ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি, ব্যাপ্তি বাড়বে

কয়েক জেলায় স্বস্তির বৃষ্টি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৬, ৩ মে ২০২৪

কয়েক জেলায় স্বস্তির বৃষ্টি

চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে স্বস্তির বৃষ্টি নামে

টানা দাবদাহ আর অসহ্য গরমের পর চট্টগ্রামসহ কয়েক জেলায় স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার বৈচিত্র্যের কারণে কোথাও মানুষ ভিজছে আর কোথাও পুড়ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য আরও তিনদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। কিন্তু এপ্রিলের পর মের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের ঘটনা বৃদ্ধিতে গড় তাপমাত্রা নেমে আসবে।

জনমনেও স্বস্তি মিলবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এই মাসে সারাদেশে অন্তত তিন-পাঁচটি কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি। গোপালগঞ্জ ও নওগাঁয় হিটস্ট্রোকে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ তারিখের পর বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি নি¤œœচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তিনি জানান, মে মাসে দেশে বৃষ্টিপাত বাড়বে এবং গরমের তীব্রতা কমে আসবে। এই মাসে তিন থেকে পাঁচদিন হালকা ধরনের কালবৈশাখী হতে পারে।

আর দুই থেকে তিনদিন শিলা ও বজ্রবৃষ্টিসহ মাঝারি ও তীব্র কালবৈশাখীর সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে চলতি মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (সিলেটসহ হাওড় অঞ্চলে) নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং কিছু জায়গায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
এপ্রিলের তুলনায় চলতি মে মাসে দেশজুড়ে তাপমাত্রা কমার পূর্বাভাস দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকদিন ঝড়ের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি এলাকাজুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম এবং বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি বেশি হতে পারে। তবে শনিবার বৃষ্টিপাত কিছুটা কম থাকলেও রবিবার থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে। মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তাপপ্রবাহের তীব্রতা এপ্রিল মাসের মতো থাকবে না।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর আকাশে সূর্যের দাপট দেখা গেছে। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গেই আকাশে ছিল মেঘ মালা। সূর্যের টানা কিরণ না থাকায় গরমের তীব্রতা ছিল সহনীয়। এইদিন ঢাকার মূল সড়ক ও অলিগলিতেও বেশ যান চলাচল দেখা গেছে। তীব্র গরমের কারণে ঘরবন্দি মানুষও নানা কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ফার্মগেট এলাকায় কথা হয়, পথচারী রুবেল তালুকদারের সঙ্গে।

তিনি জানান, এপ্রিল মাসজুড়ে অল্পতেই ঘামে শরীর ভিজে যাওয়া, পানি পিপাসা ও অস্বস্তি ছিল। তবে এদিন তেমন অবস্থা ছিল না বললেই চলে। একই অবস্থা দেখা গেছে মতিঝিল এলাকায়। দুপুরে বাণিজ্যিক এই এলাকায়ও মানুষের আনাগোনা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেড়েছে। রিক্সাচালক সহেব মিয়া (৫৫) জানান, দুই-তিনদিন রিক্সা নিয়ে বাইর হয় না। আজ বাইর হলাম। স্কুল ছুটি থাকায় ভাড়া কম। তবে গরমের কষ্ট আইজ আর তেমন নেই।
চট্টগ্রামে স্বস্তির বৃষ্টি ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, অবশেষে চট্টগ্রামে নামল স্বস্তির বৃষ্টি। বুধবার রাত থেকেই বর্ষণের আলামত ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হয় কয়েক দফা বৃষ্টিপাত। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাত। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও এতেই আসে কিছুটা শীতল পরশ। এদিন সূর্যের প্রখরতা কমে যাওয়ায় নগরজীবন এবং পুরো জেলায় আসে প্রশান্তি। চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে গত দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে দাবদাহ। গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রির ওপরে।

বাতাসের জলীয়বাষ্প থাকায় গরম থাকে অসহনীয় পর্যায়ে। মানুষ ছিল একটুখানি বৃষ্টি ও বাতাসের প্রত্যাশায়। অবশেষে সে প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। চট্টগ্রাম মহানগরে বৃষ্টি কিছুটা কম হলেও শহরের বাইরে বিশেষ করে সীতাকু-, মীরসরাই ও ফটিকছড়িতে বৃষ্টি হয়েছে তুলনামূলকভাবে বেশি। এর প্রভাবে পুরো জেলাজুড়ে এক ধরনের শীতল অনুভব বইছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবদুল বারেক জনকণ্ঠকে জানান, বৃষ্টি যা হয়েছে তা সামান্যই বলা চলে।

বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে মাত্র ৬ মিলিমিটার। কিন্তু এরসঙ্গে বাতাস থাকায় নেমে আসে স্বস্তি। তিনি জানান, মহানগরের বাইরে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টার পূর্বাভাস অনুযায়ী জেলাজুড়ে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে থাকবে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাত। এর মাধ্যমে তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে আসবে। ফলে গরম অসহনীয় ভাবটা কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে আসবে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা অনুভূত হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।

বাতাসের আদ্রতা ছিল ৭৭ শতাংশ। আকাশে এদিন মেঘের বেশ আনাগোনা পরিলক্ষিত হয়। রাতের বেলা এবং শুক্রবার আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। একটানা গরমের পর বৃহস্পতিবার সকালে এক পসলা বৃষ্টি এলে সড়কগুলোতে মানুষদের ছাতা মাথায় দেখা যায়। তবে এ কোনো ভোগান্তি নয়। বরং স্বস্তি আসায় সকলের মনে ছিল উৎফুল্লভাব।
কক্সবাজার ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, প্রচ- তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত জনজীবনে স্বস্তি দিতে এক পসলা বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়েছে কক্সবাজারবাসী।

তবে এই বৃষ্টির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে চলা সেই বৃষ্টি কখনো মুষলধারে আবার গুঁড়ি গুঁড়ি আকারে ঝরেছে। সঙ্গে ছিল শীতল বাতাসও। স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহের পর এই বৃষ্টিতে স্বস্তি ফেরে সবার মধ্যে। অনেককেই দেখা গেছে বৃষ্টিতে ভিজতে। তীব্র গরমের পর এক পসলা বৃষ্টিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অনেকে। বেশ কিছুদিন ধরে গরমে একেবারে নাজেহাল অবস্থা ছিল।
রাঙ্গামাটি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গামাটি দীর্ঘ তীব্র তাপপ্রবাহের পর বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। বহুপ্রতীক্ষিত বৃষ্টির কারণে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এতদিন খর তাপের কারণে জেলার সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক কাজে বের হতে পারেনি। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ঠা-া বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় জনমনে প্রশান্তি দেখা দিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে। 
চুয়াডাঙ্গা ॥ চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টিপাত হলেও চুয়াডাঙ্গায় বয়ে গেছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসজুড়ে ছিল তাপপ্রবাহের দাপট। সেই দাপট এখনো অব্যাহত। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও যে তাপপ্রবাহের হাত থেকে নিস্তার পাবে না এ জেলার মানুষ। তাপপ্রবাহ ৫ মে পর্যন্ত চলতে পারে। রবিবার থেকে অবশ্য কিছু জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে সেই বৃষ্টি যে স্বস্তি দেবে না, তেমনিই পূর্বাভাস দিয়েছে এ জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। বুধবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৩ শতাংশ। বেলা ১২টায় ১২ শতাংশ বাতাসের আর্দ্রতার সঙ্গে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাতে দেখা যায় আজও জেলাজুড়ে তাপপ্রবাহ থাকবে। এদিন বেলা ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেশ কয়েকদিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১-৪৩ ডিগ্রির ওপরেই। যা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। এমনকি, গত ৪০ বছরে এপ্রিল মাসে এ জেলায় এত গরমের তীব্রতা দেখা যায়নি।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, চলতি এপ্রিলের ৩০ দিনের মধ্যে অন্তত ১৩ দিনই চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫ দিন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। এদিকে চলমান তাপপ্রবাহে তরমুজ ও ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। শহর, পাড়া-মহল্লায় আখের রস, লেবুপানিসহ নানা শরবতের দোকান বেড়েই চলেছে। রোদের কারণে ফল-ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আম, লিচু, ধানসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ছে।

এতে লোকসানের শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। এরইমধ্যে ৪০ শতাংশ জমির ধান কেটে কৃষকেরা ঘরে তুলেছেন। বাকি ধানগুলো দানা পর্যায়ে আছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ৮০ শতাংশ ধান মাঠ থেকে সংগ্রহ শেষ হবে। 

গোপালগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, মুকসুদপুর থেকে জানান, জমিতে কাজ করতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন ইয়ার খান (৫৫)। বুধবার সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পশারগাতী ইউনিয়নের পশারগাতী মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মুকসুদপুর থানার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিনের ন্যায় জমিতে পাট নিড়ানির কাজ করছিলেন ইয়ার খান।

পাটের জমিতে পাট নিড়ানি শেষে জমিতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মুকসুদপুর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক  ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এরপর দুপুরে তিনি মারা যান। 
নওগাঁ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে ধান কাটতে গিয়ে দুলাল উদ্দিন সরদার (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মাঠে প্রচ- তাপপ্রবাহের মাঝে বোরো ধান কাটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া দুলাল উদ্দিন সরদার শিমুলিয়া গ্রামের কশরত আলীর ছেলে। আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রওশন হ্যাপি কৃষক দুলালের গরমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

×