ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রভাবে কমেছে রুটি বিক্রি, চলছেনা দোলেনার সংসার

সোহাগ খান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২৭ মে ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৭, ২৭ মে ২০২৫

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রভাবে কমেছে রুটি বিক্রি, চলছেনা দোলেনার সংসার

রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকায় ফুটপাতের এক কোণে বসে রুটি বিক্রি করেন দোলেনা বেগম। এক দশক ধরে এই রুটির দোকানই তার সংসারের ভরসা। স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের পড়াশোনা, মেয়ের বিয়ে ও ছোট ছেলের মাদ্রাসার খরচ সবই চলে এই ব্যবসার ওপর। কিন্তু এখন সেই রুটি বিক্রি কমে এসেছে অর্ধেকে।

দোলেনা বলেন, “আগে দিনে ১০-১২ কেজি আটার রুটি বিক্রি করতাম। এখন পাঁচ-ছয়ের বেশি হয় না। তাও অনেক সময় পড়ে থাকে। আগে রিকশাচালকরা খেত, এখন সবাই অটো চালায়। তারা ক্লান্ত হয় না, ক্ষুধাও পায় না।”

ফুটপাতের এই ছোট দোকানে বিক্রি হয় রুটি-গুড় ১৫ টাকায়, রুটি-ভাজি ২০ টাকায় এবং রুটি-ডিম ৩০ টাকায়। সবই নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে। অথচ মাস শেষে আয় হয় মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা। খরচ যেখানে ১০-১২ হাজার, সেখানে এই আয় দিয়ে চলা দোলেনার জন্য এখন দুঃস্বপ্নের মতো।

রিকশাচালক মো. সিরাজ বলেন, “আগে প্যাডেল রিকশা চালিয়ে খুব ক্ষুধা লাগত। তখন ফুটপাতে বসেই খেতাম। এখন ব্যাটারিচালিত অটো চালাই, পরিশ্রম কম, তাই ক্ষুধাও কম।”

একই কথা বলেন অটোচালক মো. হানিফ, “বাড়ি থেকেই খেয়ে বের হই। সময় হলে আবার বাড়ি গিয়ে খাই। এখন বাইরে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।” ফলে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যাওয়ায় ফুটপাতের খাবার বিক্রেতাদের ব্যবসাও মুখ থুবড়ে পড়ছে।

মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকার আরেক রুটি বিক্রেতা তহমিনা বলেন, “গতকাল ৮ কেজি রুটি বিক্রি করে হাতে পেয়েছি মাত্র ১৪০ টাকা। এই টাকা দিয়ে কিছুই চলে না। দিন শেষে বুঝতে পারি না, বাসা ভাড়া দেব, নাকি ছেলেমেয়েকে খাওয়াব।”

ফুটপাতে রুটি বিক্রি করে যাদের সংসার চলে, তাদের জীবনে এখন নেমে এসেছে এক নিঃশব্দ দুর্যোগ। প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি নির্ভরশীল পেশাগুলো হয়ে পড়েছে অপ্রয়োজনীয়। দোলেনাদের মতো অনেকেই এখন পেটের ক্ষুধার চেয়ে বড় লড়াইয়ে নেমেছেন টিকে থাকার।

মিমিয়া

×