ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলায় জনমনে স্বস্তি

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১০, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪

উত্তরাঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলায় জনমনে স্বস্তি

দেশের উত্তরাঞ্চলে এখনো শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে

দেশের উত্তরাঞ্চলে এখনো শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে পাঁচ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সূর্যের দেখা মেলায় স্বস্তি এসেছে দিনাজপুরে। কুয়াশা কেটে যাওয়ায় শীত অনুভূত হয়েছে বেশি। কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। শীতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যমুনার চরাঞ্চলবাসী। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের।
দিনাজপুরে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সোমবার সকাল ৯টায় এই জেলায় পাঁচ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দুইদিনে গড়াল উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে। তীব্র শীতের সঙ্গে রয়েছে হিমেল বাতাস, গতিবেগও বেশ। ফলে বিপর্যস্ত এই এলাকার মানুষ। দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টায় এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পাঁচ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বাতাসের আর্দ্রতা ৮৮ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার। এর আগে রবিবার এই জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পাঁচ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার। 
হিসাব মতে, তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি ও চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটিকে তীব্রতর শৈত্যপ্রবাহ বলে। সেই হিসাবে বর্তমানে এই জেলায় দুইদিন ধরেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। তবে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চললেও কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে সকালের সূর্য। দুইদিন ধরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেই সূর্য সকালেই উঠছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের উত্তাপও বেড়েছে। রবিবারও সকাল সাড়ে ৯টার পর সূর্য ওঠে ও উত্তাপ বাড়তে শুরু করে। সারাদিনই ছিল রোদ ও উত্তাপ।  
সোমবার সকালে দিনাজপুর শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুরা এলাকায় কথা হয় কৃষক রওশন তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাপমাত্রা কমলেও দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে এবং কুয়াশা ছিল না। উত্তাপও ছিল বেশ, এতে করে আগে ফসলের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা আর বাড়বে না। কারণ মূলত কুয়াশা ফসলের বেশি ক্ষতি করে। আমার বোরো বীজতলার অনেক চারাই লালচে রং হয়ে গিয়েছিল। এখন সেগুলো ভালো হবে।

একই এলাকার কৃষক উত্তম রায় বলেন, আমার আলুখেতের অনেক পাতাই পচে যাওয়ার মতো বা মোড়ক ধরেছিল। ফসল বাঁচাতে বালাইনাশক স্প্রে করেছি। কিন্তু রোদ না থাকায় বালাইনাশক কাজ করছিল না। দিন দিন গাছগুলো আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। শুধু চাচ্ছিলাম, কবে নাগাদ রোদ দেখা দেবে। এখন দুইদিন ধরে যে পরিমাণে রোদ উঠছে, তাতে করে বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে না। আর গাছগুলোও আগের মতো হয়ে উঠবে আশা করছি।
শহরের হঠাৎপাড়া এলাকার অটোরিক্সা চালক জুয়েল ইসলাম বলেন, আমরা সকাল সকাল কাজের উদ্দেশ্যে এই অটো নিয়ে বের হই। এই শীতে আয়-উপার্জন একেবারেই কমে গেছে। যাত্রী তেমন একটা নেই। তাই একটু কাজ করেই বাড়িতে চলে যেতে হয়। এই ঠান্ডায় আমরা কাজ করতে পারছি না। দ্রুত শীত চলে গেলেই আমরা বাঁচি।

দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান বলেন, এই তাপমাত্রা ও শৈত্যপ্রবাহ আর তিনদিনের মতো স্থায়ী হতে পারে। এরপর থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। দিনের তাপমাত্রা ও রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। তবে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে, তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রাম জেলায় চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ঠান্ডার কারণে শ্রমজীবী মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু-পাখিগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সকালের দিকে রোদ উঠলেও কনকনে ঠান্ডায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক বীজতলা নষ্ট হয়েছে।

জেলার ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় রয়েছে ৪শ’ পাঁচটি চর-দ্বীপচর। জেলায়  প্রায় সাত লাখ মানুষের বসবাস। চারদিকে খোলা হওয়ায় রাতে তীব্র ঠান্ডায় চরম দুর্ভোগে পড়ে চর-দ্বীপচরের মানুষ। বিকেলের পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সমস্ত অঞ্চল। রাত যতই বাড়ে ঠান্ডার তীব্রতা ততই বাড়তে থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল কুয়াশায় ঢাকা থাকে।
সোমবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আট দশমিক চা ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে শীতার্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৬৫ হাজার কম্বল বিভিন্ন উপজেলায় বিতরণ করেছে। বয়স্ক ও শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ অফিসে পাঁচ হাজার শুকনা খাবার মজুত আছে। 
ইসলামপুর, জামালপুর ॥ জামালপুরের ইসলামপুরে তীব্র শীতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় শীতে কাবু হয়ে দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তীব্র ঠান্ডায় স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘœ ঘটছে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্রবিধৌত উপজেলায় শীতের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি। যমুনা চরাঞ্চলবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চরাঞ্চলে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠান্ডায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
তীব্র শীতে প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে নির্ঘুম রাত কাটে চরাঞ্চল-গ্রামের দরিদ্র মানুষের। কাঠ-খড়ের জ্বালানো আগুনের উত্তাপই তাদের ভরসা। অন্যান্য বছর শীতের কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণের খবর পাওয়া গেলেও এবার তাদের দেখা মেলেনি। হিমেল হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শীতে কাবু হয়ে পড়েছে গৃহপালিত পশুপাখিও।

এদিকে ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। অনেকেই পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন বীজতলা। প্রচণ্ড শীতে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগে। উপজেলার বেলগাছা ইউপির মন্নিয়া গ্রামের আব্দুস ছাত্তার বলেন, তীব্র শীতে হাঁটাচলা করা যাচ্ছে না। সারাদিন খুড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। চিনাডুলী ইউপির গিলাবাড়ী গ্রামের আইয়ুব আলী জানান, ঠান্ডায় খুব কষ্ট করে আছেন। 
মৌলভীবাজার ॥ মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে টানা কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহে মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছেন। জেলাজুড়ে বইছে হিমেল হাওয়া। প্রতিদিন বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। আজ সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার ছিল তাপমাত্র আট দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত তিনদিন থেকে তাপমাত্রা আট দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজ করছে। রাতে কুয়াশা থাকলেও দিনের বেলায় কুয়াশা কমে গেছে।
কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহে কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন-রাত সমানতালে বইছে কনকনে হিমেল হাওয়া। ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। শীতে সবচেয়ে বেশি ছিন্নমূল ও দিনমজুররা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকেই কাজের সন্ধানে গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না। এ ছাড়াও হাওড়পাড়ের মানুষ, বোরোচাষি ও চা বাগানের শ্রমিকরাও দুর্ভোগে পড়েছেন।

অনেকেই দিনে ও রাতে খড়খুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।

×