
সদর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ
চুয়াডাঙ্গায় আউশ মৌসুমে নতুন জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে প্রথমবারেই ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষক। কম সময়ে অধিক ফলন, চাষে খরচ কম হওয়ায় কৃষকের এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
সাধারণত আউশ মৌসুমের অন্যান্য জাতের ধানে ১৬ থেকে ১৭ মণ ফলন হলেও নতুন এই ধানে বিঘাপ্রতি গড়ে ২২ মণ ফলন পাওয়ায় কৃষকের মুখে তৃৃপ্তির হাসি। শ্রমিকেরা দল বেঁধে গান গেয়ে কাঁচি দিয়ে ধান কাটছেন। আবার কোথাও কোথাও কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারে চলছে ধান কাটার উৎসব।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গত আউশ মৌসুমে জেলার সদর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে ৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। আশানুরূপ ফলন পেয়ে ওই বীজ থেকে চারা তৈরি করে চলতি মৌসুমে এক হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে এ ধানের আবাদ করে কৃষক। তাতে ৭ হাজার ১৪৩ মেট্রিক টন ধান ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে জেলায় আউশ ধানের আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৮ হাজার ৭৬৭ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর। গত ৮ বছরের ব্যবধানে আউশের আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে নতুন জাতের ব্রি-৯৮ ধানের চাল লম্বা, চিকন, সাদা ও দামও বেশি হওয়ায় কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গত বছরই প্রথম ১০ হেক্টর জমিতে এই ধানের আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে তা বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮৯১ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪৭ হেক্টর। কার্পাসডাঙ্গা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, উন্নত জাতের অভাব, খরা, বন্যা ও অতিবৃষ্টি এবং তুলনামূলক ফলন কম হওয়ায় আউশ ধান চাষ দিন দিন কমছিল। দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় আউশ মৌসুমের জন্য উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৯৮ খুবই সম্ভাবনাময়। সাধারণত অন্যান্য জাতের ধান বীজতলা থেকে চারা তুলে লাগানোর পর ১০৫ থেকে ১২০ সময় লাগে। সেখানে ব্রি ধান-৯৮ ৯০ থেকে ১০০ দিনে কৃষক ঘরে তুলতে পারছেন। দামুড়হুদা উপজেলা কৃৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, এর আগে এ জেলায় ব্রি ধান-৯৮ চাষ হয়নি। গত মৌসুমের শুরুতে আউশ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ব্রি ধান-৯৮ নিয়ে কাজ শুরু করি। ১০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে ৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। এমন ফলন দেখে কৃৃষকরা খুশি হয়।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ব্রি ধান- ৯৮ মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয় করতে পারলে দেশে আউশ আবার বড় ফসলে পরিণত হবে। একই সঙ্গে, এটি লাভজনক ফসল হিসেবে কৃষকের হাসিকে আরও চওড়া করবে। এই ধানে সেচ ও সার কম লাগে। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়।