ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নীড়হারা শালিকের গল্প: আশ্রয়ের খোঁজে এক ক্লান্ত প্রাণ

শফিকুল,ইসলাম শামীম,নিজস্ব সংবাদদাতা,রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১৫ মে ২০২৫

নীড়হারা শালিকের গল্প: আশ্রয়ের খোঁজে এক ক্লান্ত প্রাণ

ছবি: সংগৃহীত

বৃষ্টিভেজা এক ব্যস্ত দুপুরে, শহরের কোলাহলের মাঝে হঠাৎ নজরে পড়ে গেল একটি শালিক পাখি। মাথা নিচু, ডানায় ক্লান্তি বৃষ্টিতে ভিজে নিঃশব্দে আশ্রয় খুঁজে ফিরছে সে। কুড়িয়ে নেয়া কোনো পুরোনো কার্ডবোর্ড কিংবা দোকানের ছাউনির নিচে খানিক শুকনো জায়গা পেলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

এ শহর যেমন মানুষের, তেমনি অন্য প্রাণীরও। কিন্তু এই শহরে নীড়হারা একটি পাখির ঠাঁই হয়তো খুব কঠিন। যতই মানুষের ভিড় বাড়ে, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গাছ, ঝোপঝাড়, পাখিদের বাসা বাঁধার জায়গা। ফলে বহু পাখিই আজ হারাচ্ছে তাদের চিরচেনা ঠিকানা।

এই শালিকটি হয়তো এক সময় কোনো পুরোনো গাছের খোঁপে, বা কোনো ভবনের কার্নিশে আপন নীড় গড়ে তুলেছিল। কিন্তু হয়তো সেই গাছটি কাঁটা পড়েছে, বা ভবনের পুনঃনির্মাণে উধাও হয়ে গেছে তার আবাস। এখন শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, গাড়ির হর্ন আর মানুষের চিৎকারের ভিড়ে সে খুঁজছে একটু নিরাপদ আশ্রয়। যেখানে শুধু মাথাটা গুঁজে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া যায়।

বৃষ্টির শেষে মানুষ যখন নিজেদের ঘরে ফিরছে, তখন এই শালিকটি থেকে যাচ্ছে উন্মুক্ত আকাশের নিচে। লোকালয়ের এক কোণে আশ্রয় নিয়েই হয়তো সে আবার সামনের দিনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই চিত্র শুধু একটি শালিকের নয়। এ যেন শহরের পরিবর্তনশীল পরিবেশে প্রতিনিয়ত বিপন্ন হয়ে পড়া হাজারো পাখির প্রতীক। শহর বাড়ছে, মানুষ বাড়ছে, কিন্তু প্রকৃতির জন্য বরাদ্দ জায়গাগুলো কমে আসছে প্রতিনিয়ত। তাই সময় এসেছে আমাদের ভাববার। এই শহর শুধু মানুষের জন্য নয়, অন্য প্রাণীরাও এখানেই বাস করে। তারা যেন না হারায় তাদের নীড়, তাদের আশ্রয়।

আমরা কি পারি না একটু জায়গা করে দিতে? একটু গাছ লাগিয়ে, একটু খোলা জায়গা রেখে, একটু সচেতন থেকে?

পাখি প্রেমি জুয়েল বলেন, দিন শেষে নিজেকে প্রশ্ন করি আমি কি সারাদিনে কোন প্রাণীকে এক মুটো খাবার দিয়েছি। একটি পশু-পাখির যন্ত্র নিয়েছি। নাকি একটি পাখির নিরাপদ নীড় তৈরি করে দিয়েছি। না, বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাইনি। তবে আমাদের উচিত পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করার। 

শেখ রাজীব নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা শুধু নিজেদের জন্য ভাবি। নিজেদের একটু স্বার্থের জন্য পরিবেশ ধবংস করি। প্রতিনিয়ত গাছ কেঁটে ফেলানো হচ্ছে। কিন্ত পরিবেশ রক্ষা করার জন্য কখনও ভাবি না। কেউ ভাবলে তাকে সমর্থন করি না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খোরশেদ আলম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখন প্রকৃতিক দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন এলাকা যাই। কিন্ত বাড়ীর আঙ্গিনার প্রকৃতিক দৃশ্য নষ্ট করি। আমাদের উচিত প্রকৃতিক দৃশ্য নষ্ট না করে বরং রক্ষা করি এবং পাখিদের নিরাপদ আবাস তৈরির সহযোগিতা করি।  

আলীম

×