ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বছরে ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক-পলিথিন নদীতে ফেলছে জেলেরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২০:১৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বছরে ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক-পলিথিন নদীতে ফেলছে জেলেরা

পলিথিনে ছেঁয়ে যাচ্ছে নদী 

শুধুমাত্র কলাপাড়ার আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া সাড়ে তিন শ’ মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা প্রত্যেক ট্রিপে অন্তত ৭০০ কেজি প্লাস্টিক-পলিথিনসহ মাছ প্যাকেট করার কর্কশিটের বর্জ্য খাপড়াভাঙ্গা নদীসহ সাগরে ফেলছে। এভাবে মাসে তিন টি ট্রিপে দুই মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য ফেলছে জেলেরা। বছরের পাঁচ মাসে কমপক্ষে সাড়ে দশ মেট্রিক টন পলিথিন-প্লাস্টিক সাগর-নদীতে ফেলা হচ্ছে। 

ফলে এসব প্লাস্টিক-পলিথিন মাছের পেটে যাচ্ছে। ওই মাছ আবার মানুষ খাচ্ছে। ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। খবর জেলে, আড়তমালিকসহ বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রত্যেক ট্রলারের জেলেরা একেকবারে চাল-ডাল, বাজার-সওদাসহ সব ধরনের বাজার নিত্যপণ্য সামগ্রী নিয়ে ট্রলারে বোঝাই করে সাগরে মাছ শিকারে যায়। ট্রলার মাঝিসহ জেলেদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে কমপক্ষে তিন থেকে সাত দিন এক ট্রিপে গিয়ে সাগরবক্ষে জেলেরা অবস্থান করে। 

বাজার সওদা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় পলিথিনের ব্যাগসহ প্লাস্টিক সামগ্রী। ওইসব বাজার-সওদা বহন করা পলিথিন-প্লাস্টিক ব্যাগ খালি হলে নিজেদের অজান্তেই সাগর-নদীতে ফেলছে। 

আবার জেনে শুনেই ফেলা হচ্ছে। প্রত্যেকবারে একেকটি ট্রলারে দুই-আড়াই কেজি পলিথিন-প্লাস্টিক বাজার-সওদার সঙ্গে নেয়া হয়। এভাবে মাসে কমপক্ষে তিন টি ট্রিপ দেয় জেলেরা। যায় সাগরে। বছরে কমপক্ষে পাঁচ মাস সাগরে মাছ শিকার করেন জেলেরা।

কলাপাড়া উপজেলা ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি জানান, সরকারি অবরোধ রয়েছে দুই দফায় ৮৭ দিন, প্রায় তিন মাস। ঝড়ো হাওয়াসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ থাকে আরও তিন-চার মাস। বছরের মাত্র পাঁচ মাস সাগরে মাছ ধরার সুযোগ মেলে। মাসে সর্বোচ্চ তিন-চার ট্রিপ সাগরে যেতে পারেন জেলেরা। 

প্রত্যেকবারে বিভিন্ন ধরনের বাজার-সওদা নেয়া হয়। যা বিভিন্ন ধরনের পলিথিন-প্লাস্টিকে বহন করা হয়। এর পরিমাণ কমপক্ষে দুই কেজি। এক প্যাকেট বিস্কুট খাওয়ার পর প্লাস্টিকের খোসা নদী-সাগরে ফেলা হয়। ওইয়া মাছের পেটে যায়। মাছ আবার মানুষে খায়।

তিনি আরও জানান, ছোট্ট বোটে ব্যবহার হয় আরও বেশি পলিথিন। যারা মাছ কর্কশিটে সংগ্রহ করেন। এরা বেশি ক্ষতি করছে। আক্ষেপ করে জানান, এই মাঝি;  দূর্যোগকালে জেলেদের আশ্রয় নেয়ার খাপড়াভাঙ্গা নদী পলিথিন-প্লাস্টিক ও ককশিটে পরিপূর্ণ। নদী নেই। মরে গেছে। তবে আশার খবরও বললেন এই মানুষটি। জানালেন, ওয়ার্ল্ডফিশের উদ্যোগে জেলেদের বোটে একটি করে বস্তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে সকল প্লাস্টিক ভরে রাখবে। কিনারে আসলে নির্ধারিত লোক দিয়ে সংগ্রহ করা হবে।

মহিপুর আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ রাজার দেয়া তথ্যানুসারে মহিপুর-আলীপুর ঘাটে কমপক্ষে তিন শ’ থেকে সাড়ে তিন শ’ ট্রলার মাছ আহরণসহ বেচাকেনা করে থাকে। ট্রলারে ব্যবহৃত পলিথিন-প্লাস্টিক সাগর-নদীতে ফেলা বন্ধে জেলেদের তারা তাগাদা দিচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ ইকোফিশ-২ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানান,  একটি বোট একেকবারে কমপক্ষে দুই-থেকে তিন কেজি প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য সাগর-নদীতে ফেলছে। এটি পরিবেশের জন্য ভয়ানক। সমুদ্র স্বাস্থ্য হুমকির মুখে। 

জেলেদেরকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের ব্যবহৃত পলিথিন-প্লাস্টিক বর্জ্য যাতে ট্রলারে সংরক্ষণ করা এবং কিনারে ভিড়লে  সংগ্রহ করে বিনষ্ট করা যায় এমন উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 

শুধুমাত্র একটি মোকামের এ পরিমান প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য সাগর-নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফ্রি-স্টাইলে সাগর-নদী দূষণ হচ্ছে। বছরের পর বছর এসব পলিথিন-প্লাস্টিক সাগর-নদীতে ফেলা হচ্ছে।

 

এসআর

×