
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে দর্শনার্থীদের ভিড়
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার সৈয়দপুর ও বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে আগের চেয়ে তিনগুণ যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সেতুর টোল আদায়ও তিনগুণ বেড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন সওজ কর্তৃপক্ষ। সেতুটি নির্মাণ শেষে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পর থেকে গত এক বছরে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৬১৪টি নানা ধরনের যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে এক বছরে এ সকল যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ২০ লাখ ২৭ হাজার ৬৯০ টাকা। সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি যতই দিন যাচ্ছে ততই যানবাহন পারাপরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে টোল আদায়ের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। সেতুটি উদ্বোধনের এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা সেতুটি এক নজর দেখতে ভিড় করছেন।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর ও বন্দরের মদনগঞ্জে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এক দশমিক ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২২ দশমিক ১৫ মিটার প্রস্থ ছয় লেনবিশিষ্ট তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এ সেতুটি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের নামে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরদিন ১১ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে সেতুতে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে, ট্রেইলার ৬২৫ টাকা, হেভি ট্রাক ৫০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২৫০ টাকা, বড় বাস ২২৫ টাকা, মিনি ট্রাক ১৯০ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত গাড়ি ১৫০ টাকা, মিনিবাস ১২৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন ১০০ টাকা, ৩/৪ চাকার মোটরাইজড যান ২৫ টাকা, মোটরসাইকেলে ১৫ টাকা, রিকশাভ্যান/রিকশা/ সাইকেল/ঠেলাগাড়িতে ৫ টাকা। সওজ সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৬১৪টি নানা ধরনের যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে এক বছরে যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ২০ লাখ ২৭ হাজার ৬৯০ টাকা।
ট্রেইলার পারাপার হয়েছে ২৩ হাজার ১৫টি। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। এদিকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এখনো সেতুটি এক নজর দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় লেগেই আছে। প্রতিদিনই ব্রিজটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবারসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ছুটির দিনে সেতুটি বিনোদনের স্পটে পরিণত হয়। সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকা থেকে সাইফুল ইসলাম তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, সেতুটি চালু হওয়ার পর এখন দেখতে এসেছি। দৃষ্টিনন্দন সেতুতে পরিণত হয়েছে। দেখতে খবুই সুন্দর লাগছে। সাইফুলের মতো প্রতিদিন বিকেল বেলা শত শত উৎসুক জনতা সেতুর ওপরে ভিড় করছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ভিটিকান্দি সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন বলেন, মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজসহ প্রশস্ত বৃদ্ধি করার কারণে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ওপর দিয়ে যানাবহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন কাজ করার আগে এ সড়কে যানজট সৃষ্টি লেগেই থাকত।
যানজটের কারণে এ সড়কে যানবাহন এখানে আসতে চাইত না। এখন মদনপুর-মদনগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজ হওয়ার পর থেকে যানবাহন চলাচল বেড়েই চলেছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুতে আগের চেয়ে তিনগুণ টোল আদায় বেড়ে গেছে। ধীরে ধীরে টোল আদায় আরও বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বাস ও মিনিবাস চলাচল রুটের ওপর নির্ভর করে। ধীরে ধীরে এ সেতুতে বাস ও মিনিবাসসহ সকল ধরনের যানবাহন পারাপারের সংখ্যা আরও বাড়বে।