
ছবি : সংগৃহীত
২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে শুরু হওয়া গণআন্দোলনে যখন উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, তখনই এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য ভাইরাল হয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। আন্দোলনকারী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে রিকশায় দাঁড়িয়ে স্যালুট জানাতে দেখা যায় এক সাধারণ রিকশাচালককে। তার নাম মোহাম্মদ সুজন।
এই দৃশ্য ভাইরাল হতেই সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন এই শ্রমজীবী মানুষটি। আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গেলে অনেকেই চিনে ফেলেন তাকে। আন্দোলনের সময় তার সেই স্যালুটের মুহূর্তটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে দেয়ালচিত্রেও, যেখানে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উঠে এসেছে তার মুখচ্ছবি।
এক সাক্ষাৎকারে মে দিবস উপলক্ষে নিজের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে সুজন বলেন,
“এই যে ছবিটা, এইটা কিন্তু আমার। ভাই, কিসের মে দিবস? মে দিবস তো আমরা পালনই করতে পারছি না। শ্রমিকেরা এখনও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশে যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে, যারা বুক পেতে গুলি খেয়েছে, তাদের বিচার হতে হবে এই বাংলার জমিনে। শুধু ছাত্ররাই না, রিকশাওয়ালা, হকার, প্রবাসী সবাই এই আন্দোলনের অংশ। ছাত্ররা শুরু করেছে, আর দেশের সাধারণ মানুষ সেটি শেষ করেছে।”
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন তিনি স্যালুট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?
উত্তরে তিনি বলেন, “তখন দেখতেছি, কেউ ছাত্রদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। যারা দাঁড়াচ্ছে, তাদের নিঃশব্দে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি ভাবলাম, এখন যদি আমরা পাশে না থাকি, এই ছাত্র ভাইদের অস্তিত্বই থাকবে না। তাই রিকশায় দাঁড়িয়ে আমি স্যালুট দিলাম। এই স্যালুট ছিল দেশের মানুষকে আহ্বান ‘আসুন, নামুন রাস্তায়, এই ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান।’ এরপর সত্যিই দেখেছি, রিকশাওয়ালারা, সাধারণ মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।”
সুজনের মতে, শ্রমিকরা এখনো তাদের ন্যায্য মজুরি পায় না। তিনি বলেন, “যদি পাইতো, তাহলে কি রাজপথে নামতে হতো? এখনো শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজ করেও ৪০০-৫০০ টাকার বেশি পায় না। ফ্যাসিবাদের লোকে আমাদের শ্রমের মূল্যটাও খেয়ে নিচ্ছে।”
সরকারের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ, “যেই সরকারই আসুক, গরিবের দিকে তাকাতে হবে। যদি না তাকায়, জনগণ সেই সরকারকে মূল্য দিবে না।”
“ভাই, কিসের মে দিবস?” প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সুজন বলেন, “সেইদিনই মে দিবস সফল হবে, যেদিন শ্রমিকরা কাজ করে শান্তিতে দুই বেলা ভাত খেতে পারবে। আজ শ্রমিকরা কাজ করেও দুটো ডাইল-ভাত জোগাড় করতে পারে না। আমরা চাই, দেশের সকল শ্রমিক যেন তার ঘাম ঝরিয়ে পাওয়া টাকায় শান্তিতে বাঁচতে পারে।”
আঁখি