ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

আধুনিকতার জোয়ারে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নিদর্শন ‘বাঁশের ডুলি’

রুবেল হোসাইন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২৭ মে ২০২৫

আধুনিকতার জোয়ারে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নিদর্শন ‘বাঁশের ডুলি’

গ্রামীণ বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় একসময় ধান সংরক্ষণের অন্যতম ভরসা ছিল বাঁশের তৈরি গোলা বা ডুলি। ধান রাখার জন্য ব্যবহৃত এই পাত্র শুধু একটি সংরক্ষণ মাধ্যমই নয়, বরং এটি ছিল একটি পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক।

কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে এখনও দেখা মেলে এই ঐতিহ্যবাহী ডুলির। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জীবনের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই প্রাচীন উপকরণ। প্লাস্টিক, টিন ও ধাতব পাত্রের সহজলভ্যতা, উৎপাদন ব্যয় কম হওয়া এবং বাঁশের সংকটের কারণে বাঁশের তৈরি ডুলির ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে।

প্রবীণ কৃষকরা জানান, একসময় বাড়িতে যদি ডুলি ভর্তি ধান না থাকত, তাহলে সেই পরিবারকে গরিব বলা হতো। ছেলে-মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রেও ডুলি ভর্তি ধান ছিল এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতির মানদণ্ড। অনেকে চোর-ডাকাতের ভয়ে ডুলির ধানের মধ্যেই স্বর্ণ, রূপা বা অর্থ লুকিয়ে রাখতেন।

ডুলি বা গোলার অন্যতম সুবিধা হলো এতে ধান দীর্ঘ সময় ভালো থাকে, পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং এটি পরিবেশবান্ধব। ধান কেটে এনে রোদে শুকিয়ে এই ডুলিতে সংরক্ষণ করতেন কৃষকরা। প্রয়োজন অনুযায়ী ধান বের করে চাল উৎপাদন করতেন অথবা বিক্রি করতেন।

কিন্তু বর্তমানে বাঁশের দুষ্প্রাপ্যতা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ডুলি তৈরি করা ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। ফলে কৃষকরা এখন টিন, প্লাস্টিক কিংবা পাকা গোলার দিকে ঝুঁকছেন। এসব আধুনিক পাত্র বাইরে স্থাপন করা যায় এবং ঘরের ভেতরে স্থান সংকুলান কম হয়।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বাঁশের তৈরি গোলা শুধু একটি ব্যবহার্য উপকরণ ছিল না, এটি ছিল গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি আবেগময় অংশ। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত নয়, যা আমাদের জন্য বড় দুঃখের বিষয়।

এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ, যেখানে বাঁশচাষকে উৎসাহিত করা, কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং গ্রামীণ পণ্যের মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে বাজারজাতকরণ করা যেতে পারে।

মিমিয়া

×