৩ মিটার দীর্ঘ দেয়াল করা হয়েছে। ২২ মিটার সংযোগ সড়ক করা হয়েছে। একটি গভীর নলকুপসহ ওভারহেড ট্যাংকি এবং টয়লেট করা হয়েছে। এরপরে বিভিন্ন দান-অনুদানে ২০২৩ সালে প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয় করে বৌদ্ধবিহারের স্থাপনাটি চারদিকে কিছুটা প্রশস্ত করা হয়েছে। তবে রাখাইনরা ক্ষুব্ধ বিগত সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী তাদের জন্য এগিয়ে আসেননি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিহারাধ্যক্ষ উত্তম ভিক্ষু।

তিনি জানান, প্রায় এক'শ বছর আগে আসাম থেকে আসা উ নারাথা মহাথেরো এই বৌদ্ধবিহারটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করেন। এখানকার প্রয়াত রাখাইন হেডম্যান ( মাদবর) মিশ্রি তালুকদার দুই একর জমি দান করেন। যার ওপর প্রতিষ্ঠিত আজকের বহুল পরিচিত সীমা বুদ্ধ বিহার। আগামী তিন মাস পরে এই সীমা বুদ্ধ বিহারের শত বছর পূর্ণ হবে বলে জানালেন বিহারাধ্যক্ষ।

বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শতবর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। প্রায় ৩২ ফুট উঁচু এ বুদ্ধ মূর্তিটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি বলে রাখাইনদের দাবি। বুদ্ধ-বিহার এলাকায় রয়েছে পানি সংরক্ষণের একটি দৃষ্টি নন্দন কুয়া। বাউন্ডারি ঘেরা ফুলের বাগান। সকাল-বিকাল পাড়ার রাখাইন নারী-পুরুষরা বিহার অঙ্গনে ধর্মীয় প্রার্থনা করে আসছেন।

পাড়ার বাসিন্দা আফ্রু মং বলেন, জায়গা দখলের সমস্যাটিও মিটে গেছে। এখন কোনো সমস্যা নেই। তবে কুয়াকাটা থেকে এই বৌদ্ধ বিহারে আসার সড়কটি মেরামত করা প্রয়োজন। এছাড়া এখানে পর্যটকের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন যানবাহনের ভাড়াও ঠিক করে দেওয়ার কথা জানালেন রাখাইন নেতৃবৃন্দ।

সজিব

×